অষ্টম হেনরির আমলে ইংল্যান্ডে ধর্মসংস্কার আন্দোলন কীভাবে সংঘটিত হয়েছিল

অষ্টম হেনরির আমলে ইংল্যান্ডে ধর্মসংস্কার আন্দোলন কীভাবে সংঘটিত হয়েছিল

অষ্টম হেনরির আমলে ইংল্যান্ডে ধর্মসংস্কার আন্দোলন কীভাবে সংঘটিত হয়েছিল
অষ্টম হেনরির আমলে ইংল্যান্ডে ধর্মসংস্কার আন্দোলন কীভাবে সংঘটিত হয়েছিল

অষ্টম হেনরির আমলে ইংল্যান্ডে ধর্মসংস্কার আন্দোলন

ব্রিটিশ ঐতিহাসিক এ এল রাউস (AL Rowse) মনে করেন, ইংল্যান্ডের ধর্মসংস্কার আন্দোলন হল একটি বিপ্লব। এই রিফরমেশনের প্রথম পর্বে রাজার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে জনগণ আন্দোলন গড়ে তুললেও দ্বিতীয় পর্বে কিন্তু রাজা অষ্টম হেনরি নিজেই ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টের সহায়তায় এই বিপ্লবকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেন।

(1) আন্দোলনের পূর্বপ্রস্তুতি: রাজা অষ্টম হেনরি ক্যাথরিনের সঙ্গে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদের অনুমতি আদায়ের জন্য প্রধান উপদেষ্টা কার্ডিনাল উলসি (Cardinal Wolsey)-কে নিযুক্ত করেছিলেন। কিন্তু উলসি ব্যর্থ হন এবং পোপ সপ্তম ক্লিমেন্টও অনুমতি প্রদানে অহেতুক দেরি করতে থাকলে ক্ষুব্ধ অষ্টম হেনরি উলসিকে পদচ্যুত করেন। এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রী টমাস ক্রমওয়েল ও রিফরমেশন পার্লামেন্টের সহযোগিতায় ধর্মসংস্কারের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

(2) রিফরমেশন পার্লামেন্টের ধর্মসংস্কারমুখী আইনসমূহ : ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দে টমাস ক্রমওয়েলের পরামর্শে অষ্টম হেনরি রিফরমেশন পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন (৩ নভেম্বর) আহ্বান করেন। এর পরবর্তী আরও ৬টি অধিবেশনে পার্লামেন্ট ১৩৭টি আইন পাস করে সেগুলির দ্বারা ইংল্যান্ডের ধর্মসংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এরকম কয়েকটি আইন হল- প্রোবেট অ্যান্ড মরচুয়ারি অ্যাক্ট (Probate and Mortuary Act), অ্যাক্ট অফ প্লুরালিটিজ (Act of Pluralites), প্রেমুনিয়ার আইন (Praemunire Act), অ্যাক্ট অফ অ্যানেটস (Act of Annates), অ্যাক্ট ইন রেসট্রেন্ট অফ অ্যাপিলস (Act in Restraint of Appeals, ১৫৩৩ খ্রি.)ইতিমধ্যে অষ্টম হেনরি অ্যান বোলিনকে গোপনে বিবাহ করেন এবং নতুন আর্চবিশপ টমাস ব্র্যানমার এই বিবাহকে আইনসিদ্ধ বলে ঘোষণা করেন। প্রাক্তন রানি ক্যাথরিন বা অন্য কেউ যাতে ইংল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ ধর্মীয় কোনও ব্যাপারে পোপের কাছে আবেদন না করতে পারেন তার জন্য পাস করা হয় বিখ্যাত অ্যাক্ট ইন রেসট্রেন্ট অফ অ্যাপিলস Act in Restraint of Appeals, ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দ) আইন। এই আইনে বলা হয় যে, ক্যান্টারবেরির আর্চবিশপের আদালতই এবার থেকে ধর্ম ও নৈতিকতা সম্পর্কিত যাবতীয় মামলার নিষ্পত্তি করবে। এই আইনবলে ক্যান্টারবেরির আর্চবিশপ ব্র্যানমার হেনরি ও ক্যাথরিনের বিবাহকে অবৈধ বলে ঘোষণা করলে পোপ ক্ষুব্ধ হন এবং অষ্টম হেনরিকে ধর্মজগৎ থেকে বহিষ্কৃত বলে ঘোষণা করেন। অ্যাক্ট অফ সুপ্রিমেসি (Act of Supremacy, ১৫৩৪ খ্রিস্টাব্দ) ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে অ্যাক্ট অফ সুপ্রিমেসি আইনবলে ইংল্যান্ডের রাজাকে সেদেশের চার্চের প্রধান মর্যাদা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া অ্যাক্ট অফ সাকসেশন (Act of Succession)-এর মাধ্যমে অ্যান বোলিনের সন্তানকে দেওয়া হয় সিংহাসনের অধিকার। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইংল্যান্ডের রিফরমেশন পার্লামেন্টের সপ্তম অধিবেশনে মোট ৬২টি আইন পাস হয়েছিল, যেগুলির মাধ্যমে পোপের কর্তৃত্বের অবসান ঘোষিত হয় এবং ইংল্যান্ডের ছোটো ছোটো মঠগুলিকে উচ্ছেদ করার কথা বলা হয়। প্রণীত হয় Ten Articles বা দশ ধর্মবিধি। এর দ্বারা ধর্মাচরণ, যাজকদের কর্তব্য নির্ধারিত হয়।

(3) মঠব্যবস্থার উচ্ছেদসাধন: অষ্টম হেনরির নেতৃত্বে ইংল্যান্ডের ধর্মসংস্কার আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল মঠব্যবস্থার উচ্ছেদসাধন (Dissolution of Monasteries)। তাঁর প্রধানমন্ত্রী টমাস ক্রমওয়েলের উদ্যোগে ইংল্যান্ডের মঠের বিলোপসাধনের জন্য দুটি আইন পাস করা – হয়েছিল। যথা- প্রথম উচ্ছেদ আইন (১৫৩৬ খ্রিস্টাব্দ) এবং দ্বিতীয় উচ্ছেদ আইন (১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দ)। প্রথম উচ্ছেদ আইনানুসারে সমস্ত ছোটো ছোটো  মঠ, যেগুলির আয় বার্ষিক ২০০ পাউন্ডেরও কম সেগুলিকে দুর্নীতির  অভিযোগে ভেঙে ফেলার হুকুম জারি হয়। এই রাজকীয় পদক্ষেপের বিরোধিতায় লিঙ্কনশায়ার, ইয়র্কশায়ার এবং পরে সমগ্র ইংল্যান্ড জুড়ে যে বিদ্রোহ হয়েছিল, তাকে পিলগ্রিমেজ অফ গ্রেস বলা হয়। অবশ্য এই বিদ্রোহকে কঠোর হাতে দমন করা হয়েছিল। এরপর দ্বিতীয় উচ্ছেদ আইনবলে অবশিষ্ট বড়ো মঠগুলিকে উচ্ছেদ করে সেগুলির সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। 

মূল্যায়ন

এইভাবে রাজা অষ্টম হেনরির শাসনামলে ইংল্যান্ডের ধর্মসংস্কার সূচিত হয় এবং দেশের সার্বভৌম শক্তির প্রতীক হিসেবে রাজা ধর্মীয় ও পার্থিব জীবনের উপর সর্বময় কর্তৃত্ব লাভ করেন। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ধর্মসংস্কারে নেতৃত্ব দিলেও অষ্টম হেনরি ক্যাথলিক মতবাদের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ চাননি। তাই পরবর্তীকালে কিছু কিছু সংশোধন দ্বারা ক্যাথলিক মতাদর্শকে গ্রহণ করেছিলেন। অবশ্য ইংল্যান্ডের চার্চের প্রধান হিসেবে রাজার কর্তৃত্ব অটুট ছিল।

আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment