অ্যানাব্যাপটিস্ট আন্দোলন সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো

অ্যানাব্যাপটিস্ট আন্দোলন সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো

অ্যানাব্যাপটিস্ট আন্দোলন সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো
অ্যানাব্যাপটিস্ট আন্দোলন সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো

অ্যানাব্যাপটিস্ট আন্দোলন

যেসকল ধর্মসংস্কারকগণ লুথারবাদকে একটি বৈপ্লবিক চরিত্র প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাপটিজম-সহ নানাবিধ আচার-অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করেন, তাঁরাই অ্যানাব্যাপটিস্ট নামে পরিচিত। অ্যানাব্যাপটিস্ট আন্দোলনের নেতাগণ হলেন- আন্দ্রেয়াস ভন কার্লস্টাড, – টমাস মুনজের, কনরাড গ্রেবেল, জ্যাকব হুটার প্রমুখ।

(1) কারণসমূহ: এই অংশটির উত্তরের জন্য 2 নং অধ্যায়ের বিশ্লেষণমূলক প্রশ্নোত্তর বিভাগের 144 নং প্রশ্নের অ্যানাব্যাপটিস্ট আন্দোলনের কারণসমূহ-এই অংশটি সংক্ষেপে দ্রষ্টব্য।

(2) মতাদর্শ: অ্যানাব্যাপটিস্ট আন্দোলনের মূলনীতি হিসেবে বলা যায় যে, অ্যানাব্যাপটিস্টরা অবোধ শিশুর ব্যাপটিজমের বিরোধিতা করেন। এঁদের মতে, একমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ব্যাপটিজমের মর্ম বুঝতে সক্ষম। তাই শৈশবে দীক্ষিত হলেও, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর পুনরায় দীক্ষিত করা দরকার। এই কারণে অ্যানাব্যাপটিস্টদের রি-ব্যাপটিস্ট (Re-baptist)-ও বলা হত।

পাশাপাশি তাঁরা চেষ্টা করতেন জিশুর নির্দেশগুলিকে আক্ষরিকভাবে পালন করতে। অ্যানাব্যাপটিস্টরা শপথগ্রহণ, আইন-আদালত পরিহার করে চলতেন। এই সম্প্রদায়ের মনোভাব ছিল গণতান্ত্রিক এবং এঁদের সংগঠনের ভিত্তি ছিল শৃঙ্খলা ও বিশ্বাস। অ্যানাব্যাপটিস্টগণ আত্মত্যাগ এবং পবিত্রতা-এই দুটি আদর্শ মান্য করার কথা বলতেন। তাঁদের ধর্মচিন্তার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল- চার্চ সম্পর্কে নতুন চিন্তাভাবনা, খ্রিস্ট ধর্মের মূলকথাকে কেন্দ্র করে নব্যধারণা এবং প্রেম ও অপ্রতিরোধই হল নতুন আদর্শ। অ্যানাব্যাপটিস্ট গোষ্ঠী সমাজের বৈপ্লবিক রূপান্তরে – অগ্রণী ভূমিকা পালনে উদ্যত হয়েছিলেন। সর্বোপরি তাঁরাই প্রথম ধর্মীয় স্বাধীনতার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। তাঁদের কাছে রাষ্ট্র ও চার্চ হল আলাদা – দুটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান (Free Church in a Free State) I 

(3) অ্যানাব্যাপটিস্ট আন্দোলনের সূচনা ও অগ্রগতি: ১৫২১-২২ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ জার্মানির উইটেনবার্গ শহরে আন্দ্রেয়াস ভন কার্লস্টাড-এর নেতৃত্বে অ্যানাব্যাপটিস্ট আন্দোলনের সূচনা হয়। তাঁর নেতৃত্বে উগ্রবাদী সংস্কারপন্থীরা রাজশক্তির সাহায্য ছাড়াই যাজকদের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় খ্রিস্ট ধর্মের আনুষ্ঠানিক পরিবর্তন চেয়েছিলেন। কালক্রমে জার্মানির বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষত সমাজের নিম্নশ্রেণির মানুষের মধ্যে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়তে থাকে। কার্লস্টাডের মৃত্যুর পর, ১৫২৪ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ টমাস মুনজের অ্যানাব্যাপটিস্ট আন্দোলন পরিচালনা করতে এগিয়ে আসেন।

(4) অ্যানাব্যাপটিস্ট আন্দোলনের অবসান: অ্যানাব্যাপটিস্টদের উপর এরপর নেমে আসে রোমান ক্যাথলিক চার্চ, ইউরোপীয় শাসকবর্গ ও ভূস্বামীদের আঘাত। ১৫২৫ খ্রিস্টাব্দে কঠোর হাতে বিদ্রোহ দমন করে মুনজেরকে হত্যা করা হলেও অ্যানাব্যাপটিস্টদের পুরোপুরি কণ্ঠরোধ করা যায়নি। কারণ, এর এক দশক বাদেই জার্মানির মুনস্টার (Munstar)-এ আবারও বৈপ্লবিক প্রতিবাদী আন্দোলনের পুনরুত্থান ঘটে। কিন্তু মুনস্টারের আন্দোলনের উপরও নির্মম দমনপীড়ন চালানো হয়। অতঃপর মোরাভিয়াতে জ্যাকব হুটার (Jakob Hutter) এবং জুরিখে কনরাড গ্রেবেল (Conrad Grebel) কল্পিত সাম্যবাদী সমাজের লক্ষ্যে অ্যানাব্যাপটিস্টদের সংগঠিত করেন। এঁরা রাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধের বিরোধী ছিলেন। তবে অখ্রিস্টান শাসকদের প্রতি নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ গড়ে তোলার পক্ষে মত দেন।অবশ্য এঁদের আন্দোলনও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারেনি।

মূল্যায়ন

পরিশেষে বলা যায় যে, অ্যানাব্যাপটিস্ট আন্দোলন যদিও কোনও ব্যাপক ধর্মীয় বা সামাজিক পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি। তবু এই আন্দোলনের প্রগতিশীল ভূমিকার কথা অস্বীকার করা যায় না। যৌথ সম্পত্তির ধারণা প্রকাশ করে বা সাম্যবাদী সমাজব্যবস্থা গঠনের প্রচেষ্টার মাধ্যমে তাঁরা যে উচ্চতায় পৌঁছেছিলেন, ইউরোপের সেখানে যেতে বেশ কিছুটা সময় লেগেছিল। ইংল্যান্ডের পিউরিটান বিপ্লব (Puritan Revolution) সময়পর্বে অ্যানাব্যাপটিস্টদের সাম্যবাদী আদর্শের পুনঃপ্রকাশ ঘটেছিল।

আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment