ছাত্রজীবনে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা রচনা
সূচনা
ব্যক্তিগত জীবনে, পরিবারে সমাজে বা রাষ্ট্রে প্রত্যেক ব্যক্তি বিশেষ আচরণবিধি মেনে চলে বলে মানুষ সুখে-শান্তিতে জীবনযাপন করে। ছাত্র জীবনই সামাজিক দায়িত্ব ও শৃঙ্খলা অনুশীলনের উপযুক্ত সময়। শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার প্রধান কথা হল আনুগত্য, যার মধ্যে নিহিত আছে মঙ্গলময়ের সংকেত। শৃঙ্খলাবোধকে যে মনে করে শৃঙ্খল, বেপরোয়া মনোভাবের বশবর্তী হয়ে সর্বজন স্বীকৃত নিয়ম- নীতিকে মর্যাদা না দিয়ে তা অমান্য করে তার জীবনের যেকোনো ক্ষেত্রের সাফল্য অর্জন অসম্ভব হয়। মানুষের জীবনকে সুন্দর, সুবিন্যস্ত করে তুলতে হলে উপুক্ত শৃঙ্খলাবোধ অনুসরণকরা খুবই প্রয়োজন। সামাজিক অগ্রগতি, শ্রী ও কল্যাণের জন্য সর্বত্র চাই সুশৃঙ্খলা। মানবসমাজের উন্নতি, অগ্রগতি, সভ্যতার বিকাশ সবকিছুর মূলে রয়েছে ব্যষ্টি মানুষের ও সমষ্টি মানুষের সুশৃঙ্খল কর্মোদ্যম।
ছাত্রজীবনে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা প্রদর্শন
শৈশবকাল থেকে মানুষকে সমাজে বিচরণ করতে হয়, গ্রহণ করতে হয় নানাবিধ সামাজিক দায়িত্ব। শৈশবকাল মানে ছাত্রজীবনকে বুঝায়। ছাত্ররা যদি খেয়াল-খুশিমতো যথেচ্ছাচার শুরু করে তাহলে ভবিষ্যৎ জীবন হয়ে যাবে উচ্ছৃঙ্খল। ছাত্রসমাজ জাতির মেরুদন্ড। জীবন শুরুতে নিতে হয় ভবিষ্যৎ জীবনের এগিয়ে চলার সুশিক্ষা। সৌজন্য, শিষ্টাচার, নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলা আলাদা শব্দ হলেও প্রত্যেকে অন্যের পরিপূরক। ভারতের প্রাচীন আর্যসমাজে ছাত্ররা গুরুগৃহে শৃঙ্খলা মেনে শিক্ষা গ্রহণ করত। স্পার্টা দেশবাসীর শৃঙ্খলাবোধর কথা আজও ইতিহাসের পৃষ্ঠায় গৌরবের সাথে স্থানলাভ করে আছে। শৃঙ্খলাবোধ ছিল বলে স্পার্টা দেশবাসী এক সময় উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে পেরেছিল।
শৃঙ্খলাবোধ না থাকলে ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষার ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে না, শৃঙ্খলার শক্তি মানুষকে ব্যক্তিগত ও কর্মজীবনে সাফল্য এনে দেয়। একসময় ব্রিটিশরা প্রচন্ড শক্তিশালী জাতি হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছিল শৃঙ্খলাবোধ ও সুশিক্ষার জন্য। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রী যদি বিশৃঙ্খল আচরণ করে তাহলে তারা শিক্ষার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়বে, ভবিষ্যতে সমগ্র জাতির বিশৃঙ্খল আচরণের জন্য সমাজে বা রাষ্ট্রের আনন্দ- সুন্দর জীবনে নেমে আসবে নিরানন্দের ছায়া। কঠিন নিয়ম-শৃঙ্খলার নিয়মে নিজেদের বাঁধতে না পারলে পরিবারে ধরবে ভাঙন, বিপর্যস্ত হয়ে রাষ্ট্র, পরিবার, যৌথ জীবন অচল হয়ে পড়বে।
শৃঙ্খলা ও মানব সমাজ
মানব সমাজের সামগ্রিক অগ্রগতি ও চরম বিকাশের প্রয়োজনে সুশৃঙ্খলা, কর্মোদ্যোগ চাই। শৃঙ্খলা ছাড়া থাকবে না শ্রী, কল্যাণ, আনন্দ, শান্তি, অগ্রগতি। বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা পৃথিবীতে সৃষ্টি করে ধবংসের কালোছায়া। শৃঙ্খলাবদ্ধ সুসংহত সেনাবাহিনীই যুদ্ধ জয় করতে পারে এবং বিশৃঙ্খলা উন্মত্ততা এনে দেয় পরাজয়ের গ্লানি। তাই সামাজিক সাফল্যের জন্য প্রয়োজন শৃঙ্খলা অনুশীলন।
ছাত্র-সমাজে উচ্ছৃঙ্খলতার কারণ
বর্তমানের ছাত্র-সমাজের উচ্ছৃঙ্খলতায় সকলেই উদ্বিগ্ন। তাদের উচ্ছৃঙ্খলতা চোখে পড়ে পরীক্ষা মন্দিরে, পথে-ঘাটে, বাসে- ট্রামে, সামাজিক জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে। তারা সামনে অগ্রসর হতে চায়। কর্মহীনতা তাদের মনে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। কুরুচি ও দুর্নীতিপূর্ণ চলচ্চিত্র প্রদর্শন, বিশেষ করে ঘরে ঘরে টেলিভিশন এসে যাওয়ায় রুচিহীন ছবি কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের মনকে বিভ্রান্ত করছে। স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক প্ররোচনা অনেক সময় উচ্ছৃঙ্খলতার সুযোগ করে দিচ্ছে। শিষ্টাচার, সৌজন্য ও শৃঙ্খলা প্রদর্শন বাড়ি, পারিপার্শ্বিক, এবং স্কুলের পরিবেশের ওপর ও নির্ভর করে। বাড়ি বা স্কুলের গন্ডিতে পরিবার পরিজন, শিক্ষক ও অন্যদের পরিশীলিত ও সহানুশীল হতে হবে। ছাত্র-ছাত্রীরা স্নেহ- ভালোবাসার কাঙাল। শিশুমন ও বয়ঃসন্ধিকালের মানসিকতাকে স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে সঠিকপথে তাদের পরিচালনা করা অভিভাবক ও শিক্ষক প্রভৃতির দায়িত্ব।
উপসংহার
উন্নয়নমুখী সমাজ ছাত্র-সমজের দায়িত্ববোধ ও শৃঙ্খলা আশা করে। তাদের শিক্ষার জন্য বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ব্যয়ভারের দায়িত্ব বহন করে সমাজ। ছাত্রজীবনই হল দায়িত্ববোধ বিকাশের সময়। তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করলে ও শৃঙ্খলাবদ্ধ হওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করলে তাদের মধ্যে আদর্শের সূর্যোদয় ঘটবে।
আরও পড়ুন – একটি ছুটির দিন রচনা