আখ্যানকাব্যের ধারায় মধুসূদন দত্তের আখ্যানকাব্যটির কৃতিত্ব আলোচনা করো
বাংলা কাব্যজগতে আখ্যানকাব্য ও মহাকাব্য রচনাধারার বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব ছিলেন মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-১৮৭৩)। পাশ্চাত্য সাহিত্যের Blank – Verse ছন্দের অনুরূপ বাংলায় অমিত্রাক্ষর ছন্দই মধুকবির বিশিষ্টতাকে সুচিহ্নিত করে। তাঁর আখ্যানকাব্যটি হল-‘তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য’ (১৮৬০)।
তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য’:
এই কাব্যটি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত মধুসূদন দত্তের প্রথম কাব্য। সংস্কৃত পুরাণ ও মহাভারতের আদিপর্বের কাহিনি অবলম্বনে চার সর্গে কবি এই কাব্যটি রচনা করেন। দেবদ্রোহী দৈত্যভ্রাতৃদ্বয় সুন্দ-উপসুন্দ অত্যন্ত ধার্মিক হওয়া সত্ত্বেও তিলোত্তমাকে দেখে আত্মবিস্তৃত হয়ে পরস্পরকে আঘাত করে নিহত হয় এবং দেবরাজ্য পুনরায় রাহুমুক্ত হয়। এই গল্পকেই মধুসূদন একালের উপযোগী করে আলোচ্য আখ্যানকাব্যটিতে তুলে ধরেছেন।
কাব্যটির বৈশিষ্ট্য:
- এই কাব্যটির মধ্য দিয়ে প্রথম যথার্থ আখ্যানকাব্যের সূচনা হয়।
- সুন্দ-উপসুন্দের চরিত্রসৃষ্টিতে কবির অভিনবত্ব এ কাব্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
- এই কাব্যে লিরিকের ব্যবহার করে কবি নারীর মোহিনীশক্তির জয়গাথা শুনিয়েছেন।
- অমিত্রাক্ষর ছন্দের ব্যবহার এই কাব্যের মধ্যেই প্রথম ধ্বনিত হয়েছে।
মধুকবির কৃতিত্ব:
- মধুসূদন দত্ত এই কাব্যটির মধ্যে সৌন্দর্যচেতনার প্রকাশ ঘটিয়েছেন।
- দেবমহিমায় মুখরিত দেশে প্রথম মানবমহিমার জয়োচ্চারণ শুনিয়ে কবি গতানুগতিকতা ভাঙতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েছেন।
- প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য আঙ্গিকের সমন্বয় সাধন করে কবি আধুনিকতার সঞ্চার ঘটিয়ে বাংলা কাব্যকে সমৃদ্ধ করেছিলেন।
আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর