জার্মানিতে ধর্মসংস্কার আন্দোলন প্রথমে হওয়ার কারণ কী ছিল
রোমান ক্যাথলিক চার্চের অনাচার এবং যাজকতন্ত্রের দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ থেকেই উদ্ভব ঘটেছিল ধর্মসংস্কার আন্দোলনের। ধর্মসংস্কারের কেন্দ্রীয় চরিত্র মার্টিন লুথারের নেতৃত্বে ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে জার্মানিতে প্রথম রিফরমেশন (Reformation)-এর সূচনা ঘটে। বস্তুত, জার্মানিতে এই প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলন প্রথমে হওয়ার পশ্চাৎপটে যেমন লুথারের ধর্মভাবনা দায়ী ছিল, তেমনই সেখানকার আর্থসামাজিক পরিস্থিতিও কম কার্যকারী ছিল না।
জার্মানিতে ধর্মসংস্কার আন্দোলন প্রথমে হওয়ার কারণ
(1) জার্মান রাজন্যবর্গের সমর্থন: ঐতিহাসিক বব স্ক্রিবনারের [Robert William (Bob) Scribner] মতে, জার্মানিতে কেন্দ্রীয় রাজশক্তির অস্তিত্ব ছিল না। জার্মান রাজন্যবর্গ রোমান সম্রাটের আধিপত্য মানতে নারাজ ছিলেন। তাই তাঁরা পোপতন্ত্র-বিরোধী ধর্মসংস্কারকে সমর্থন করে সম্রাটকে দুর্বল করতে এগিয়ে আসেন। এই সকল নৃপতিদের সমর্থন এবং যাজক সম্প্রদায়কে নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে লুথারপন্থীদের অনেকটা অগ্রবর্তী করেছিল।
(2) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাব: পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষ থেকে জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে মানবতাবাদী পন্ডিতদের আগমন ঘটতে থাকে। উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি প্রসারিত হচ্ছিল প্রাথমিক শিক্ষাও। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি থেকে নতুন চিন্তাধারা সেসময় পৌছে গিয়েছিল সমাজের অন্যান্য স্তরে। ফলে ধর্মীয় জীবনে সংস্কারের আবশ্যিকতা অনুভব করেন সেদেশের শিক্ষিত সমাজ।
(3) বণিক শ্রেণির সমর্থন: জার্মানিতে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটার অপর একটি কারণ হল-সেখানকার বণিক শ্রেণির সমর্থন লাভ। বস্তুত জার্মানির বণিক শ্রেণি লুথারবাদের মধ্যে রেনেসাঁ-র ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী চেতনার অস্তিত্ব দেখে লুথারকে সমর্থন জানান।
(4) কৃষকদের ভূমিকা: শুধুমাত্র সমাজের শিক্ষিত ও উচ্চবর্গের মানুষই নয়, ধর্মসংস্কার আন্দোলনে এগিয়ে এসেছিলেন জার্মানির কৃষক সমাজও। সেদেশের কৃষক শ্রেণি ধর্মসংস্কার আন্দোলনের মধ্যে তাদের শোষণমুক্তির পথ দেখতে পেয়েছিলেন। সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, ষোড়শ শতকে জার্মানিতে প্রথম ধর্মসংস্কার আন্দোলন সংগঠন কোনও আকস্মিক ঘটনা ছিল না। জার্মানির তৎকালীন পরিস্থিতি বিপথগামী চার্চ ও পোপতন্ত্র-বিরোধী প্রতিবাদের যে ভিত্তি তৈরি করেছিল, মার্টিন লুথারের সুযোগ্য নেতৃত্ব তাকেই দান করেছিল বৃহত্তর এক মাত্রা।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর