জন ক্যালভিনের মতাদর্শ কী ছিল লেখো

জন ক্যালভিনের মতাদর্শ কী ছিল লেখো

জন ক্যালভিনের মতাদর্শ কী ছিল লেখো
জন ক্যালভিনের মতাদর্শ কী ছিল লেখো

ধর্মসংস্কারক জন ক্যালভিনের মতাদর্শগত দিকসমূহ 

ষোড়শ শতকের ইউরোপীয় ধর্ম ও রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে জন ক্যালভিন ছিলেন অন্যতম একজন বিশিষ্ট চিন্তাবিদ। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ, ধ্রুপদি সাহিত্য এবং সন্তদের জীবনী পাঠ করে তিনি চার্চ সংস্কারের কথা ভাবেন। রাষ্ট্রতত্ত্ব বিষয়ে ক্যালভিনের মতাদর্শের বিভিন্ন দিকগুলি নিম্নরূপ-

(1) খ্রিস্টান ধর্মের পবিত্রকরণ: জন ক্যালভিন ছিলেন সহজ-সরল জীবনাদর্শে বিশ্বাসী যুক্তিবাদী এক পণ্ডিত। তৎকালীন চার্চ ও যাজকতন্ত্রের দুর্নীতির বিরোধিতা করে তিনি খ্রিস্ট ধর্মকে পূর্বের পবিত্রতার সময়ে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে উদ্যোগী হন। তিনি মনে করতেন যে, মানুষের পবিত্র ব্যক্তিজীবনই হল পবিত্র সমাজজীবনের বুনিয়াদ। উপাসনা, তীর্থযাত্রা বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের দ্বারা এবং ঈশ্বর অনুগ্রহের দ্বারাই মানুষের আত্মার মুক্তি ঘটে।

(2) পূর্ব-নির্ধারণবাদ: ম্যাকিয়াভেলির (Machiavelli) মতোই মানুষ সম্পর্কে ক্যালভিনের ধারণাও ছিল হতাশাব্যঞ্জক। তাঁর চোখে মানুষ পাপী, দুর্বৃত্ত ও কপট। তাই মানুষ নিজের জীবনকে নিয়ন্ত্রণের অধিকারী নয়। মানুষের জীবন ঈশ্বর কর্তৃক পূর্ব-নির্ধারিত ও পূর্ব-পরিকল্পিত। ক্যালভিনের এই তত্ত্ব পূর্ব-নির্ধারণবাদ (Pre Destination) বা অদৃষ্টবাদ নামে পরিচিত। এর মূল অর্থ হল, ঈশ্বর সর্বজ্ঞ ও সর্বদর্শী।

(3) ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ: ক্যালভিনের মতে, মানুষ দুটি নিয়মের অধীন- আধ্যাত্মিক বা ধর্মীয় নিয়ন্ত্রণ এবং পার্থিব বা রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ। প্রথমটি থেকে মানুষ সৎ শিক্ষা, সরল জীবন ও সদ্ধর্মের পথে চালিত হবে। ঈশ্বরের বাণী ও শিক্ষা এই জীবন নিয়ন্ত্রণের শেষ দফা। দ্বিতীয় নিয়ন্ত্রণ মানুষের পার্থিব জীবনকে শৃঙ্খলার পথে চালিত করবে।

(4) অ-প্রতিরোধ তত্ত্ব: প্রথমে ক্যালভিন লুথারের অ-প্রতিরোধ তত্ত্ব (Doctrine of absolute non-resistance)-এ বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর মতে, ঈশ্বরের অনুগ্রহে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরোধিতা উন্মত্ততা ও বর্বরতার নামান্তর। কারণ, রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে ঈশ্বর থেকে, শাসক হলেন ঈশ্বরেরই প্রতিনিধি। সুতরাং রাষ্ট্র নির্মম হলেও, তার বিরোধিতা কাম্য নয়। পরে তিনি এই মতের কিছু সংশোধন করেন। ফ্রান্সে তাঁর অনুগামী হিউগেনট (Hugenot)-রা সরকারি নির্যাতনের শিকার হলে ক্যালভিন প্রতিরোধ তত্ত্বতে আস্থা জানান। তবে সাধারণ মানুষ নয়, বিধর্মী ও অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে প্রিন্সেস অফ ব্লাড (অভিজাত)-রা পার্লামেন্ট দ্বারা সমর্থিত হয়ে রাজার স্বেচ্ছাচার প্রতিরোধ করলে তা বৈধ বিবেচিত হবে।

মূল্যায়ন

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ক্যালভিনের উপর ইরাসমাসের গ্রিক টেস্টামেন্ট এবং লুথারের ধর্মোপদেশের প্রভাব পড়েছিল। প্রথমদিকে এই লুথারবাদ চরম রক্ষণশীল প্রকৃতির হলেও পরবর্তীতে তা ক্রমে র‍্যাডিক্যাল হয়ে ওঠে। আর এই র‍্যাডিক্যাল লুথারবাদের প্রভাব যখন ক্যালভিনের কিছু অনুগামীদের উপর পড়ল, তখন তাঁরাও সেই উদ্দীপনায় অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের অধিকারকেই অগ্রাধিকার দিলেন। ক্যালভিনবাদ ফ্রান্সে বুরবো স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে বুর্জোয়া অভ্যুত্থানকে মদত জুগিয়েছিল। এক্ষেত্রে বুর্জোয়া শ্রেণির লক্ষ্য ছিল স্বৈরতন্ত্রের অবসান এবং ক্যাথলিকবাদের চূড়ান্ত প্রভাবের মূলোচ্ছেদ।  আর এইভাবেই র‍্যাডিক্যাল ক্যালভিনীয়বাদ হিউগেনট, পিউরিটান, প্রেসবিটারিয়ানদের মাধ্যমে ইউরোপে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে থাকে।

আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment