ভক্তিবাদী সাধিকা মীরাবাঈ-এর অবদান লেখো
ভক্তিবাদী সাধিকা মীরাবাঈ-এর অবদান
ষোড়শ শতকে ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ ভক্তিবাদী সাধিকা ছিলেন মীরাবাঈ (১৪৯৮-১৫৪৬ খ্রিস্টাব্দ)। তিনি গিরিধারী বা শ্রীকৃষ্ণের আরাধনায় জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
(1) পরিচয়: মীরাবাঈ-এর সঠিক পরিচয় নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কারও মতে তিনি রাজপুতানার শিশোদীয় রাজবংশের কূলবধূ ছিলেন, আবার কারও মতে তিনি ছিলেন রাজপুত রানা কুম্ভের স্ত্রী। এমনকি মীরাবাঈ-এর সময়কাল সম্পর্কেও বিতর্ক রয়েছে। তবে মোটামুটিভাবে মনে করা হয় মীরাবাঈ ছিলেন মেবারের রানা সংগ্রাম সিংহের পুত্রবধূ। তিনি অল্প বয়সেই গিরিধারীর প্রেমে বিভোর হয়ে ওঠেন এবং কৃষ্ণপ্রেমে মাতোয়ারা হয়ে রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করেন। তিনি মথুরা ও বৃন্দাবনে সাধুসঙ্গে কালাতিপাত করেছিলেন।
(2) ভাবাদর্শ: মীরাবাঈ বল্লভাচার্য এবং চৈতন্যের অনুগামী ছিলেন। তিনি মনে করতেন, ভালোবাসা ও ভক্তি থাকলে শ্রীকৃষ্ণকে লাভ করা সম্ভব। তাঁর প্রচারের ফলে সমগ্র রাজপুতানায় কৃষ্ণপ্রেমের জোয়ার আসে। নৃত্য ও গীতের মাধ্যমে মীরাবাঈ গিরিধারী গোপালকে পতিরূপে আরাধনা করেছেন। ব্রজভাষায় রচিত তাঁর ভক্তিমূলক গানগুলি মীরার ভজন নামে আজও ভারতীয় সাহিত্য ও সংগীতের ধারায় সমাদৃত হয়ে আসছে। মীরাবাঈ তাঁর পরিবারের তরফ থেকে শত প্রতিকূলতার সম্মুখীন হলেও কখনও মার্গচ্যুত হননি। তিনি সর্বদা কৃষ্ণের প্রতি অটল ভক্তিকে ধরে রেখেছিলেন। তাঁর প্রচারের প্রভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থেকেছিল। সমাজের নিম্নস্তরের বহু মানুষই এসময় ভক্তিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। সুতরাং মীরাবাঈ-এর জীবনকাহিনি ও মতাদর্শ আজও ভক্তি আন্দোলনের প্রেরণারূপে সমাদৃত হয়ে আসছে। প্রথিতযশা গবেষক কে এন চিটনিস-এর মতে-তিনি ছিলেন এমন এক প্রতিভাবান কবি, যিনি ব্রজভাষা, রাজস্থানি এবং গুজরাটিতে অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক ও অটল নিষ্ঠার বেশকিছু জনপ্রিয় ভক্তিমূলক কবিতা রচনা করেন। (“She was also a gifted poetess who composed in Virjabhasa, Rajasthani and Gujrati several popular devotional poems of absorbing interest and enduring devotion.”)
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর