টীকা লেখো: আলবার ও নায়নার সম্প্রদায় অথবা, আলবার ও নায়নার কারা
আলবার সম্প্রদায়
আলবার সাধকরা ছিলেন বিষ্ণুর উপাসক। তামিল আল কথার অর্থ নিজেকে নিমজ্জিত করা। অর্থাৎ, আলবার তিনি, যিনি ঈশ্বরের অগণিত গুণাবলির সমুদ্রে নিজেকে নিমজ্জিত করেন।
(1) আলবার সাধক: ঐতিহ্য অনুসারে তামিলভূমিতে মোট বারোজন আলবার সাধক জন্ম নিয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে অনেকেই সমাজের নিম্নশ্রেণি থেকে উঠে এসেছিলেন। বৈয়ব ভক্তিবাদ প্রচারক এই আলবার সাধকরা হলেন- পোইগই বা সরযোগী, ভূতাত্তা বা ভূতযোগী, যোই বা মহদযোগী, পেরিয়াঢ়বার বা বিষুচিত্ত, কুলশেখর, তিরুমঢ়িশাই বা ভক্তিসার, নম্মাঢ় বা শকটকোপ, মধুরকবি, আন্ডাল বা গোদা, তোণ্ডরডিপ্পোরি, তিরুপ্পন বা যোগীবাহন এবং তিরুমঙ্গই বা পরকাল। এঁদের মধ্যে আন্ডাল ছিলেন মহিলা আলবার (বিষুচিত্তের কন্যা), যিনি নিজেকে গোপীরূপে কল্পনা করে বিষু রঙ্গনাথের ভজনা করতেন। আন্ডালকে দক্ষিণের মীরাবাঈ বলে আখ্যায়িত করা হয়। তিরুপ্পাভাই হল তাঁর রচিত একটি প্রখ্যাত গ্রন্থ।
(2) ভক্তিবাদী প্রচার: আলবার সাধকগণ গীত রচনা ও প্রচারের মাধ্যমে বৈষ্ণব ধর্মকে জনমানসে ছড়িয়ে দিতেন। প্রাচীন তামিল সাহিত্য সংকলন নালাইরা দিব্য প্রবন্ধম থেকে আলবার সাধকদের সংগীতচর্চার বর্ণনা মেলে। আলবার সাধকদের সংগীতে লীলাকীর্তন স্থান পেয়েছে।
নায়নার সম্প্রদায়
ভগবান শিবের উপাসক নায়নার সম্প্রদায় আলবারদের মতোই দক্ষিণ ভারতে ভক্তিবাদের প্রসারে ছিল অগ্রণী। এঁরা মূলত ভক্তিবাদী শৈব ধর্মের প্রচারক ছিলেন।
(1) নায়নার সাধক: ঐতিহ্য অনুসারে প্রায় ৬৩ জন নায়নার সাধকের নাম পাওয়া যায়। এই সকল সাধকদের মধ্যে উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণের পাশাপাশি তাঁতি, জেলে, ব্যাধ, ধোপা প্রভৃতি নিম্নবর্গের মানুষেরও অধিষ্ঠান ছিল। তিরুমুলর ছিলেন এঁদের মধ্যে সর্বাধিক খ্যাতিমান। এ ছাড়া অপ্পর, সম্বন্দর, সুন্দরর, মাণিক্যবাচকর ছিলেন উল্লেখযোগ্য। নায়নার সাধকদের রচনাগুলিকে সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করেন শৈব ধর্মগুরু নম্বি অণ্ডার নম্বি। পেরিয়াপুরম সাহিত্যে ৬৩ জন শৈবসাধকের জীবনী ও কীর্তিকলাপ লিপিবদ্ধ রয়েছে।
(2) ভক্তিবাদী প্রচার: নায়নার শৈবসাধক সম্প্রদায় তামিল ভাষায় ভক্তিগীতি রচনা করে শৈব ধর্মকে এক আধ্যাত্মিক ভাববিশিষ্ট ধর্মচেতনা হিসেবে জনগণের মাঝে প্রচার করেন। শৈব নায়নার সাধক সুন্দরর রচিত ভক্তিগীতিগুলি জনমানসে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে।
মূল্যায়ন
আলবার ও নায়নার সাধকেরা নানান অঞ্চল পরিভ্রমণ করেন এবং সংগীতের মাধ্যমে ভক্ত ও ভগবানের মধ্যে প্রত্যক্ষ ভালোবাসার সম্পর্কের প্রচার করেন। অনেকের মতে, এই সাধকরা সমাজে প্রচলিত জাতি ভেদাভেদের বিরুদ্ধেও সোচ্চার ছিলেন। লক্ষণীয় যে, এই সাধকেরা নানা সামাজিক শ্রেণি থেকে উঠে এসেছিলেন। তাই এঁরা জাতিপ্রথার প্রতিবাদ করেন এবং ব্রাহ্মণদের সামাজিক আধিপত্যের অবসান দাবি করেন।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর