কে জেসুইট সংঘের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন? প্রতি-ধর্মসংস্কারে তাঁর অবদান লেখো

কে জেসুইট সংঘের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন? প্রতি-ধর্মসংস্কারে তাঁর অবদান লেখো

অথবা, ইগনেসিয়াস লয়োলার কার্যকলাপ ক্যাথলিকবাদকে কতটা প্রাণশক্তি দিয়েছিল

কে জেসুইট সংঘের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন? প্রতি-ধর্মসংস্কারে তাঁর অবদান লেখো
কে জেসুইট সংঘের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন? প্রতি-ধর্মসংস্কারে তাঁর অবদান লেখো

জেসুইট সংঘের প্রতিষ্ঠাতা

ইউরোপে ষোড়শ শতক থেকে ক্যাথলিক চার্চ নব উদ্যমে তাদের চিরাচরিত ব্যবস্থার সংস্কারে ব্রতী হয়। ধর্মসংস্কার আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ায় সংগঠিত এই প্রতি-ধর্মসংস্কার আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন স্পেনীয় পুরোহিত ও ধর্মতত্ত্ববিদ ইগনেসিয়াস লয়োলা (Ignatius of Loyola, ১৪৯১-১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দ)। তিনি জেসুইট সংঘের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

প্রতি-ধর্মসংস্কারে ইগনেসিয়াস লয়োলার অবদান 

(1) প্রথম জীবন: ইগনেসিয়াস লয়োলা ছিলেন একাধারে বিশিষ্ট ধর্মজ্ঞানী এবং দার্শনিক। ১৪৯১ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্পেনের বাস্কি (Basque) অঞ্চলে লয়োলার দুর্গে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্পেনীয় সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে যুদ্ধে অঙ্গহীন হয়ে পড়লে ইগনেসিয়াস লয়োলা সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন এবং পরবর্তীতে ধর্মসংস্কারের কাজে আত্মনিয়োগ করেন।

(2) ‘Society of Jesus’ প্রতিষ্ঠা: প্রোটেস্ট্যান্টবাদকে কিছুটা প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে লয়োলা ১৫৩৪ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসে Society of Jesus নামক একটি সংস্থা স্থাপন করেন। তিনি প্রাথমিকভাবে স্পেনের মুসলিমদের মধ্যে ধর্মপ্রচার করতে আগ্রহী হলেও তুরস্কের সঙ্গে ভেনিসের যুদ্ধ লাগলে তিনি রোমের দিকে চলে আসেন এবং তাঁর সংগঠন যাতে পরিষেবা দিতে পারে সেই মর্মে পোপের কাছে Society of Jesus-এর প্রতীক আবেদন জানান। Society of Jesus ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে পোপের স্বীকৃতি পায়। পোপ তৃতীয় পল এই প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতি জানানোর সময় ‘Regimini militantis Ecclesiae’ বা জঙ্গিচার্চ সংগঠনের জন্য উৎসর্গীকৃত সম্প্রদায় নামে অভিহিত করেন। এই সংস্থার প্রচারকগণ জেসুইট (Jesuit) নামে পরিচিত হন।

  • জেসুইটদের মতাদর্শ ও পালনীয় কর্তব্য: ইগনেসিয়াস লয়োলা এবং তাঁর অনুগামী জেসুইটগণ সংশোধিত ক্যাথলিক চার্চ সংগঠনের হৃত ক্ষমতা পুনরুদ্ধার ও আধিপত্য বিস্তার করতে চেয়েছিলেন। এই কারণে তাঁরা স্থাপন করেন একাধিক বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়। যাজক সম্প্রদায় এবং তরুণরা এইসব স্থানে নব্য ক্যাথলিকবাদে দীক্ষাগ্রহণ করতেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জেসুইট সম্প্রদায়ের সদস্য হওয়ার অন্যতম যোগ্যতা ছিল মানবতাবাদী সাহিত্য ও দর্শনশাস্ত্রে জ্ঞান, চিকিৎসাকেন্দ্রে সেবামূলক কাজের ইচ্ছা ও দক্ষতা।ক্যাথলিক সদ্ধর্মের প্রয়োজনে আত্মবিসর্জন ও যন্ত্রণাভোগের মানসিক প্রস্তুতি থাকা ছিল জেসুইট প্রচারকদের অন্যতম গুণ। পোপের প্রতি ছিল তাদের অচলা ভক্তি। প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মকে প্রতিহত করার কাজে পোপের অনুগত সৈনিক হিসেবে এসব ক্ষেত্রে মৃত্যুকে বরণ করতেও সদাপ্রস্তুত থাকা ছিল বাধ্যতামূলক। ১৫৩০-এর দশকে রচিত Spiritual Excercises নামক গ্রন্থে লয়োলা আত্মশুদ্ধি এবং আত্মাকে নির্মল রাখার পথনির্দেশ দিয়েছেন।
  • সোসাইটি তাফ জেসাস-এর অভ্যন্তরীণ সংগঠন : সোসাইটি অফ জেসাস সংস্থাটি ছিল সামরিক আদর্শে গঠিত। এর প্রধান ছিলেন জেনারেল। তাঁকে সহায়তার জন্য ৬ জন সদস্যের একটি কাউন্সিল, প্রদেশে প্রভিন্সিয়াল, ব্রাদার, ফাদার, পণ্ডিত, সাধারণ কর্মচারী নিযুক্ত থাকতেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য প্রদর্শন ছিল জেসুইটদের সামরিক নিয়মানুবর্তিতার একটি প্রধান অঙ্গ। এঁরা দীক্ষাশেষে চিকিৎসাকেন্দ্র ও দরিদ্র মানুষদের সেবায় নিয়োজিত থাকতেন।
  • জেসুইটদের ধর্মপ্রচার: জেসুইট স্বেচ্ছাসেবকেরা নানা নির্যাতন, এমনকি মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মমতের বিরুদ্ধে ক্যাথলিক মতবাদকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার অভিযান চালান। সোসাইটি অফ জেসাস সংস্থার সদস্যরা ক্যাথলিক সৈন্যদের সংগঠিত করেন। এই অনুগত, সুশৃঙ্খল ও সাহসী সৈন্য নিয়ে প্রোটেস্ট্যান্ট-বিরোধী লড়াইয়ে পোপ প্রাণশক্তি ফিরে পেয়েছিলেন।

ভারতে জেসুইটগণ: ভারতবর্ষে পোর্তুগাল অধিকৃত অঞ্চলে ক্যাথলিক ধর্মপ্রচারের কাজেও জেসুইটরা অংশ নেন। এই কাজে নেতৃত্ব দেন লয়োলার সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সহযোগী সেন্ট জেভিয়ার (Francis Xavier)। ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দ থেকে তিনি ভারতকে কেন্দ্র করে ধর্মপ্রচারের কাজ চালান। তাঁর ধর্মপ্রাণতায় আকৃষ্ট হয়ে বহু অ-খ্রিস্টানও ক্যাথলিক ধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁর স্মৃতিতেই সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ স্থাপিত হয় (১৮৬০ খ্রি.)। ইগনেসিয়াস লয়োলার বিশুদ্ধকরণ প্রচেষ্টা প্রোটেস্ট্যান্টদের মোকাবিলায় রোমান ক্যাথলিকদের যথেষ্ট সাহায্য করেছিল। তাঁর অনুগামী জেসুইটদের প্রচেষ্টাতেই দক্ষিণ জার্মানি, বোহেমিয়া এবং পোল্যান্ডের বহু মানুষ পুনরায় ক্যাথলিকবাদে দীক্ষা নিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment