স্বাধীনতার পথে প্রশ্ন উত্তর পঞ্চম অধ্যায় | ক্লাস 12 চতুর্থ সেমিস্টার ইতিহাস

সূচিপত্র

স্বাধীনতার পথে প্রশ্ন উত্তর পঞ্চম অধ্যায় | ক্লাস 12 চতুর্থ সেমিস্টার ইতিহাস | HS 4th Semester History Question answer 5th Chapter

স্বাধীনতার পথে প্রশ্ন উত্তর
স্বাধীনতার পথে প্রশ্ন উত্তর

1. ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের গুরুত্ব কী ছিল?

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের গুরুত্ব: ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ঘোষিত ভারত শাসন আইন (Government of India Act, 1935) ভারতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষা ও ভারতবাসীর জাতীয় স্বার্থকে বিঘ্নিত করলেও, পরাধীন এবং স্বাধীন ভারতের রাজনৈতিক জীবনে এই আইনের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম।

(i) যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা : এই আইন দ্বারা ব্রিটিশ সরকার ঔপনিবেশিক শাসনকাঠামোর মধ্য দিয়ে ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করে। এই আইন অনুযায়ী পরবর্তীকালে ভারতে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকার, আইনসভা ও যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত গঠিত হয়। চালাও চানী

(ii) প্রথম নির্বাচনি অনুষ্ঠান: ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন দ্বারা পরাধীন ভারতে ১৯৩৭খ্রিস্টাব্দে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় কংগ্রেস, মুসলিম লিগ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে, যা সংসদীয় গণতন্ত্রের ভিত্তিকে সুদৃঢ় করে।

(iii) মন্ত্রীদের কর্মসূচির রদবদল: এই শাসন সংস্কার আইন দ্বারা প্রদেশে ছোটোলাট বা লেফটেন্যান্ট গভর্নরের হাতে বিশেষ ক্ষমতা থাকলেও, মন্ত্রীদের দায়িত্বে জনকল্যাণকর বিভিন্ন দফতর পরিচালিত হয়। মন্ত্রীদের কাজের জন্য বেতন দানের বিশেষ ব্যবস্থাও করা হয়।

(iv) শেষ সংস্কার আইন: ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক নীতি অনুসারে ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস দানের ক্ষেত্রে এই আইনটি ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ব্রিটিশ ভারতের শেষ সংস্কার আইন ছিল ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন।

(v) সংবিধান রচনার ভিত্তি: ৩২১ টি ধারা ও ১০ টি তফসিল সমন্বিত এই আইন পরবর্তীকালে ভারতের সংবিধান রচনার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। তাই আইনের গুরুত্বও ছিল যথেষ্ট।

তবে ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের আইনে ভারতবাসীর সন্তুষ্ট হওয়ার মতো কোনও উপাদান ছিল না, কারণ এটি আসলে ছিল জাতীয়তাবাদীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির একটি পন্থা। এই আইনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশদের স্বার্থরক্ষা এবং ব্রিটিশ শাসন ও সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা।

2. ভারতীয়রা কেন ক্লিপস মিশনের প্রস্তাবগুলিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল?
অথবা, ক্লিপস মিশনের ব্যর্থতার কারণগুলি ব্যাখ্যা করো।

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার সদস্য স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভারতের সাহায্যলাভের জন্য যে প্রস্তাব পেশ করেন, সেটি ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তা প্রত্যাখ্যান করে। তাই শেষপর্যন্ত ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ১১ এপ্রিল ক্রিপস একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে তাঁর প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেন।

ক্লিপস প্রস্তাব বা ক্লিপস মিশনের ব্যর্থতার কারণ: একাধিক কারণে ক্রিপস মিশন ব্যর্থ হয়েছিল।

(i) পূর্ণ স্বাধীনতার আশ্বাস ছিল না: এই প্রস্তাবে ভারতকে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদানের কোনও উল্লেখ ছিল না। আসলে ব্রিটিশ সরকার চায়নি ভারত স্বাধীনতা লাভ করুক। এটি ছিল মানুষকে বিভ্রান্ত করার কৌশলমাত্র।

(ii) সংবিধান সভাকেন্দ্রিক সমস্যা: এই প্রস্তাবে সংবিধান সভায় ভারতীয় প্রতিনিধিদের নির্বাচনের মাধ্যমে নিয়োগের কথা বলা হয়নি। ফলে ভারতীয়রা অসন্তুষ্ট হন।

(iii) গান্ধিজিকে উপেক্ষা: ক্রিপস ভারতে এসে জওহরলাল নেহরু-র প্রতি অধিক গুরুত্ব দেওয়া শুরু করলে গান্ধিজি সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত হন। ফলে জনগণ প্রস্তাবগুলির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

(iv) ক্লিপসের ব্যক্তিগত ত্রুটি: ক্রিপসের ব্যক্তিগত দোষত্রুটিগুলিও তার প্রস্তাবটির ব্যর্থতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মন্ত্রীসভার প্রদত্ত ক্ষমতার বাইরে গিয়ে কথা বলা, বিভিন্ন দেশীয় রাজন্যকে বিভ্রান্তিকর প্রস্তাব দেওয়া প্রভৃতিও তাঁর প্রস্তাবটির ব্যর্থতার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

(v) স্বদেশে বিরোধিতা: ইংল্যান্ডে ক্লিপস নানা বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছিলেন যা তাঁর প্রস্তাবগুলির ব্যর্থতাকে অনিবার্য করে তুলেছিল। প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল, ভারত-সচিব আমেরি, ভাইসরয় লর্ড লিনলিথগো এবং প্রধান সেনাপতি লর্ড ওয়াভেল-এর বিরোধিতার ফলে স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস-এর মিশন ব্যর্থ হয়।

পরিশেষে বলা যায়, স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস বেতার ভাষণে ক্লিপস মিশনের ব্যর্থতার জন্য কংগ্রেসকে দায়ী করেছিলেন। তবে ঐতিহাসিক এস গোপাল-এর মতে, ক্রিপস প্রস্তাব ছিল ‘রক্ষণশীল, প্রতিক্রিয়াশীল এবং সীমাবদ্ধ।’ অন্যদিকে আবার ঐতিহাসিক সুমিত সরকার লিখেছেন যে, ‘অজস্র দ্বিমুখিতা আর ভুল বোঝাবুঝি ক্লিপস মিশনকে সর্বক্ষণ জর্জরিত করে আর শেষ অবধি ডুবিয়ে ছাড়ে।’

3. টীকা লেখো: মাতঙ্গিনী হাজরা।

অথবা, মাতঙ্গিনী হাজরা ইতিহাসে কেন স্মরণীয়?

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নাম হল মাতঙ্গিনী হাজরা। গান্ধিজির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি দেশের স্বাধীনতার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। এই নেত্রী ইতিহাসে গান্ধি বুড়ি নামেও খ্যাত।

মাতঙ্গিনী হাজরা:

পূর্বপরিচয়: ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের (মতান্তরে ১৮৬৯ খ্রি.) ১৯ অক্টোবর তদানীন্তন মেদিনীপুর জেলার এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বীরাঙ্গনা মাতঙ্গিনী হাজরা। এই বিপ্লবী নেত্রী মাত্র ১৮ বছর বয়সে বিধবা হন। তাঁর কোনও সন্তান ছিল না।

স্বদেশি আন্দোলনে অংশগ্রহণ: তিনি ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে প্রত্যক্ষভাবে ভারতের জাতীয় আন্দোলনে যোগদান করেন। বঙ্গভঙ্গবিরোধী স্বদেশি আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

আইন অমান্য আন্দোলনে ভূমিকা: আইন অমান্য আন্দোলনের সময় ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে লবণ আইন অমান্য করে তিনি গ্রেফতার হন। অল্পকাল পরেই তাঁকে মুক্তি দেওয়া হলে চৌকিদারি কর বন্ধ আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুনরায় তিনি ৬ মাসের সাজা ভোগ করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই সময় তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সক্রিয় সদস্যপদ লাভ করেন।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ: ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ৭৩ বছরের বৃদ্ধা মাতঙ্গিনী হাজরা। মেদিনীপুরের তমলুক থানা দখলের জন্য ৬ হাজার নরনারীর এক মিছিলে নেতৃত্ব দান করেন। এই মিছিল শহরের প্রান্তে পৌঁছালে ব্রিটিশ পুলিশের তরফ থেকে মিছিল বন্ধের নির্দেশ আসে। পুলিশি নির্দেশ অমান্য করে এই মিছিল অগ্রসর হলে মাতঙ্গিনী হাজরাকে গুলি করা হয়। তিন বার গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরও ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা হাতে তুলে ধরে তিনি শহীদের ন্যায় মৃত্যুবরণ (২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ) করেন।

পুলিশি অত্যাচার ও আক্রমণ সহ্য করেও মাতঙ্গিনী হাজরা যেভাবে নির্ভীক চিত্তে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন, তা ভারতীয় নারী সমাজের কাছে দৃষ্টান্তস্বরূপ। এই কারণে তিনি ইতিহাসে চিরস্মরণীয়।

4. টীকা লেখো: রশিদ আলি দিবস।

আজাদ হিন্দ ফৌজের সেনাদের বিচারকে কেন্দ্র করে কলকাতার ছাত্র সমাজের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ সঞ্চারিত হয়েছিল। ছাত্ররা ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ১২ নভেম্বর আজাদ হিন্দ দিবস পালন থেকে শুরু করে অর্থ সংগ্রহ করা, দোকানপাট বন্ধ রাখা ইত্যাদি কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এরূপ পরিস্থিতিতে আজাদ হিন্দ ফৌজের ক্যাপটেন রশিদ আলির বিচারকে কেন্দ্র করে পুনরায় ছাত্রদের মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

রশিদ আলি দিবস: ব্রিটিশ সরকারের সামরিক আদালতের বিচারে ক্যাপটেন আবদুর রশিদ আলিকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলে কলকাতার ছাত্র তথা যুবসমাজ তার বিরোধিতা করেন। এই কারাদণ্ডের প্রতিবাদে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় ব্যাপক আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল। এর মধ্যে ১২ ফেব্রুয়ারি দিনটি রশিদ আলি দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

কলকাতার আন্দোলন: ক্যাপটেন রশিদ আলির মুক্তির দাবিতে (১১-১৩ ফেব্রুয়ারি) কলকাতা গণ আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে। কমিউনিস্ট দলের ছাত্র সংগঠন, মুসলিম লিগের ছাত্র সংগঠন এবং জাতীয় কংগ্রেস একজোট হয়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। ১২ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ রশিদ আলি দিবসের দিন ওয়েলিংটন স্কোয়ারে কংগ্রেস, লিগ ও কমিউনিস্ট নেতারা জনসমাবেশে এক মঞ্চ থেকে ভাষণ দেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন কমিউনিস্ট নেতা সোমনাথ লাহিড়ী, মুসলিম লিগের নেতা সুহরাবর্দি, গান্ধিবাদী নেতা সতীশচন্দ্র দাশগুপ্ত প্রমুখ। আন্দোলনকারীরা মিটিং, মিছিল, শ্রমিক ধর্মঘট ও পরিবহণ ধর্মঘট প্রভৃতির মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। এমনকি শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্রিটিশ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষও হয় তাঁদের। এরপর আন্দোলনের ঢেউ শীঘ্রই পূর্ববঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তাঁদের দেশের অন্যান্য শহরেও এই আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে সভা-সমাবেশ সংগঠিত হয়েছিল।

সরকারের দমননীতি: আন্দোলন দমন করার জন্য সরকার সেনাবাহিনী নিয়োগ করে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ বাধে। সরকারি মতে, এতে ৮৪ জন নিহত ও ৩০০ জন আহত হয়। যদিও বেসরকারি মতে, নিহতের সংখ্যা ছিল ২০০-র বেশি।

মূল্যায়ন: আজাদ হিন্দ বাহিনীর ক্যাপটেন রশিদ আলির বিচারকে কেন্দ্র করে যে বিক্ষোভ-আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা ভারতীয় জনমানসে প্রবল উৎসাহ সৃষ্টি করেছিল। অপরপক্ষে এই আন্দোলনের ফলে ব্রিটিশ সরকার ও জনগণের মনে ভয়ের সঞ্চার হয়, যা ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পটভূমি রচনা করে দিয়েছিল। ঐতিহাসিক গৌতম চট্টোপাধ্যায় এই আন্দোলনকে প্রায় বিপ্লব বলে অভিহিত করেছেন।

5. রাজাজি সূত্র বা সি আর ফর্মুলা বলতে কী বোঝো?

