মানসিক স্বাস্থ্য ও কল্যাণ (UNIT 2) প্রশ্ন উত্তর ক্লাস 12 চতুর্থ সেমিস্টার শিক্ষাবিজ্ঞান

সূচিপত্র

মানসিক স্বাস্থ্য ও কল্যাণ (UNIT 2) প্রশ্ন উত্তর ক্লাস 12 চতুর্থ সেমিস্টার শিক্ষাবিজ্ঞান | Mental health and well-being Question Answer | Class 12 Semester 4th Education

মানসিক স্বাস্থ্য ও কল্যাণ প্রশ্ন উত্তর
মানসিক স্বাস্থ্য ও কল্যাণ প্রশ্ন উত্তর

১। WHO এর মতে, স্বাস্থ্য কী? দৈনন্দিন জীবনে মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতার সুরক্ষায় কী কী করণীয় হওয়া উচিত?

WHO-এর মতে, স্বাস্থ্যের সংজ্ঞা:

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা WHO-এর মতে, “স্বাস্থ্য হল সম্পূর্ণ শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক সুস্থতার একটি অবস্থা এবং শুধু রোগ বা দুর্বলতার অনুপস্থিতি নয়।”

মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয় বিষয়:

মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতা এবং সুরক্ষায় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মেনে চলা উচিত। যেমন-

পর্যান্ত ঘুম: ঘুম শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হতাশা, উদ্বেগ, বিষন্নতা ইত্যাদি মানসিক সমস্যার ঝুঁকি এড়াতে দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম প্রয়োজন।

পুষ্টিকর এবং সুষম খাদ্যগ্রহণ: পুষ্টিকর এবং সুষম খাদ্য শরীর এবং মন উভয়ের জন্য খুবই উপকারী। পুষ্টিকর খাবার শরীরের শক্তি যোগানের পাশাপাশি মস্তিষ্ককেও চনমনে রাখে। যেমন- ভিটামিন, আয়রন ইত্যাদি মন এবং মেজাজের নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করে।

মাদকদ্রব্য ও ধূমপান পরিহার : মাদকদ্রব্য গ্রহণ এবং ধূমপান একদিকে যেমন মস্তিষ্কের কার্যকারিতা হ্রাস করে, তেমনই বিভিন্নপ্রকার জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। তাই মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতার সুরক্ষায় এগুলি অবশ্যই পরিহার করা প্রয়োজন।

নিয়মিত শরীরচর্চা: নিয়মিত এবং নিয়মতান্ত্রিক শরীরচর্চা এবং খেলাধুলা আমাদের দেহ ও মন উভয়কে সতেজ রাখতে সাহায্য করে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

আত্মসক্রিয় থাকা: আলস্যভাবে জীবন কাটানোর পরিবর্তে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশি সকলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা, প্রাতভ্রমণ করা, পাঠাগারে যাওয়া প্রভৃতি মানসিক স্বাস্থ্যরক্ষায় বিশেষ সহায়ক।

সুশৃঙ্খল জীবনযাপন : সর্বোপরি মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতা ও সুরক্ষায় শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন অত্যাবশ্যক। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এর বিকল্প হয় না।

২। মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা চিহ্নিতকরণের উপায়গুলি কী কী?

মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা চিহ্নিতকরণের উপায়সমূহ:

মানসিক স্বাস্থ্যজনিত বিভিন্ন সমস্যা ব্যক্তিজীবনে এবং শিক্ষাক্ষেত্রেও অসুবিধা সৃষ্টি করে। মানসিকভাবে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের যে সমস্যাসমূহ দ্বারা চিহ্নিত করা যায়, সেগুলি হল-

অত্যন্ত লাজুক : এই ধরনের শিক্ষার্থীরা নিজেকে অন্যান্য শিক্ষার্থী, শিক্ষক সবার থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। পঠন-পাঠন সংক্রান্ত কাজ, সহপাঠক্রমিক কাজ ইত্যাদি কোনো কিছুতেই অংশগ্রহণ করতে চায় না। অর্থাৎ এরা লাজুক প্রকৃতির হয়।

বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি: কিছু কিছু শিক্ষার্থী প্রায়শই। বিদ্যালয়ে আসে না। বিদ্যালয়ে অধিকাংশ দিন অনুপস্থিতি মানসিক সুস্থতার অভাব বলা যায়।

শ্রেণিকক্ষে অমনোযোগী : অনেক শিক্ষার্থীকে প্রতিনিয়ত পাঠে অমনোযোগী হতে দেখা যায়। এই বিষয়টিও অসুস্থ মানসিকতার একটি লক্ষণ।

হতাশা: অনেক শিক্ষার্থী পঠনপাঠন সংক্রান্ত, সহপাঠক্রমিক কাজ ইত্যাদিতে অসফল হলে অতান্ত হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। হতাশা শিক্ষার্থীর মানসিক সুস্থতা নষ্ট করে।

আলস্যপরায়ণ: এইসমস্ত শিক্ষার্থী অলস প্রকৃতির হয়। তারা বিদ্যালয়ের কোনো কাজে আগ্রহ দেখায় না। কোনো কাজে দায়িত্ব দিলে দায়িত্বকে এড়িয়ে চলে। এরাও মানসিকভাবে সুস্থ নয়।

আক্রমণমূলক : শ্রেণিকক্ষে কয়েকজন শিক্ষার্থী থাকতে পারে, যারা সামান্য কারণে উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং অন্য সহপাঠীদের মারধর করে। আক্রমণধর্মী মনোভাব মানসিক অসুস্থতার একটি লক্ষণ।

৩। উদবেগ কাকে বলে? উদ্দবেগের কারণগুলি আলোচনা করো।

উদ্বেগ: উদ্বেগ বা Anxiety একটি মানসিক ব্যাধি। সাধারণত ভয় থেকে উদ্বেগের উৎপত্তি হয়। অত্যধিক স্নেহ অথবা স্নেহের অভাব থেকে নিউরোসিসের উদ্ভব হয়। নিউরোসিসের একটি বিভাগ হল উদ্‌দ্বেগ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর মতে, উদ্বেগ এমন একটি মানসিক অবস্থা, যা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, ভয় এবং মানসিক অস্থিরতার কারণে সৃষ্টি হয়। এটি ব্যক্তির দৈনন্দিন কাজকর্মে প্রভাব ফেলতে পারে এবং বিভিন্ন শারীরিক লক্ষণ, যেমন- হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি, অতিরিক্ত ঘাম এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।

উদ্বেগের কারণ:

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, উদ্বেগের প্রধান কারণগুলি হল-

চরম মানসিক চাপ : অতিরিক্ত কাজের চাপ, পড়াশোনার চাপ বা ব্যক্তিগত জীবনের সমস্যা উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে।

অর্থীনতিক সমস্যা : অর্থনৈতিক সমস্যা বা ঋণের বোঝা উদ্বেগ বাড়াতে পারে।

শারীরিক অসুস্থতা : কঠিন অসুখ, দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতা বা পরিবারের কারও অসুস্থতা ব্যক্তিকে বিষণ্ণ, চিন্তিত, ভীত বা ক্রুদ্ধ করে তুলতে পারে। আর এর ফলেই ব্যক্তির মধ্যে উদ্বেগজনিত – বিশৃঙ্খলা জন্ম নেয়।

সামাজিক বিচ্ছিন্নতা : পরিবার, বন্ধু বা সমাজ থেকে ব্যক্তি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে উদ্বেগের মাত্রা বেড়ে যায়।

অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ : চাকরি, সম্পর্ক বা জীবনের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনিশ্চয়তা উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে।

এগুলো ছাড়াও ব্যক্তির জীবনযাত্রা, অতীত অভিজ্ঞতা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, শৈশবে নির্যাতিত হওয়ার ইতিহাস, অ্যালকোহলে আসক্তি ইত্যাদি কারণে ব্যক্তির মধ্যে উদ্বেগজনিত বিশৃঙ্খলা জন্ম নেয়।

৪। মানসিক চাপ কাকে বলে? বয়ঃসন্ধিকালে মানসিক চাপের কারণগুলি আলোচনা করো।

মানসিক চাপ: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর মতে, স্ট্রেস বা মানসিক চাপ হল এমন একটি শারীরিক ও মানসিক প্রতিক্রিয়া, যা তখন সৃষ্টি হয়, যখন কেউ চাপে পড়ে বা কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। এটি শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অংশ, যা ব্যক্তি যখন কোনো বিপদ বা অতিরিক্ত কাজের চাপ অনুভব করে, তখন সক্রিয় হয়।

মানসিক চাপের কারণসমূহ: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুসারে, কৈশোরে মানসিক চাপের মূল কারণগুলি হল-

শারীরিক পরিবর্তন : দেহের দ্রুত পরিবর্তন, যেমন- বয়ঃসন্ধিকালীন হরমোনের পরিবর্তন ও গঠনগত পরিবর্তনের কারণে ছেলে-মেয়েরা মানসিক চাপের শিকার হয়।

শিক্ষাগত চাপ : পরীক্ষার ফলাফল, পড়াশোনার চাপ এবং ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার নিয়ে উদ্বেগ কিশোর-কিশোরীদের মানসিক চাপের অন্যতম একটি কারণ।

পারিবারিক সদস্যা : বাবা-মায়ের মধ্যে মতবিরোধ, আর্থিক অসুবিধা বা পরিবারের প্রত্যাশার চাপ ছেলেমেয়েদের মধ্যে মানসিক চাপ সৃষ্টি করে।

সামাজিক চাপ : বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক, সামাজিক স্বীকৃতি পাওয়ার চেষ্টা এবং সহপাঠীদের প্রভাব কখনো কখনো মানসিক চাপ সৃষ্টি করে থাকে।

মানসিক ও আবেগগত পরিবর্তন : আত্মপরিচয় গঠনের সংগ্রাম, আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণের সমস্যা কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে মানসিক চাপ সৃষ্টি করে।

কৈশোরকালীন মানসিক চাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা শারীরিক, মানসিক, শিক্ষাগত পারিবারিক ও সামাজিক কারণে সৃষ্টি হতে পারে। সুতরাং বাবা-মা, শিক্ষক ও সমাজের দায়িত্ব হল কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করা।

৫। হতাশা বা বিষণ্ণতা কাকে বলে? বিষণ্ণতার কারণগুলি আলোচনা করো।

হতাশা বা বিষন্নতা:

Depression বা বিষন্নতা হল একটি মানসিক অবস্থা, যেখানে একজন ব্যক্তি দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত দুঃখ, আগ্রহহীনতা এবং নেতিবাচক চিন্তাধারায় ভুগে থাকেন। এটি তার দৈনন্দিন কার্যকলাপ, আবেগ, আচরণ এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর গুরুতর প্রভাব ফেলে। অন্যভাবে বলা যায়, হতাশা বলতে লক্ষ্যাভিমুখী আচরণের পথে বাধাকে বোঝায়। হতাশা এমন একটি মানসিক অবস্থা, যখন আত্মমর্যাদাবোধ ও আত্মপ্রত্যয় দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যখন কোনো ব্যক্তির দুঃখজনক মেজাজ অনেক বেশি সময় স্থায়ী হয়, তখন তার হতাশাজনিত দুশ্চিন্তা আসতে পারে।

বিষণ্নতার কারণ:

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিষণ্ণতার বিভিন্ন কারণ চিহ্নিত করেছে। সেগুলি হল-

জিনগত কারণ: পারিবারিক ইতিহাসের কারণে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বিষণ্ণতা সৃষ্টি হতে পারে।

ব্যক্তিগত সমস্যা : পরীক্ষার ফলাফল, পড়াশোনার চাপ এবং ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার নিয়ে উদ্বেগ বিষণ্ণতা সৃষ্টি করতে পারে।

পারিবারিক সমস্যা : বাবা-মায়ের মধ্যে বিবাদ, বিচ্ছেদ বা পারিবারিক সহিংসতা কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তারা বিষণ্ণ হয়ে পড়ে।

সামাজিক সম্পর্কের জটিলতা : বন্ধুত্বে বিচ্ছেদ, প্রেমঘটিত সমস্যা বা সামাজিক প্রত্যাখ্যান বিষণ্ণতা সৃষ্টি করতে পারে।

সামাজিক বৈষম্য ও দারিদ্র : নিম্ন আয়ের পরিবারে বেড়ে ওঠা কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বিষণ্ণতার ঝুঁকি বেশি থাকে।

হরমোনের পরিবর্তন : কৈশোরে শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মানসিক অস্থিরতা বেড়ে যায়, যা বিষণ্ণতার কারণ হতে পারে।

মাদকের ব্যবহার : ধূমপান, মদ্যপান বা মাদকের প্রতি আসক্তি বিষণ্ণতার কারণ হতে পারে।

কিশোর-কিশোরীদের বিষণ্ণতা একটি গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা, যা সময়মতো সঠিক চিকিৎসা ও মানসিক সহায়তা না পেলে আত্মহত্যার ঝুঁকি পর্যন্ত বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই পরিবার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উচিত কিশোর-কিশোরীদের বোঝার চেষ্টা করা এবং প্রয়োজনীয়। ও সহায়তা প্রদান করা।

৬। অপসংগতি কী? অপসংগতির কয়েকটি শর্ত লেখো।

অপসংগতি:

শিক্ষার্থী তথা ব্যক্তির দৈহিক ও মানসিক চাহিদাগুলির যথাযথ পরিতৃপ্তি না হলে, ব্যক্তির মধ্যে প্রক্ষোভমূলক অসংগতি ও মানসিক দ্বন্দ্ব দেখা যায়। এটি ব্যক্তির বাহ্যিক আচরণকে প্রভাবিত করে ও ব্যক্তি নানান অবাঞ্ছিত, অসামাজিক আচরণ করে। একেই বলে অপসংগতি।

অপসংগতির শর্ত:

নিরাপত্তার অভাববোধ : বাবা ও মা, বাবা, শিক্ষক বা অন্যান্য ব্যক্তিরা শিক্ষার্থী তথা ব্যক্তির প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করলে ব্যক্তি নিজেকে অবাঞ্ছিত মনে করতে পারে। ফলে তার মধ্যে নিরাপত্তার অভাব দেখা যায় ও অপসংগতিমূলক আচরণ করে।

আক্রমণাত্মক মনোভাব : স্বাভাবিক প্রবণতা ও নানারকম বিরূপ অভিজ্ঞতা অর্জনের কারণে ব্যক্তির মধ্যে আক্রমণাত্মক মনোভাবের বিকাশ হয়। এর ফলে ব্যক্তির মধ্যে অপসংগতিমূলক আচরণ দেখা যায়।

অপরাধমূলক অনুভূতি : অনেকসময় শিক্ষার্থী তথা ব্যক্তি নিজের অসামাজিক কোনো আচরণের জন্য নিজেকে দায়ী করে। এই অপরাধবোধের অনুভূতির দরুন ব্যক্তি অনেকটা সংকুচিত হয়ে পড়ে ও তার মধ্যে অপসংগতিমূলক আচরণ দেখা যায়।

মানসিক দ্বন্দ্ব : শিক্ষার্থী তথা ব্যক্তির মধ্যে পরস্পরবিরোধী মানসিক ইচ্ছা সৃষ্টির জন্য দ্বন্দ্বের সৃষ্টি। হয়। এই দ্বন্দ্বের মীমাংসা সুষ্ঠুভাবে না হলে ব্যক্তির মধ্যে অপসংগতি দেখা যায়।

বিদ্যালয়ঘটিত কারণ : অস্বাস্থ্যকর বিদ্যালয় পরিবেশ, জটিল পাঠক্রম, শিক্ষকদের অতিরিক্ত শাসন, বিদ্যালয়ে খেলাধুলার ব্যবস্থা না থাকা ইত্যাদি নানান কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অপসংগতি দেখা দিতে পারে।

৭। মানসিক সুস্থতা বা মানসিক কল্যাণ (Psychological Well-being) Well-being) কাকে বলে? মানসিক সুস্থতার বিভিন্ন প্রকারগুলি বা ধরনগুলি লেখো।

মানসিক সুস্থতা:

মানসিক সুস্থতা হল ব্যক্তির মানসিক ও আবেগগত সুস্থতার একটি অবস্থা, যেখানে তিনি মানসিক চাপ সামলাতে, ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তুলতে, জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে এবং ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম হন।

মানসিক সুস্থতার ধরন:

মানসিক সুস্থতার বিভিন্ন ধরনগুলি হল-

আত্মস্বীকৃতি: নিজের ক্ষমতা, দুর্বলতা ও জীবনকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করা।

ব্যক্তিগত উন্নতি: নিজেকে উন্নত করার প্রবণতা ও নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের ইচ্ছা।

জীবানের উদ্দেশ্য: জীবনের একটি স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ ও তা অর্জনের চেষ্টা।

পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ: নিজের জীবন ও পরিবেশের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখার দক্ষতা।

স্বাধীনতা: অন্যের মতামতের চাপে না পড়ে নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার ক্ষমতা।

সার্থক সম্পর্ক: পরিবার, বন্ধু ও সমাজের সঙ্গে সুস্থ সম্পর্ক বজায় রাখা।

উল্লিখিত ছয়টি দিক Ryff’s Psychological Well-being (রাইফের সাইকোলজিক্যাল ওয়েলবিং) মডেলের প্রধান অংশ, যা মানসিক স্বাস্থ্য ও সুখের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

৮। মননশীলতার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।

মননশীলতার বৈশিষ্ট্য:

মননশীলতার বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

অবিচারমূলক পর্যাবক্ষণ : ব্যক্তির নিজস্ব – অভিজ্ঞতাকে কোনোরকম বিচার না করে, পর্যবেক্ষণ করা হয় কিন্তু এগুলিকে বিচার করে দেখা হয় না সেগুলি গ্রহণযোগ্য হবে কি না। এটি হল অবিচারমূলক পর্যবেক্ষণ।

গ্রহণযোগ্যতা: এক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি অপর – একজনের সমস্ত বৈশিষ্ট্যগুলিকে সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করে। তবে যে বৈশিষ্ট্যগুলি মনমুগ্ধকর বা চিন্তা, অনুভূতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করে, সেগুলি গ্রহণযোগ্য নয়। গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে এটি বিচার-বিবেচনা করে দেখা দরকার। মননশীলতার ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।

নিরাপত্ত পর্যবেক্ষণ : যেসব বিষয়গুলির মধ্যে সৃজনশীল চিন্তাভাবনা রয়েছে এবং যথাযথভাবে আগ্রহ সৃষ্টি করে, সেগুলির প্রতি নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষণ বিষয়ের প্রতি মননশীলতার পক্ষে সহায়ক।

অ-ধারণাগত সচেতনতা: মাইন্ডফুলনেসের অর্থ হল দেখা ও পর্যবেক্ষণ করা। কোনো বিষয়ের প্রতি ধারণা তৈরি বা স্মৃতির মধ্যে নিয়ে আসা মাইন্ডফুলনেস নয়। এটি সম্পূর্ণরূপে বিষয়, ঘটনা বা বস্তু সম্পর্কে সচেতনতা।

বর্তমান অবস্থায় সচেতনতা: বর্তমান অবস্থার সঙ্গে সচেতনতা মাইন্ডফুলনেসের সঙ্গে যুক্ত। মাইন্ডফুলনেসের মাধ্যমে ব্যক্তি বর্তমান অবস্থার সঙ্গে নতুনভাবে নিজেকে যুক্ত করে।

জ-অহঙ্কারযুক্ত সতর্কতা : মাইন্ডফুলনেস ব্যক্তিকে সম্পূর্ণভাবে বিভিন্ন ধরনের পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে যুক্ত করে। যেমন- একজন ব্যক্তি পায়ে ব্যথা পেয়েছে, তবে মনোনিবেশ দ্বারা সে ওই ব্যাথার অস্তিত্ব অনুভব করবে। সে অপর ব্যক্তিকে এর সাথে যুক্ত না করেও এই ধরনের অনুভূতি পাবে।

পরিবর্তনজনিত সচেতনতা : একজন ব্যক্তির বিভিন্ন ধরনের অনুভূতি যেমন- সুখ, রাগ, দুঃখ, উদ্বেগ, ভয় যেগুলি বর্তমানে রয়েছে, সেগুলি অস্থায়ী। একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে এগুলি পরিবর্তনশীল। Mindfulness এর ক্ষেত্রে এই পরিবর্তনশীলতা সম্পর্কে সচেতনতা প্রয়োজন।

৯। ধ্যানের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও সংজ্ঞা দাও। ধ্যানের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

ধ্যানের অর্থ:

ধ্যানের ইংরেজি প্রতিশব্দ হল Meditation। Meditation শব্দটি ফরাসি শব্দ Meditacion থেকে এসেছে। আবার ল্যাটিন শব্দ Meditari থেকে, যার অর্থ চিন্তা করা, মনোযোগ দেওয়া, কল্পনা করা ইত্যাদি। আবার, ধ্যান শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ ধ্যা থেকেই, যার অর্থ মননিবন্ধকরণ। আবার মেডিটেশন শব্দটি দ্বারা ইসলামের সুফিবাদের আধ্যাত্মিক অনুশীলনকেও বোঝায়।

ধ্যানের সংজ্ঞা:

ধ্যান বা Meditation হল মনকে একাগ্র করার একটি মানসিক অনুশীলন, যা সাধারণত প্রশান্তি, আত্মজ্ঞান বা আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য করা হয়। এটি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিসাধনেও সহায়ক হতে পারে।

ধ্যানের বৈশিষ্ট্য:

ধ্যানের বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

স্বচ্ছতা: মনের স্বচ্ছতা ধ্যানের পক্ষে সহায়ক।

মনোযোগ : ধ্যান হল বিষয়ের প্রতি যথাযথ মনোযোগ।

স্বাসের শিথিলতা : শ্বাস-প্রশ্বাসের শিথিলতা ধ্যানের উপযোগী।

আরামদায়ক অবস্থা : ধ্যানের জন্য বসা বা শোওয়ার ক্ষেত্রে আরামদায়ক অবস্থান প্রয়োজন।

শান্ত পরিবেশ: ধ্যানের জন্য শান্ত জায়গা নির্বাচন করা দরকার।

বিচ্ছিন্নকরণ: ধ্যান করার সময় বিভিন্ন ধরনের চিন্তা, পরিবার-পরিজন, সমাজ প্রভৃতির থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করা প্রয়োজন।

ধ্যান ব্যক্তি তথা শিক্ষার্থীকে শান্ত এবং অন্তর্দৃষ্টিমূলক মনোভাব জাগ্রত করে। এটি ব্যক্তির মধ্যে ধনাত্মক প্রাক্ষোভিক সচেতনতা, দয়া, মায়া ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের অধিকারী করতে সাহায্য করে।

১০। মননশীল ধ্যান কাকে বলে? এর বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।

মননশীল ধ্যান:

মননশীল ধ্যান হল এমন একটি শান্তিপূর্ণ মানসিক অবস্থা যা শ্বাস, শরীরের সংবেদন ও অনুভূতির উপর মনোযোগ দিয়ে বর্তমান মুহূর্তের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলে, যার ফলে মানসিক প্রশান্তি আনা সম্ভব হয়। মননশীল ধ্যান ব্যক্তির মনোযোগের উন্নয়ন যেমন ঘটায়, তেমনই সামগ্রিক সুস্থতা বৃদ্ধির সহায়ক।

মননশীল ধ্যানের বৈশিষ্ট্য:

মননশীল ধ্যানের বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

মনোযোগ দান: কোনো বিষয় বা বস্তু বা ঘটনার প্রতি যথাযথ মনোযোগ দান করা। যার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হল শ্বাস, শারীরিক সংবেদন, চিন্তাভাবনা ও আবেগ।

বিচার-বহির্ভূত পর্যবেক্ষণ : চিন্তাভাবনা অনুভূতিগুলির ভালো দিক বা মন্দ দিক বিচার না করে যথাযথ পর্যবেক্ষণ করা অর্থাৎ মননশীল ধ্যান বিচার-বহির্ভূত পর্যবেক্ষণের সহায়ক।

বর্তমানের উপর গুরুত্ব আরোপ : অতীত বা ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে বর্তমান অবস্থার উপর গুরুত্ব প্রদান করা প্রয়োজন। কারণ অতীতের এমন বিষয় থাকতে পারে যা মনকে অশান্ত করে তুলতে পারে, আবার ভবিষ্যতের অহেতুক চিন্তাও মনকে অশান্ত করে তুলতে পারে। সেক্ষেত্রে বর্তমান বিষয়ের প্রতি যথাযথ মনোনিবেশ বা বিষয়কে কেন্দ্র করে ধ্যান সম্ভব নয়।

সচেতনতা বৃদ্ধি: নিয়মিত মননশীল ধ্যানের অনুশীলনের ফলে ব্যক্তি তার অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক জগত সম্বন্ধে সচেতন হয়, যা তার মধ্যে অস্থির বা অশান্ত ভাব দূর করতে সাহায্য করে।

শান্ত পরিবেশ: মননশীল ধ্যানের জন্য প্রয়োজন শান্ত পরিবেশ কারণ পরিবেশের বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খলা বা অশান্তি মানসিক স্থিরতা নষ্ট করে দেয়, যা মননশীল ধ্যানের অন্তরায়।

আরামদায়ক অবস্থা : মননশীল ধ্যানের সঙ্গে ধ্যানের প্রত্যক্ষ সংযোগ রয়েছে। তাই ব্যক্তির বসা শোওয়া ইত্যাদি বিষয়েও ধ্যানের মতোই মননশীল ধ্যানের ক্ষেত্রেও ব্যক্তির আরামদায়ক অবস্থান প্রয়োজন, যা শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি আনে।

১১। মননশীল ধ্যান (Mindfulness meditation) কীভাবে মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে? অথবা, মানব কল্যাণে ধ্যানের ভূমিকা কী?

মননশীল ধ্যান হল শরীর ও মনকে সুস্থ রাখার একটি কৌশল। এটি মনকে শান্ত রাখতে এবং বিভিন্ন প্রকার মানসিক সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।

নীচে মনস্তাত্ত্বিক সুস্থতায় মননশীল ধ্যানের গুরুত্ব আলোচনা করা হল-

মনকে শান্ত করা: মননশীল ধ্যান মনকে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে নিবিষ্ট করতে সাহায্য করে। এই ধ্যান মনকে শান্ত করে এবং মানসিক অস্থিরতা কমাতে সাহায্য করে।

চাপ লাঘব করতে সাহায্য করা : মননশীল ধ্যান শরীরের শিথিলতাকে দূর করে। এর ফলে স্ট্রেস হরমোনের উৎপাদন হ্রাস পায় এবং মনে শান্তির অনুভূতি তৈরি হয়।

দৃষ্টিভঙ্গির উন্নতি: মননশীল ধ্যান দৈহিক ও মানসিক সমস্যাগুলিকে বাইরে থেকে দেখতে সাহায্য করে এবং সেগুলির প্রতি ইতিবাচক চিন্তা করতে সাহায্য করে।

মানসিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি: মননশীল ধ্যান মানসিক স্থিরতা তৈরি করতে বা বজায় রাখতে সাহায্য করে। সঠিক পরিস্থিতিতে ও কর্তব্যে অনড় থাকতে সাহায্য করে এবং জীবনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও বিপত্তিগুলির সঙ্গে ভালোভাবে মোকাবিলা করতে সাহায্য করে।

আত্মসচেতনতা বৃদ্ধি: মননশীলতাকে উন্নীত এবং উৎসাহিত করার একটি প্রকৃষ্ট পন্থা হল মননশীল ধ্যান। এর ফলে ব্যক্তির নিজস্ব চিন্তাভাবনা, অনুভূতি এবং আবেগগুলির প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি পায়; সেই সঙ্গে অন্যের আবেগগুলিকে গুরুত্ব দিতে শেখে।

সম্পর্কের উন্নতি: ধ্যান যেহেতু আত্মসচেতনতা বৃদ্ধি করতে এবং অন্যের আবেগ অনুভূতিকে গুরুত্ব দিতে শেখায় তার ফলে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগের সম্পর্ক বৃদ্ধি পায় এবং পারস্পরিক গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়।

উদবেগ নিয়ন্ত্রণ: নিয়মিত ধ্যান করলে মানসিক উদবেগ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে মানসিক স্ট্রেস কমে যায় বা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

১২। উন্নত মানসিক কল্যাণের জন্য অনুশীলন কৌশলের ভূমিকা লেখো।

অনুশীলন:

প্রতিদিন নিয়মমাফিক দৈহিক অনুশীলনে শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত করা যায় এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যাসমাধানে সাহায্য করে। অনুশীলন বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন-

Aerobic অনুশীলন : এই অনুশীলন দেহে অক্সিজেনের চাহিদা পূরণ করে। 20 মিনিট ধরে এই । অনুশীলন করার পর শান্ত অবস্থায় থাকা দরকার। দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, হাঁটা, সাঁতার কাটা ইত্যাদির মাধ্যমে Aerobic অনুশীলন সম্ভব হয়।

Anaerobic অনুশীলন: যে অনুশীলনে শক্তির | জন্য অক্সিজেন দরকার হয় না, তাই হল Anaerobic অনুশীলন। এর মাধ্যমে শক্তি, পেশির বৃদ্ধি পায়। তবে এই ধরনের অনুশীলনে এক নাগাড়ে 2 মিনিটের বেশি করা উচিত নয়। যেমন- লাফ দড়ি, ওজন তোলা, স্প্রিনটিং ইত্যাদি।

Agility Training: যে ধরনের অনুশীলনের মাধ্যমে ব্যক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা জন্মায়, তাই হল Agility Training। যেমন- গতি বাড়ানো, গতি কমানো, দিক পরিবর্তন ইত্যাদি।

Stretching and Flexibility: যেসব অনুশীলনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পেশীর সংকোচন-প্রসারণ করা হয়, তাই হল Stretching and Flexibility। যেমন- যোগব্যায়াম, পাইলেটস, তাইচি ইত্যাদি। তবে এই অনুশীলনের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।

১৩। জীবন দক্ষতা বলতে কী বোঝো? ইহার প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করো।

জীবন দক্ষতা (Life Skills):

জীবন দক্ষতা হল পরিবর্তিত পরিবেশ এবং পরিস্থিতির সঙ্গে অভিযোজন ক্ষমতা এবং ইতিবাচক আচরণের দক্ষতা। জীবন দক্ষতা ব্যক্তির জীবনের চাহিদা এবং চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করতে, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ও অন্যদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে সাহায্য করে।

প্রয়োজনীয়তা:

জীবন দক্ষতার প্রয়োজনীয়তাগুলি নীচে আলোচনা করা হল-

সিদ্ধান্তগ্রহণ: জীবন দক্ষতা হল এমন কিছু দক্ষতা যা বিভিন্ন প্রকার বিকল্পগুলিকে পর্যবেক্ষণ করে, বিবেচনা করে এবং সেগুলির ভালো-মন্দ দিকগুলি বিচার করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে শেখায়।

সমস্যাসমাধান: জীবন দক্ষতা দৈনন্দিন জীবনের জটিল সমস্যাগুলিকে জটিল হিসেবে চিহ্নিত করতে এবং তাদের সুষ্ঠু সমাধান খুঁজে বের করতে শক্তি জোগায়।

প্রাক্ষোভিক নিয়ন্ত্রণ: প্রক্ষোভ হল মানুষের এক প্রকার উত্তেজিত অবস্থা। ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য এই প্রক্ষোভমূলক নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি। জীবন দক্ষতা এই আবেগ এবং বিভিন্ন প্রকার মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়কের ভূমিকা পালন করে।

সু-সম্পর্ক স্থাপন : এই দক্ষতা অন্য সকল ব্যক্তির সঙ্গে মধুর সম্পর্ক স্থাপন করতে শেখায় এবং সেগুলিকে মর্যাদার সঙ্গে টিকিয়ে রাখতে শেখায়।

জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন : জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন বলতে বোঝায় জীবনযাত্রার সামগ্রিক অবস্থার উন্নতি। যথা-স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থ, পরিবেশ, সামাজিক নিরাপত্তা প্রভৃতি। এগুলির উন্নতিতে জীবন দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

শিক্ষাগত ও পেশাগত সাফল্য : কী ধরনের শিক্ষাগ্রহণ করলে শিক্ষাজীবনে সাফল্য আসবে এবং কী ধরনের বৃত্তি গ্রহণ করলে পেশাগত সাফল্য আসবে সেই সমস্ত বিষয়ে সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষেত্রে জীবন দক্ষতার গুরুত্ব অপরিসীম।

১৪। WHO-এর মতে, জীবন দক্ষতা কী? জীবন দক্ষতা শিক্ষার শ্রেণিবিভাগ করো।

WHO-এর মতে, জীবন দক্ষতা:

জীবন দক্ষতা হল অভিযোজিত এবং ইতিবাচক আচরণের ক্ষমতা, যা ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা ও চ্যালেঞ্জগুলির সঙ্গে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম করে তোলে।

জীবন দক্ষতা শিক্ষার শ্রেণিবিভাগ:

জীবন দক্ষতার শিক্ষাকে প্রধানত তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

চিন্তন দক্ষতা: চিন্তন দক্ষতা হল এমন এক ধরনের দক্ষতা যা মস্তিষ্কের যুক্তিপূর্ণ বিকাশে সাহায্য করে। যুক্তিপূর্ণ বিকাশের জন্য প্রয়োজন বিশ্লেষণী দক্ষতা, সৃজনশীল চিন্তন দক্ষতা, সমস্যাসমাধানের দক্ষতা এবং সিদ্ধান্তগ্রহণের দক্ষতা।

সামাজিক দক্ষতা : সামাজিক দক্ষতা বলতে বোঝায় আন্তর ব্যক্তি দক্ষতা, যোগাযোগ দক্ষতা, নেতৃত্বদানের দক্ষতা, ব্যবস্থাপনার দক্ষতা, সমবেত প্রচেষ্টার দক্ষতা, দল গঠনের দক্ষতা ইত্যাদি।

প্রাক্ষোভিক দক্ষতা : যে দক্ষতার মাধ্যমে ব্যক্তিগত বিভিন্ন দক্ষতা যেমন- মানসিক চাপ, নিজস্ব অনুভূতি, প্রক্ষোভ, সহপাঠীদের চাপ, পারিবারিক চাপ ইত্যাদি মোকাবিলার ক্ষমতাই হল প্রাক্ষোভিক দক্ষতা।

১৫। জীবন দক্ষতা শিক্ষার উপাদানগুলি সম্পার আলোচনা করো।

জীবন দক্ষতা শিক্ষার উপাদানসমূহ

জীবন শৈলী শিক্ষার বিভিন্ন উপাদানগুলি বিভিন্ন শর্তের সঙ্গে যুক্ত। উপাদানগুলি হল যেমন-

খুঁটিনাটি চিন্তন: খুঁটিনাটি চিন্তন বলতে বোঝায় পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ, শনাক্তকরণ, ব্যাখ্যাকরণ ইত্যাদি।

আত্মসচেতনতা : নিজস্ব আচরণ, অনুভূতি সম্বন্ধে শনাক্তকরণ ক্ষমতা অর্থাৎ নিজের সম্বনে তিনটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে যথাযথ জ্ঞান যেমন- বৌদ্ধিক দৈহিক ও অনুভূতিমূলক দিক। এই ধরনের চিন্তা ব্যক্তিকে আত্মসচেতন করে তোলে।

যোগাযোগ: নিজেকে জীবনযুদ্ধে টিকিয়ে রাখতে গেলে যথাযথ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার।

সিদ্ধান্তগ্রহণ: সিদ্ধান্তগ্রহণ হল দুই বা ততোধিক কাজের শনাক্তকরণ দক্ষতা, যথাযথ যোগাযোগ ব্যবস্থা, ব্যক্তি বা শিক্ষার্থীকে কাজসমূহের পারস্পরিক শনাক্তকরণের পর সেগুলিকে যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করা, প্রয়োগ করা এবং তার ফলাফল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া।

সমস্যাসমাধানে : সমস্যাসমাধান দক্ষতা বলতে বোঝায় সমস্যা স্থিরীকরণ, সমস্যার বিবৃতি, উত্ত সমস্যার সুবিধা, অসুবিধাগুলি সম্বন্ধে ধারণা তৈরি এবং সমস্যাটির সমাধানমূলক উপায়গুলিকে যথোপযুক্তভাবে প্রয়োগ করা।

১৬। মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাজনিত শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় কয়েকটি জীবন দক্ষতামূলক কাজ সম্পর্কে লেখো।

মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাজনিত ব্যক্তিদের জন্য যে ধরনের কাজগুলি প্রয়োজন, সেগুলি হল-

অনুশীলন: বিভিন্ন ধরনের অনুশীলনধর্মী জীবন দক্ষতাসম্পন্ন কাজ মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। যেমন-ব্যায়াম, যোগচর্চা ইত্যাদি।

অঙ্কন: অঙ্কন হল একটি সৃজনশীল কাজ। সৃজনশীলতা জীবন দক্ষতা শিখনের ক্ষেত্রে এবং মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য প্রয়োজন।

নাচ: নাচ হল সৃজনশীল কাজ। নাচ ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমি কাটিয়ে মানসিক শান্তি আনতে সাহায্য করে।

লেখা: কবি, সাহিত্যিক প্রমুখ ব্যক্তিবর্গের বিভিন্ন ধরনের কাজ হল সৃজনধর্মী। এই ধরনের জীবন দক্ষতাধর্মী কাজ মানসিক শান্তি আনে।

বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার: বিভিন্ন ধরনের গান-বাজনার যন্ত্র যেমন- পিয়ানো, তবলা, এসরাজ, হারমোনিয়াম ইত্যাদি; ব্যায়ামের জন্য যন্ত্র যথা-বারবেল, ডাম্বেল ইত্যাদির ব্যবহার মানসিক ও দৈহিক সমস্যাসমাধানে কার্যকরী। এগুলি মনে প্রফুল্লতা আনে এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখে। তাই এই যন্ত্রসমূহ জীবন দক্ষতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১৭। শ্রেণিকক্ষে জীবন দক্ষতা শিক্ষা গড়ে তোলার জন্য ব্যবহৃত কয়েকটি কার্যাবলি সম্পর্কে লেখো।

চিঠিটি শ্রেণিকক্ষের বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপ শিক্ষার্থীদের মধ্যে জীবন দক্ষতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে। সেগুলি হল-

শ্রেণিকক্ষের আলোচনা: শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয় শিখনের ও অনুশীলনের সুযোগ করে দেওয়া যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপলব্ধিকরণে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শোনা, বলা, মতামত দেওয়া, সহানুভূতিপূর্ণ আচরণ ইত্যাদি দক্ষতার বিকাশ ঘটে এবং এগুলি জীবন দক্ষতা শিখনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ব্রেন স্টর্নিং: ব্রেন স্টর্মিং শিক্ষার্থীদের নতুন ধরনের ধারণা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ও তাড়াতাড়ি উৎপাদনে সাহায্য করে। শ্রেণিকক্ষের দলগত আলোচনার মাধ্যমে যে সৃজনশীল চিন্তাভাবনা উৎপন্ন হয়, সেগুলিকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করে, বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী র‍্যাঙ্কিং করা হয়। এই ব্রেন স্টর্মিং জীবন দক্ষতা বিকাশের জন্য প্রয়োজন।

ভূমিকা পালন (Role Play): সমগ্র শ্রেণিতে বিভিন্ন ধরনের কৌতুকপূর্ণ কাজে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা, সক্রিয়তা দরকার। ভূমিকা পালন অনুশীলনের দক্ষতা জীবন দক্ষতা সৃষ্টির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। নিজের থেকে আলাদা এমন কারও চরিত্র ও আচরণ অনুকরণ করা হল Role Play। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের Role Play সম্বন্ধে শিক্ষা দিলে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে অবস্থা অনুযায়ী Role Play করতে হয়। তাই Role Play জীবন দক্ষতা শিক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

গল্প বলা: শ্রেণিকক্ষে গল্প বলা এমন একটি কৌশল যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে খুঁটিনাটি চিন্তন দক্ষতা, সৃজনশীল দক্ষতা, গল্প লেখার দক্ষতা ইত্যাদি তৈরির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জীবনশৈলী দক্ষতা শিক্ষায় এটি কার্যকরী।

বিতর্ক: শ্রেণিকক্ষে বিভিন্ন ধরনের সমাজ কল্যাণমুখী, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, সমাজ ও সংস্কৃতি ইত্যাদি সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের বিতর্ক থেকে শিক্ষার্থীরা যেসব তথ্য ও অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করে, তা জীবন দক্ষতা শিক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

১৮। জীবন দক্ষতা শিক্ষার জন্য বিদ্যালয়ের কয়েকটি কর্মসূচি লেখো।

জীবন দক্ষতা শিক্ষার জন্য বিদ্যালয়ে যে ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত, সেগুলি হল-

প্রার্থনা: বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হওয়ার আগে বিভিন্ন ধরনের গান যেমন-আধ্যাত্মিক, দেশাত্মবোধক গান, মহাপুরুষদের বাণী পাঠ ইত্যাদির ব্যবস্থা থাকে, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সামাজিকতাবোধ, নৈতিকতাবোধ ইত্যাদি জাগ্রত হয় যা জীবন দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করে।

সহপাঠক্রমিক কাজের ব্যবস্থা: প্রতিটি বিদ্যালয়ে গান, আবৃত্তি, নাচ, ক্যুইজ ইত্যাদি সংস্কৃতিমূলক কার্য, আবার খেলাধুলা, ব্যায়াম ইত্যাদির মতো শারীরিক কার্যাবলির ব্যবস্থা রয়েছে, যেগুলি শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত কল্যাণ এমনকি সামাজিক কল্যাণেরও উপযোগী।

আলোচনা চক্র, সেমিনার: আলোচনা চক্র, সেমিনারগুলিতে প্রধানত বিভিন্ন ধরনের সচেতনতা সম্পর্কে (পরিবেশ, নারী নির্যাতন, স্বাস্থ্য, যৌনশিক্ষা সংক্রান্ত ইত্যাদি) আলোচনা হওয়া উচিত, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা গঠিত হয়।

সমাজসেবামূলক কাজ: বিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন ধরনের সমাজসেবামূলক কাজের উদ্যোগ নেওয়া উচিত, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সমবেতভাবে কাজের দক্ষতা, কমিউনিটির সঙ্গে যোগাযোগের দৃঢ়তা বিভিন্ন ধরনের সমস্যাসমাধানের দক্ষতা ইত্যাদি গড়ে ওঠে।

আরো পড়ুন : উচ্চমাধ্যমিক চতুর্থ সেমিস্টার বাংলা প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment