অমিয় চক্রবর্তীর কাব্যকৃতিত্ব আলোচনা করো
ভূমিকা: বিংশ শতাব্দীর চারের দশকে বিশ্বযুদ্ধোত্তর প্রেক্ষাপটে যে কবিরা মানবসমাজের কাছে মহামানবিকতার মঙ্গলমন্ত্র উচ্চারণ করেছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন কবি অমিয় চক্রবর্তী। ১৯২১ সালে ‘সবুজপত্র’-এ প্রকাশিত দুটি কবিতা এবং ১৯২২ সালে ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় ‘ভারতীয় শিল্প প্রতিভা’ শীর্ষক প্রবন্ধ বা প্রথম গদ্যরচনার মধ্য দিয়ে অমিয় চক্রবর্তীর আত্মপ্রকাশের শুরু।
কাব্যগ্রন্থসমূহ: কবি অমিয় চক্রবর্তী রচিত কাব্যগ্রন্থগুলি হল- ‘খসড়া’ (১৯৩৮), ‘একমুঠো’ (১৯৩৯), ‘মাটির দেওয়াল’ (১৯৪২), ‘অভিজ্ঞান বসন্ত’ (১৯৪৩), ‘দূরবাণী’ (১৯৪৪), ‘পারাপার’ (১৯৫৩), ‘পালাবদল’ (১৯৫৫), ‘হারানো অর্কিড’ (১৯৬৬), ‘পুষ্পিত ইমেজ’ (১৯৬৭), ‘অমরাবতী’ (১৯৭২), ‘অনিঃশেষ’ (১৯৭৬), ‘নতুন কবিতা’ (১৯৮০) প্রভৃতি।
কাব্যবৈশিষ্ট্য: কবি অমিয় চক্রবর্তী তাঁর কাব্যসাধনার প্রথম পর্বে, অর্থাৎ ‘খসড়া’ ও ‘একমুঠো’ কাব্যের যুগে রোমান্টিকতা পরিহার করে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগৎকেই তাঁর কবিতায় তুলে ধরেছেন। ‘খসড়া’ কাব্যের কবিতাগুলিতে দেখা যায় অসংখ্য টুকরো রঙিন ছবি, যার উপস্থাপনা ছন্দগুণে যথেষ্ট আধুনিক।
‘একমুঠো’ কাব্যের বিখ্যাত কবিতা ‘চেতন স্যাকরা’- কুৎসিত, ঘিঞ্জি গলির মধ্যেও যার জীবন প্রতিক্রিয়াশীল। কবি তাকে ‘অমৃতস্য অধম পুত্র’ হিসেবে সম্বোধন করেছেন। এই কবিতায় ‘চেতন’ মধ্যবিত্ত যুবসমাজের ক্ষয়িষু প্রতীক হয়ে উঠেছে। একইভাবে ‘অভিজ্ঞান বসন্ত’ কাব্যগ্রন্থের ‘সংগতি’ কবিতাটি শ্রেণিবিভক্ত সমাজের মর্মান্তিক বাস্তবতাকে তুলে ধরেছে।
উপসংহার: অমিয় চক্রবর্তী রবীন্দ্রসান্নিধ্য পেলেও তিনি রবীন্দ্রানুসারী কবি নন। বাস্তব জীবনের অসংখ্য ছবি তাঁর কবিতায় প্রজ্বলিত। রূঢ় বাস্তবতার নৈরাশ্যে এক অনড় বিশ্বাসের ঘর বাঁধার স্বপ্ন অমিয় চক্রবর্তীর কবিতার বিশিষ্টতা-
"হয়তো তীরে বাড়ি নেই, তবু ভরসায় ভালোবাসা পায় ঘর।" আরও পড়ুন - নুন কবিতার নামকরণের সার্থকতা