রাজাজি সূত্র / সি আর ফর্মুলা: ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় থেকে মুসলিম লিগ পৃথক পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের জন্য তৎপর হয়ে ওঠে। ফলে ভারতের অখণ্ডতা বিঘ্নিত হতে পারে ভেবে মুসলিম লিগের দাবি কিছুটা মেনে নেয় জাতীয় কংগ্রেস। অতঃপর জাতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের মধ্যে মতভেদ দূর করা এবং ভারতের অখণ্ডতা রক্ষার প্রচেষ্টায় কংগ্রেস নেতা চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী একটি সমাধানসূত্র প্রকাশ করেন, যা রাজাজি সূত্র বা সি আর ফর্মুলা নামে পরিচিত।

সি আর ফর্মুলার প্রস্তাবসমূহ: চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে একটি সমাধানসূত্রের মাধ্যমে বলেন-

  • কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ ঐক্যবদ্ধভাবে স্বাধীনতা লাভের জন্য আন্দোলন করবে।
  • লিগ প্রথম স্বাধীনতার দাবি সমর্থন করুক এবং কংগ্রেসের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দিক।
  • দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলের অধিবাসীদের গণভোট গ্রহণ করে দেখা হবে যে তারা পৃথক রাষ্ট্রগঠনের পক্ষপাতী কি না।
  • মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে ভোটগ্রহণের পূর্বে সব দলকে তাদের বক্তব্য প্রচারের সুযোগ দেওয়া হবে।
  • মুসলিমপ্রধান অঞ্চলগুলি যদি পৃথক রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে মতামত দেয়, তবে দুটি পৃথক রাষ্ট্র গঠন করা হবে।
  • দেশভাগ হয়ে দুটি পৃথক রাষ্ট্র গঠিত হলেও প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, যোগাযোগ ও অন্যান্য বিষয়ে উভয় অংশই সমানভাবে জড়িত-এইসব বিষয় যৌথভাবে পরিচালিত হবে। সমগ্র প্রকল্পটি রূপায়িত হবে ব্রিটিশদের পূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের পরে।

সি আর ফর্মুলার ব্যর্থতা: মহম্মদ আলি জিন্নাহ রাজাজি সূত্রকে সার্বিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেন। ড. অমলেশ ত্রিপাঠী বলেছেন, ‘জিন্নাহ-র অনমনীয় মনোভাবের কারণে সি আর ফর্মুলা ব্যর্থ হয় এবং দ্বিজাতি তত্ত্ব ও ভারতের সাম্প্রদায়িক আন্দোলন তীব্রতার হয়ে ওঠে।’ এর সার্বিক পরিণতি স্বরূপ দ্বিখণ্ডিত হয় ভারতবর্ষ-জন্ম নেয় দুটি পৃথক রাষ্ট্র-পাকিস্তান ও ভারত।

6. নওয়াভেল পরিকল্পনা কী? এর পটভূমি আলোচনা করো?

অথবা, কোন পরিস্থিতিতে ওয়াভেল পরিকল্পনা রচিত হয়?

ওয়াডেল পরিকল্পনা: ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে বড়োলাট লর্ড লিনলিথগোর স্থলাভিষিক্ত হন লর্ড ওয়াভেল। তিনি তৎকালীন ভারতের সাম্প্রদায়িক সমস্যা, পৃথক পাকিস্তানের দাবিতে জিন্নাহ-র অনড় মনোভাব, বাংলার ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি সমস্যাসমাধানের প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন। এরূপ পরিস্থিতিতে ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২৩ মার্চ নাগাদ লর্ড ওয়াভেল প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল-এর সঙ্গে ভারতসংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনার জন্য লন্ডন যান। বিস্তারিত আলোচনার পর – ওয়াভেল ৪ জুন দিল্লি প্রত্যাবর্তন করেন এবং ১৪ জুন তিনি ভারতকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার বিষয়ে তাঁর পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এটি ওয়াভেল পরিকল্পনা (Wavell Plan) নামে খ্যাত।

ওয়াভেল পরিকল্পনার পটভূমি: ভারতে ওয়াভেল পরিকল্পনা পেশের ক্ষেত্রে কতগুলি বিষয় দায়ী ছিল –

(i) জাপানি আক্রমণের আশঙ্কা: ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পতন ঘটলেও এশিয়াতে জাপান তখনও যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিল। এশিয়ায় জাপানের অগ্রগতির ফলে ব্রিটিশ উপনিবেশ হিসেবে ভারতেও জাপানের আক্রমণ বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের মধ্যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল।

(ii) মার্কিন মুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার চাপ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ও তার পরবর্তীকালে পৃথিবীর দুই বৃহৎ শক্তি-আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া ভারতের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। ভারতের স্বাধীনতার দাবি মেনে নেওয়ার জন্য তারা ইংল্যান্ডের উপর চাপ সৃষ্টি করে।

(iii) ইংল্যান্ডের সাধারণ নির্বাচন: এই সময় ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনের দিন এগিয়ে এসেছিল, তাই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল রক্ষণশীল দলের নেতা হিসেবে আশঙ্কা করেছিলেন যে, নির্বাচনে তাঁর দলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী লিবারেল পার্টি তাদের ভারতনীতির সমালোচনা করবে। তাই রক্ষণশীল দলের নেতা চার্চিল ভারতের সঙ্গে বোঝাপড়ায় আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন।

(iv) ভারতে সাম্প্রদায়িক সমস্যা সমাধানে ব্যর্থতা: ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে লর্ড ওয়াভেল ভারতের ভাইসরয় হয়ে আসেন। ভারতের রাজনৈতিক তথা সাম্প্রদায়িক সংকট নিরসনে গান্ধিজি এবং মুসলিম লিগের নেতা জিন্নাহ-র সঙ্গে লর্ড ওয়াভেল দীর্ঘ আলোচনা করেন, কিন্তু শেষপর্যন্ত সাম্প্রদায়িক সমস্যা সমাধানে তিনি ব্যর্থ হন।

7. মন্ত্রী মিশন/ক্যাবিনেট মিশনের ঘোষিত পরিকল্পনার প্রেক্ষিতে ভারতীয়দের মধ্যে কিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল তা লেখো।

১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ মে মন্ত্রী মিশন বা ক্যাবিনেট মিশন (Cabinet Mission) ভারতের ভবিষ্যৎ গঠন ও শাসন কাঠামো গড়ে তোলার সুপারিশ পেশ করেছিলেন। এই ঘোষণার প্রেক্ষিতে ভারতীয় রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিক্রিয়া ছিল ভিন্নমুখী ও দ্বিধান্বিত। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই মিশনের মোট ৩ জন সদস্য ছিলেন পেথিক লরেন্স, এ ভি আলেকজান্ডার এবং স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস।

মন্ত্রী মিশন/ক্যাবিনেট মিশনের ঘোষিত পরিকল্পনার প্রেক্ষিতে ভারতীয়দের প্রতিক্রিয়া:

মুসলিম লিগের প্রতিক্রিয়া:

  • মুসলিম লিগ ৬ জুন প্রাথমিকভাবে ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাব মেনে নিয়েছিল। তাদের মনে হয় যে, ক্যাবিনেট মিশনের পরিকল্পনার মধ্যে পৃথক পাকিস্তানের ভিত গড়ার সুযোগ নিহিত আছে। এই পরিকল্পনা সার্বভৌম স্বাধীন ‘পাকিস্তান’ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সহযোগী হবে বলেই লিগের বিশ্বাস হয়।
  • এসময় কংগ্রেসকে বাইরে রেখে সরকার গঠনের সম্ভাবনা সৃষ্টি হলে মুসলিম লিগের নেতারা উচ্ছ্বসিতও হন।
  • কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের মনে হয়েছিল ভারতে কংগ্রেসকে বাইরে রেখে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন সঠিক হবে না। তাই কংগ্রেস যাতে তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে সেই চেষ্টা চালাতে থাকে সরকার। ফলে লিগ ক্ষুব্ধ হয় ও তারা পূর্ব সিদ্ধান্ত বাতিল করে। শেষপর্যন্ত ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জুলাই জিন্নাহ ঘোষণা করেন যে, মুসলিম লিগ ক্যাবিনেট মিশন পরিকল্পনা মানে না। অতঃপর জিন্নাহ ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ আগস্ট প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস পালনের ডাক দেন।

জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া:

  • প্রাথমিকভাবে, জাতীয় কংগ্রেস মন্ত্রী মিশনের সুপারিশে খুশি হতে পারেনি। কারণ, এতে ভারত বিভাগের সুযোগ রাখা ছিল। তাছাড়া সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা ছিল, যা কংগ্রেসের নীতিবিরোধী। তাছাড়া কংগ্রেস ভারতের স্বাধীনতার শর্তকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল, যা এই প্রস্তাবে ছিল না। তাই কংগ্রেস অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দিতে অসম্মত হয়।
  • তবে ৬ জুলাই কংগ্রেস দলগতভাবে শর্তসাপেক্ষে ক্যাবিনেট মিশনের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাগুলি অনুমোদন করে। কয়েকদিনের মধ্যে জওহরলাল নেহরু এ.আই.সি.সি (All India Congress Committee) অধিবেশনে জানিয়ে দেন যে, ‘সংবিধান সভায় যোগ দেওয়া ছাড়া অন্য কোনও বিষয়ে কংগ্রেসের বাধ্যবাধকতা নেই।’ কংগ্রেসের এই ঘোষণার মাধ্যমে কংগ্রেসকে বাইরে রেখে সরকার গঠনের সম্ভাবনা জোরালো হয়েছিল।
  • ব্রিটিশ সরকার এই সময় উপলব্ধি করে, কংগ্রেসকে বাইরে রেখে ভারতে কোনও অন্তর্বর্তী সরকার গঠন যুক্তিযুক্ত হবে না। বড়োলাট লর্ড ওয়াভেল তাই কংগ্রেসকে তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার কথা বলেন। ব্রিটিশ সরকারের একান্ত অনুরোধে কংগ্রেস তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে এবং অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দিতে রাজি হয়।

8. মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার মাধ্যমে ভারত বিভাজন পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা: লর্ড মাউন্টব্যাটেন ছিলেন ভারতের শেষ ভাইসরয়। তিনি ভারতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৩ জুন যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন, তা মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা (Mountabatten Award) নামে পরিচিত। তাঁর পরিকল্পনার দুটি মূল বিষয় ছিল-পাকিস্তান গঠনের দাবিকে মান্যতা দান এবং দ্রুত ক্ষমতা হস্তান্তর করে অশান্ত উপমহাদেশে শৃঙ্খলা ও শান্তির পুনঃপ্রতিষ্ঠা।

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার মাধ্যমে ভারত বিভাজন পদ্ধতি:

ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা: ২৪ মার্চ থেকে ৬ মে পর্যন্ত লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে প্রায় ১৩৩টি বৈঠক করেন। কিন্তু পৃথক ‘পাকিস্তান’ গঠনের দাবিতে মুসলিম লিগের অনড় মনোভাবের ফলে ঐক্যমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। কংগ্রেস চেয়েছিল শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠন -ই হোক। অন্যদিকে, জিন্নাহ ও লিগ দাবি করে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন ও সার্বভৌমত্ব এবং প্রদেশসমূহের অনুমোদনের ভিত্তিতে একটি কেন্দ্রীয় সরকার। এরূপ পরিস্থিতিতে লর্ড মাউন্টব্যাটেন কংগ্রেস নেতাদের জানান যে, যুক্তরাষ্ট্রের দাবি মেনে নিলে কেন্দ্রে থাকবে প্রায় ক্ষমতাহীন এবং প্রদেশের উপর নির্ভরশীল একটি দুর্বল সরকার। ভারতবর্ষের মতো একটি বহু ভাষা, জাতি, ধর্ম ও সংস্কৃতি অধ্যুষিত দেশে বিচ্ছিন্নতা ও বিভেদকামী প্রবণতা রোধ করার জন্য শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার থাকা আবশ্যিক। মুসলিম অধ্যুষিত কয়েকটি অঞ্চল বাদ গেলেও অবশিষ্ট বৃহত্তর অংশে নতুন ও স্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার ঐক্যবদ্ধ, উন্নত ভারত গড়ে তোলার সুযোগ পাবে। তাই পৃথক ‘পাকিস্তান’ গঠন ভারতের পক্ষে ‘একমাতৃক অভিশাপ’ হবে না। মুসলিম লিগের অসহযোগিতা, সাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদির প্রেক্ষিতে লর্ড মাউন্টব্যাটেনের প্রস্তাব কংগ্রেস নেতাদের কাছে বেশি যুক্তিগ্রাহ্য বলেই মনে হয়।

বলকান প্রস্তাব পেশ: বিকল্প পরিকল্পনা হিসেবে লর্ড মাউন্টব্যাটেন ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে বলকান প্রস্তাব পেশ করেন। এই প্রস্তাবে বলা হয়-

  • বাংলা ও পাঞ্জাব বিধানসভার মুসলিম ও অমুসলিম জেলার সদস্যরা পৃথকভাবে মিলিত হয়ে প্রত্যেক বিধানসভার উভয় সেকশন যদি দেশভাগের পক্ষে রায় দেয় তবে বাংলা ও পাঞ্জাব ভাগ করা হবে।
  • সীমান্তের অধিবাসীদের মনোভাব জানার জন্য গণভোট নেওয়া হবে। অর্থাৎ, দেশভাগের দায়িত্ব বর্তাবে ভারতবাসীর ওপর।
  • ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের জুন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতাসীন থাকবে। কিন্তু শেষপর্যন্ত এই পরিকল্পনা গৃহীত না হওয়ায় ভারত বিভাগের সমস্যা আরও জটিল হয়ে ওঠে।

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার খসড়া পেশ:

  • এরপর ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে মাউন্টব্যাটেন তার পরিকল্পনার খসড়া প্রস্তুত করেন। ২ মে এই খসড়াটি ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার অনুমোদনের জন্য লন্ডনে পাঠানো হয়। ১০ মে কিছু সংশোধনী-সহ তা ভারতে ফেরত আসে।
  • মাউন্টব্যাটেন তাঁর পরিকল্পনা প্রকাশ্যে আনার আগেই জওহরলাল নেহরুকে দেখান। এই প্রস্তাবে বলা হয়েছিল যে, কোনও প্রদেশ ভারত বা পাকিস্তানে যোগ না দিয়ে স্বাধীন রাজ্য হিসেবে থাকতে পারবে। তাই নেহরু এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন এবং আপত্তি জানিয়ে বলেন যে, প্রদেশগুলি ক্ষমতার একক হলে এবং তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইউনিয়ন (যুক্তরাষ্ট্র) গঠিত হলে, গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা থাকবে। এতে ভারতবর্ষ টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।

চূড়ান্ত পরিকল্পনা: জওহরলাল নেহরুর আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে মাউন্টব্যাটেন তাঁর খসড়া প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করেন। এ বিষয়ে রূপরেখা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় সরকারের প্রধান সংবিধানিক উপদেষ্টা ভি পি মেনন-কে। মেনন যে পরিকল্পনা পেশ করেন, তা প্ল্যান পার্টিশান নামে খ্যাত। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, সমগ্র ভারতবর্ষকে ভারত ও পাকিস্তান দুটি ডোমিনিয়নে ভাগ করে ক্ষমতা হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই পরিকল্পনাটি সংশোধনের পর ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৩ জুন ভারতবিভাগ ৩ ক্ষমতা হস্তান্তর সংক্রান্ত চূড়ান্ত পরিকল্পনাটি মাউন্টব্যাটেন ঘোষণা করেন। এই প্রস্তাবে বলা হয়-

  • সমগ্র ভারতবর্ষকে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি ডোমিনিয়নে বিভক্ত করা হবে এবং এরা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ অভ্যন্তরীণ ও বিদেশনীতি পরিচালনা করবে।
  • মুসলমান অধ্যুষিত সিন্ধু, বালুচিস্তান, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, পশ্চিম পাঞ্জাব ও পূর্ব বাংলা নিয়ে পাকিস্তান গঠিত হবে।
  • পাঞ্জাব ও বাংলাকে বিভক্ত করা হবে এবং এই দুই প্রদেশের কোন্ কোন্ অঞ্চল কোন্ ডোমিনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হবে তা নির্ধারণের জন্য একটি সীমানা নির্ধারণ কমিশন গঠিত হবে।
  • দেশীয় রাজ্যগুলি কে কোন্ অংশে যোগ দেবে তা স্থির করার স্বাধীনতা পাবে ইত্যাদি।

সংশোধনের পর মাউন্টব্যাটেনের পরিকল্পনাটি ১৮ জুলাই রাজকীয় অনুমোদন দ্বারা আইনে পরিণত হয়। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সর্দার প্যাটেল, পণ্ডিত নেহরু, মুসলিম লিগের পক্ষে জিন্নাহ, লিয়াকৎ আলি, বলদেব সিং এই প্রস্তাব মেনে নেন।

আরো পড়ুন : উচ্চমাধ্যমিক চতুর্থ সেমিস্টারের ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment