প্রাচীন অনুবর্তনের নীতিগুলি উল্লেখ করো | Mention the principles of ancient obedience (Class 11 Exclusive Answer)

প্রাচীন অনুবর্তনের নীতি: প্রাচীন অনুবর্তনের শর্তগুলির উপর ভিত্তি করে প্রাচীন অনুবর্তনের কয়েকটি নীতির উল্লেখ করা যায়। সেগুলি নীচে আলোচনা করা হল।

প্রাচীন অনুবর্তনের নীতি

প্রাচীন অনুবর্তনের নীতিগুলি উল্লেখ করো
প্রাচীন অনুবর্তনের নীতিগুলি উল্লেখ করো

প্রাচীন অনুবর্তনের নীতি: প্রাচীন অনুবর্তনের শর্তগুলির উপর ভিত্তি করে প্রাচীন অনুবর্তনের কয়েকটি নীতির উল্লেখ করা যায়। যেগুলি হল—

(i) পুনঃসংযোজনের নীতি: পুনঃসংযোজন বলতে অনুবর্তিত উদ্দীপকের সঙ্গে স্বাভাবিক উদ্দীপকের উপস্থাপনকে বোঝায়। যেমন- ঘন্টাধ্বনির সঙ্গে খাদ্য (প্যাভলভের পরীক্ষায়)।

(ii) সময় অন্তরের নীতি: স্বাভাবিক উদ্দীপক ও অনুবর্তিত উদ্দীপকের উপস্থাপনের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক উদ্দীপকের প্রতিক্রিয়া শেষ হওয়ার আগে অনুবর্তিত উদ্দীপক উপস্থাপন করা দরকার, অনুবর্তন সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত। প্রত্যেকবার উদ্দীপক উপস্থাপনের ক্ষেত্রে এই নীতি কার্যকর করা না হলে যাথাযথ বন্ধন গঠিত হয় না।

(iii) উদ্দীপকের সামান্যীকরণের নীতি: যদি কোনো প্রাণী কোনো উদ্দীপককে কেন্দ্র করে অনুবর্তিত হয় তবে তারা উদ্দীপকটিকে সামান্যীকরণ করে ফেলে। যেমন- প্যাভলভের পরীক্ষায় ঘন্টাধ্বনি-দ্বারা কুকুরের লালাক্ষরণ অনুবর্তিত হয়েছে, এক্ষেত্রে যে-কোনো ধরনের ঘন্টাধ্বনি করাই হোক না কেন এই অনুবর্তন প্রক্রিয়া ঘটবে অর্থাৎ কুকুরটির অনুবর্তনে ঘন্টাধ্বনি সামান্যীকরণে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে। ঘন্টার আওয়াজের প্রকৃতি যাই হোক্ না কেন।

(iv) পার্থক্যীকরণের নীতি: ভিন্ন ভিন্ন উদ্দীপকের প্রতি প্রাণী ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া করে। যেমন- কোনো মানুষ চা, কফি, দুধ ইত্যাদি পানীয়ের প্রতি বিভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া করে অর্থাৎ অনুবর্তনের ক্ষেত্রে উদ্দীপকের পার্থক্যীকরণ নীতি প্রযোজ্য। যে-কোনো প্রাণীর ক্ষেত্রেই এই নীতিটি প্রযোজ্য।

(v) নির্বাপনের নীতি: কোনো একটি উদ্দীপকের সঙ্গে কোনো প্রতিক্রিয়ার অনুবর্তনের পর কিছুদিন এই পরীক্ষাটির পুনরাবৃত্তি না করলে অর্থাৎ প্যাভলভের ঘন্টাধ্বনির সঙ্গে কুকুরের লালাক্ষরণের অনুবর্তন প্রক্রিয়াটি ধীরে ধীরে কমে আসবে এবং অবশেষে অনুবর্তন নষ্ট হয়ে যাবে। এই প্রক্রিয়াকে বলে নির্বাপন। তাই পরীক্ষার ব্যবধান যত বাড়বে উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ায় বন্ধন তত ক্ষীণ হতে থাকে।

(vi) স্বতঃস্ফূর্ত পুনঃপ্রাপ্তির নীতি: এই নীতি অনুসারে বলা হয় অনুবর্তিত প্রতিক্রিয়া সম্পূর্ণ নির্বাপিত হয় না। পরীক্ষামূলক পরিস্থিতিতে থেকে প্রাণীকে বের করে নিয়ে এলে অনুবর্তনের প্রতিক্রিয়া কমে গেলেও আবার পরীক্ষামূলক পরিস্থিতিতে নিয়ে এলে অনুবর্তনকে সক্রিয় করা যায়। এই নীতিই হল স্বতঃস্ফূর্ত পুনঃপ্রাপ্তির নীতি।

(vii) বাধাদানের নীতি: কোনো উদ্দীপক প্রতিক্রিয়া দিতে বাধা দান করলে বিশেষ অবস্থার উদ্ভব হতে পারে। প্যাভলভ দু ধরনের বাধাদানের কথা বলেছেন। যেগুলি হল- 

  • বাহ্যিক বাধাদান: প্যাভলভীয় পরীক্ষায় কুকুরটিকে অনুবর্তনের পর কোনো ভয়ের কারণে যদি বাইরে থেকে পরিবেশ সৃষ্টি করা যায় তবে তার প্রতিক্রিয়ায় পরিবর্তন হবে। সুতরাং বাহ্যিক বাধাদান অনুবর্তনমূলক পরিবর্তন ঘটায়।
  • অভ্যন্তরীণ বাধাদান: অনুবর্তনের পর অভ্যন্তরীণ বাধাদানে প্রতিক্রিয়ার প্রকৃতি পরিবর্তিত হতে পারে। একজন ব্যক্তির কোনো প্রতিক্রিয়ার প্রতি অনুবর্তন হওয়ার পর বেশ কিছুদিন অসুস্থ হয়ে পড়েন, তবে অনুবর্তিত প্রক্রিয়া দুর্বল হয় কিন্তু সম্পূর্ণ নির্বাপিত হয় না। আবার পরীক্ষার পুনরাবৃত্তি করলে প্রতিক্রিয়ার স্বতঃস্ফূর্ত পুনঃপ্রাপ্তি হয়।

(viii) উন্নত প্রণালীর অনুবর্তন: সাধারণভাবে কোনো উদ্দীপকের কোনো প্রতিক্রিয়ার অনুবর্তন হওয়ার পর যদি নতুন কোনো উদ্দীপক ব্যবহার করা হয়, তখন যে প্রণালীর অনুবর্তন হবে তা হল উন্নত প্রণালীর অনুবর্তন। যেমন- একটি শিশুকে সাধারণ ভাত-তরকারি খাওয়ার প্রতি অনুবর্তনের পর তাকে মাংস দেওয়া হল। তখন তার মধ্যে যে অনুবর্তন ঘটবে, ভাত মাংসকে কেন্দ্র করে এই অনুবর্তন হল উন্নত প্রণালীর অনুবর্তন। এক্ষেত্রে একটি উদ্দীপকের সঙ্গে অন্য উদ্দীপকের অনুষঙ্গের দ্বারা উন্নত প্রণালীর অনুবর্তন ঘটছে।

(ix) বিয়োগাত্মক অনুবর্তন: বারবার পুনরাবৃত্তি যদি অনুবর্তনের ক্ষেত্রে বিরক্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে, তখন প্রাণী উদ্দীপককে উপেক্ষা করে। একে বলে বিয়োগাত্মক অনুবর্তন।

(x) পুনঃসংযোজনের নীতি : কোনো প্রাণীর কোনো প্রতিক্রিয়ার প্রতি অনুবর্তন হওয়ার পর প্রাথমিক উদ্দীপকের পরিবর্তে অন্য কোনো উদ্দীপক ব্যবহার করলে, সেই উদ্দীপকের দরুন প্রতিক্রিয়ার প্রতি যদি সংযোজন হয়, তাকে পুনঃসংযোজন বলে। যেমন-একজন ব্যক্তির নিরামিষ খাবারের প্রতি অনুবর্তন হওয়ার পর যদি আমিষ জাতীয় খাবার দেওয়া হয়, তবে সেই ব্যক্তি নিরামিষ জাতীয় খাবারের বদলে আমিষ জাতীয় খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এই সংযোজনমূলক অনুবর্তন হল পুনঃসংযোজন।

(XI) বয়স ও অনুবর্তনের নীতি: অনুবর্তন সব বয়সের জন্যই কার্যকরী। বিশেষভাবে বাল্যকাল, বয়ঃসন্ধিক্ষনের মানুষদের জন্য এই নীতি অতি গুরুত্বপূর্ণ।

সুতরাং শিশু, যে-কোনো বয়সের পুরুষ, মহিলা, যে-কোনো প্রাণীর ক্ষেত্রে প্রাচীন অনুবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া।

আরও পড়ুনLink
ছুটি গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তরপ্রাচীন অনুবর্তনের বৈশিষ্ট্য গুলি লেখো
তেলেনাপোতা আবিষ্কার বড় প্রশ্ন উত্তরমাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও পাঠক্রম
আগুন নাটকের বড়ো প্রশ্ন উত্তরবৈদিক যুগের শিক্ষাব্যবস্থা

Leave a Comment