ভক্তিবাদের উৎপত্তি কীভাবে হয়
অথবা, ভক্তিবাদের উৎস লেখো
ভক্তিবাদের উৎপত্তি/উৎস
ভারতবর্ষে তুর্কিদের আগমনের বহু আগে থেকেই ভক্তিবাদী চিন্তাধারার সূচনা হয়েছিল। বেদে ব্রহ্মাকে সৃষ্টির সূত্র ও আনন্দের উৎস বলা হয়েছে। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় প্রপত্তি, অর্থাৎ ঈশ্বরের কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের কথা বলা হয়েছে। সেখানে শ্রীকৃষ্ণ বলছেন, ‘সকল ধর্ম ত্যাগ করে আমাকে স্মরণ করো, আমিই মুক্তির পথ দেখাবো।’ এই বাণীকে উপজীব্য করেই প্রথমে কৃষ্ণ ও পরে রামচন্দ্র-কে কেন্দ্র করে ভক্তিবাদের প্রসার ঘটে। দেবতার গুণসম্পন্ন কৃষ্ণ ও রাম মানবরূপে মানুষের মাঝে আবির্ভূত হন। পূজার্চনার পরিবর্তে মানুষ তাঁদের ভক্তিপূর্ণ প্রেম ও আবেগ দিয়ে হৃদয়ে স্থান করে নেয়। এইভাবে আসে ভক্তিবাদের ধারণা।
(1) দক্ষিণ ও উত্তর ভারতে ভক্তিবাদ: খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকে বৈষ্ণবআলবার (আঢ়বার) এবং শৈব নায়নার সাধকদের নেতৃত্বে দক্ষিণ ভারতে ভক্তিবাদের সূচনা ও প্রসার ঘটে। সপ্তম শতকে তামিলনাডুতে ভক্তিবাদ জনপ্রিয়তা পায়। পরবর্তীতে চতুর্দশ শতক নাগাদ ভক্তিবাদের ঢেউ দক্ষিণ থেকে উত্তর ভারতে আছড়ে পড়ে।
(2) দক্ষিণ ভারত ও উত্তর ভারতের স্বতন্ত্র প্রেক্ষাপট: দক্ষিণ ভারত ও ত্তর ভারতের রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট ছিল স্বতন্ত্র। কাজেই ভারতের দুই প্রান্তে ভক্তিবাদের প্রকৃতিও হুবহু এক ছিল না। আর্য সংস্কৃতির বিলম্বিত প্রভাবের কারণে দক্ষিণ ভারতে যেমন বর্ণভেদের তীব্রতা ছিল না, তেমন ব্রাহ্মণদের সংখ্যা ও সামাজিক প্রভাব ছিল ক্ষীণ। অন্যদিকে দক্ষিণ ভারতে জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মের তীব্র প্রভাব ছিল। বস্তুত, সমাজ ও রাজনীতিতে বৌদ্ধ ও জৈনদের প্রভাব শিথিল করার উদ্দেশ্যে দক্ষিণ ভারতে ভক্তিবাদ প্রসার লাভ করে। অন্যদিকে উত্তর ভারতে সামাজিক ক্ষেত্রে বৈষম্য ছিল অসহনীয়। সুতরাং সেখানে ব্রাহ্মণ্যবাদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে এবং সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভক্তিবাদী আন্দোলনের প্রসার ঘটেছিল।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর