জার্মানিতে লুথারবাদের সাফল্যের কারণগুলি কী ছিল
জার্মানিতে লুথারবাদের সাফল্যের কারণসমূহ
জার্মানিতে ষোড়শ শতকে মার্টিন লুথারের প্রবর্তিত লুথারবাদ ও প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মসংস্কারের সাফল্য ছিল ইউরোপের ইতিহাসের এক তাৎপর্যমণ্ডিত ঘটনা। বেশকিছু বিষয় এই অভূতপূর্ব সাফল্যের পশ্চাৎপটে দায়ী ছিল। যথা-
(1) লুথারের ব্যক্তিত্ব: মার্টিন লুথারের অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্ব লুথারবাদীদের আন্দোলনকে সাফল্যমণ্ডিত করেছিল। লুথারের নিজ বক্তব্যে অগাধ বিশ্বাস, সাহস, জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষমতা, এইসব বিষয়ই জনমানসকে লুথারবাদের প্রতি আকৃষ্ট করেছিল।
(2) রাজনৈতিক কারণ: লুথারের প্রতিষ্ঠানবিরোধী মনোভাবের প্রতি সম্রাট প্রথম ম্যাক্সিমিলিয়ন (Maximilian I) এবং পোপের প্রতিক্রিয়া তেমন তীব্র ছিল না। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত থাকার কারণে রক্ষণশীল শক্তিসমূহ কখনোই চূড়ান্তভাবে লুথার ও তাঁর রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকদের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করতে পারেনি। এ ছাড়া জার্মান স্বশাসিত নগর ও বিভিন্ন রাজ্যের শাসকগণ ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির অনুসারী। এর সঙ্গে পোপ ও শাসনযন্ত্রের উপর ইতালীয় আধিপত্যবিরোধী মনোভাব তো ছিলই। এসবের ফলস্বরূপ এই শাসকেরা অধিকাংশই স্বতঃস্ফূর্তভাবে লুথারের মতবাদকে গ্রহণ করেছিলেন।
(3) জাতীয় রাষ্ট্রের ধারণা দান: ‘জার্মানি জার্মানদের জন্য’-এই শ্লোগান দিয়ে লুথার জনসমর্থনকে নিজ অনুকূলে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। কারণ, জার্মানবাসী যেমন তাদের সিংহাসনে একজন স্পেনীয়কে দেখতে চায়নি, তেমনই ইতালীয় পোপের আনুগত্য স্বীকারেও তাদের ছিল অনীহা। তাই লুথার এই আন্দোলনকে বিদেশিদের বিরুদ্ধে জাতীয় আন্দোলনে পরিণত করতে প্রয়াসী হয়েছিলেন। পরিশেষে বলা যায়, জার্মানিতে প্রাতিষ্ঠানিক চার্চব্যবস্থার বিরুদ্ধে। লুথারের মতবাদ মানুষকে যেভাবে উদ্দীপিত করেছিল, তা থেকে প্রেরণা নিয়েই ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলিতে প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলন ধর্মীয় সংস্কারের পথকে সুগম করেছিল।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর