মার্টিন লুথারের মতাদর্শ সম্পর্কে যা জানো লেখো
ষোড়শ শতকে জার্মানি তথা সমগ্র ইউরোপে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ক্ষেত্রে যিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন, তিনি হলেন মার্টিন লুথার। পবিত্র গ্রন্থ ‘বাইবেল’ বর্ণিত ‘সদ্ধর্ম’ থেকে রোমান ক্যাথলিক চার্চের বিচ্যুতি, পোপ ও যাজকদের বিলাসবৈভব ও অনৈতিক জীবনধারার বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ ওয়াইক্লিফ, জন হাস প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ করেছিলেন, তাকেই লুথার এক বৃহত্তর সফল আন্দোলনে পরিণত করেন।
মার্টিন লুথারের মতাদর্শ
মার্টিন লুথার মনে করতেন, ঈশ্বরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য কোনও মধ্যবর্তীর প্রয়োজন নেই। মার্টিন লুথারের ধর্মতত্ত্ব বা লুথারবাদের কেন্দ্রে ছিল দুটি উপলব্ধি-ঈশ্বর বিশ্বাসই মুক্তির একমাত্র পথ এবং সবাই নিজের পুরোহিত।
(1) লাইপজিগ বিতর্ক: ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুন লাইপজিগ (Leipzig)-এ জোহান বা জোহানেস এক (Johann Eck) নামে জনৈক রক্ষণশীল ধর্মযাজকের সাথে লুথার এক তর্কযুদ্ধে অংশ নেন এবং যুক্তি-তথ্য দিয়ে প্রমাণ করেন যে, পোপতন্ত্র ঈশ্বরের সৃষ্টি নয়।
(2) প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম ও আচার-অনুষ্ঠানের অসারতা: লুথার ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে কোনোকিছুর মধ্যস্থতা স্বীকার করতে চাননি। প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম, আচার-অনুষ্ঠান তাঁর কাছে ছিল অর্থহীন, অপ্রয়োজনীয়। সন্তপূজা, যাজকের মধ্যস্থতা, চার্চ কথিত আচার-অনুষ্ঠান, এমনকি মাতা মেরির উপাসনাকেও লুথার ঈশ্বরসাধনার পথে বাধা বলে মনে করতেন।
(3) ঈশ্বরে বিশ্বাস: লুথার বিশ্বাস করতেন যে, ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে মূল যোগসূত্র হল ঈশ্বরে বিশ্বাস। নিঃসংশয় চিত্তে ঈশ্বরের প্রতি অটল বিশ্বাস রাখতে পারলেই মানুষের মুক্তি সম্ভব।
(4) Sola Fide ও Sola Scripture: মার্টিন লুথার বলেন যে, মানুষ মুক্তি পায় ঈশ্বরের কাছে নিঃশর্ত ও পূর্ণ আত্মসমর্পণ দ্বারা। এটি হল Sola Fide. আর ঈশ্বরের বাণী অনুধাবন ও উপলব্ধি সম্ভব কেবল বাইবেল পাঠের মাধ্যমে। এটি হল Sola Scripture. এই কাজের জন্য কোনও মধ্যস্থের প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ, যাজক বা পুরোহিত ধর্মাচরণের কাজে অপ্রয়োজনীয়। প্রতিটি মানুষ নিজেই নিজের পুরোহিত।
(5) পাপমুক্তিকরণ: লুথার স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, পোপ বা যাজকেরা কাউকে পাপমুক্ত করতে পারেন না। কারণ পোপ, যাজক, সন্ন্যাসী কেউই সাধারণ মানুষের থেকে উন্নত আধ্যাত্মিক স্তরের জীব নন। এঁরাও ব্যক্তিগত মুক্তির জন্য সর্বসাধারণের মতো ঈশ্বরে বিশ্বাস ও পবিত্র গ্রন্থের (বাইবেল) নির্দেশ অনুসরণ করতে বাধ্য। বস্তুত, মার্টিন লুথার শুধুমাত্র চার্চশাসিত ধর্মব্যবস্থা চাননি। তিনি চেয়েছিলেন, সমস্ত খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসী মানুষের পুরোহিততন্ত্র। লুথারের মতাদর্শ জার্মানির বিভিন্ন প্রদেশে (প্রাশিয়া, স্যাক্সনি, লুক্সেমবার্গ) বিশেষভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর