প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলনে ফিলিপ মেলাংকথনের ভূমিকা কী ছিল
প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলনে ফিলিপ মেলাংকথনের ভূমিকা
লুথারবাদের বিবর্তনের প্রথম পর্যায়ে মার্টিন লুথারের বেশকিছু ঘনিষ্ঠ অনুচর প্রচারাভিযানের মাধ্যমে এক রাজনৈতিক মতাদর্শ তুলে ধরতে প্রয়াসী – হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যেই অন্যতম ছিলেন ফিলিপ মেলাংকথন (Philip Melanchthon, ১৪৯৭-১৫৬০ খ্রিস্টাব্দ)। মার্টিন লুথারের অন্যতম অনুগামী এই বিশিষ্ট জার্মান নেতা শান্ত, সংযত ও উদারপন্থী এক পণ্ডিত, যাঁর মধ্যে লুথারের মতো দোদুল্যমানতা ছিল না। সংস্কার আন্দোলনে তাঁর বিশেষ অবদান হল, স্বাভাবিক আইন (Natural Law) সম্পর্কিত ধারণার প্রচার ও প্রতিষ্ঠা।
(1) প্রথম জীবন: মেলাংকথন শৈশব থেকেই ছিলেন মেধাবী। ক্রমে তিনি ল্যাটিন ও গ্রিক ভাষায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন এবং হাইডেলবার্গ এবং টুবিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। মানবতাবাদী চিন্তাধারা ও দর্শনে তাঁর ছিল অগাধ পাণ্ডিত্য।
(2) মতবাদ: মেলাংকথনের মতে, স্বাভাবিক আইন হল সেই সকল নীতি, যা ঈশ্বর মানুষের মনে বপন করেছেন। এই নীতির অন্যতম দিকগুলি – হল- ঈশ্বরে বিশ্বাস এবং তাঁর ইচ্ছা সম্পর্কে সচেতনতা, ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্য, রাষ্ট্রের মধ্যে ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতিফলন। তিনি বিখ্যাত The Tenth Article রচনার মাধ্যমে স্বাভাবিক আইন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন। তাঁর মতে, রাজা ঈশ্বরের প্রতিনিধি। তাই তিনি রাষ্ট্রচালনার পাশাপাশি স্বাভাবিক আইনেরও রক্ষক। চার্চ বিপথগামী হলে রাষ্ট্র চার্চকে নিয়ন্ত্রণ করার অধিকারী। তাই রাজার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ সকলের অবশ্য কর্তব্য।
(3) মেলাংকথনের বক্তব্যের সীমাবদ্ধতা: মেলাংকথনের বক্তব্যের অন্যতম দুর্বলতা এটাই যে, প্রোটেস্ট্যান্টবাদী রাজা রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে অনাচারী হলে কীভাবে তার প্রতিবাদ করা হবে, এ বিষয়ে তিনি নীরব থেকেছেন।
মূল্যায়ন
তবে সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, লুথারের মতবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে ইউরোপে নানা স্থানে যেসকল উদারমনা সংস্কারক প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, মেলাংকথন ছিলেন তাঁদের মধ্যে অগ্রণী ব্যক্তিত্ব। তাঁর রচিত Loci Communes গ্রন্থটি প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মতত্ত্বের মৌলিক পাঠ্য হিসেবে সমাদৃত হয়েছে।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর