প্রোটেস্ট্যান্টদের বিভিন্ন শাখাগুলি কী ছিল
ইউরোপে ষোড়শ শতকের প্রথমার্ধে মার্টিন লুথারের সুযোগ্য নেতৃত্বে প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। এই আন্দোলনের প্রভাবেই প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও উপশাখার উদ্ভব এবং তার বিকাশ ঘটে।
প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মীয় মতধারার বিভিন্ন শাখা
(1) লুথেরান শাখা: লুথেরান (Lutheran) শাখার প্রতিষ্ঠাতা হলেন স্বয়ং মার্টিন লুথার। এই শাখার অনুগামী খ্রিস্টানরা শুধুমাত্র বাইবেলের ধর্মীয় কর্তৃত্বকে স্বীকার করেন এবং বিশ্বাস করেন যে, বিশ্বাসের মাধ্যমেই মানুষ মুক্তিলাভ করে।
(2) ক্যালভিনিস্ট শাখা: ধর্মসংস্কারক জন ক্যালভিন ছিলেন ক্যালভিনবাদ (Calvinism) তথা ক্যালভিনিস্ট (Calvinist) শাখার প্রবর্তক। এই ক্যালভিনিস্টগণ Pre Destination বা পূর্ব-নির্ধারণ মতবাদকে অনুসরণ করেন। তাঁদের মতে, কোনও ব্যক্তির মুক্তি ঘটবে, নাকি নরকপ্রাপ্তি হবে, তা অনেক আগে থেকেই ঈশ্বরকর্তৃক পূর্ব-নির্ধারিত। ক্যালভিনিস্টরা সহজ-সরল জীবনাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন।
(3) প্রেসবিটেরিয়ান শাখা: স্কটিশ ধর্মতত্ত্ববিদ ও সংস্কারক জন নক্স (John Knox)-এর দ্বারা প্রেসবিটেরিয়ান (Presbyterian) শাখাটি প্রভাবিত। এই শাখায় চার্চের শাসনব্যবস্থা মূলত নির্বাচিত প্রেসবিটার বা বয়স্কদের একটি কাউন্সিল দ্বারা পরিচালিত হয়।
(4) অ্যাংলিকান শাখা: ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম হেনরির উদ্যোগে অ্যাংলিকান চার্চ নির্মিত হয়। এই চার্চব্যবস্থা থেকেই বিকশিত হয় অ্যাংলিকান (Anglican) শাখাটি। এই শাখার অনুগামীগণ ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্ট উভয়ের মতবাদকেই আংশিকভাবে অনুসরণ করেন। অর্থাৎ, এঁরা ক্যাথলিক চার্চের কর্তৃত্ব থেকে মুক্তি চাইলেও নানান ক্যাথলিক রীতিনীতিকে বজায় রেখেছিলেন। এঁদের কাছে চার্চের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হলেন স্বয়ং রাজা।
(5) মেনোনাইটস শাখা: মেনোনাইটস (Mennonites) শাখার উৎস পাওয়া যায় ইউরোপে সংঘটিত অ্যানাব্যাপটিস্ট আন্দোলনের মধ্যে। মেনো সিমন্স (Menno Simons)-এর নামানুসারে এই সম্প্রদায়ের নামকরণ করা হয়েছে। সুইটজারল্যান্ড, জার্মানি ও নেদারল্যান্ডে উৎপত্তি হওয়া এই শাখার অনুগামীরা শান্তিবাদ, সহজ-সরল জীবনযাপন ও সমাজসেবার আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন।
(6) কোয়েকার শাখা: রিলিজিয়াস সোসাইটি অফ ফ্রেন্ডস (Religious Society of Friends) বা কোয়েকার (Quakers) শাখার অনুসারীগণ মনে করেন, প্রত্যেক মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের আলো দেখা যায়। এঁরা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, রীতিনীতি এবং পুরোহিততন্ত্রের বিরোধিতা এবং নীরব উপাসনা, সকল মানুষের মধ্যে সমতা, সত্যবাদিতা ও শান্তিবাদে বিশ্বাস করেন। উপরোক্ত শাখাগুলি ছাড়াও মেথডিস্ট (Methodist), পেন্টেকোস্টালিজম (Pentecostalism), অ্যাডভেন্টিস (Adventis) ইত্যাদি খ্রিস্ট ধর্মের শাখা তাদের মতাদর্শ, আচার-অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেছে।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর