প্রাক্-লুথার ধর্মসংস্কার আন্দোলনের বিকাশে জন হাসের ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো
ধর্মসংস্কার আন্দোলনের অপর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব জন হাস (John Huss, ১৩৭২-১৪১৫ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন তৎকালীন জার্মানির বোহেমিয়ার (বর্তমান চেকোশ্লোভাকিয়া) অন্তর্গত প্রাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন রেক্টর। তিনি বোহেমিয়াতে যাজক ও চার্চের বিরুদ্ধে তাঁর মতবাদ প্রচার করেছিলেন।
প্রাক্ লুথা ধর্মসংস্কার আন্দোলনের বিকাশে জন হাসের ভূমিকা
জন হাসের সময়ে বোহেমিয়াতে ক্যাথলিক চার্চের যাজকেরা নানাবিধ দুর্নীতি ও অনাচারমূলক কাজকর্মে লিপ্ত ছিলেন। এই পরিস্থিতিতে জন ওয়াইক্লিফের বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড জন হাসকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে এবং তিনি বোহেমিয়াতে পোপতন্ত্র তথা চার্চবিরোধী ধর্মসংস্কার আন্দোলন শুরু করেন।
(1) মতবাদ: জন হাস জন ওয়াইক্লিফের বহু লেখা চেক ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন। ওয়াইক্লিফের চিন্তাধারা ও মতাদর্শের অনুসরণে তিনি বলেন যে, মানুষ তার সৎ কাজ এবং সৎ আচরণের দ্বারা ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করতে পারে। এইজন্য ধর্মযাজকদের কোনও প্রয়োজন নেই। ধর্মযাজকেরা যেহেতু দুর্নীতিগ্রস্ত ও পাপকর্মে লিপ্ত, তাই ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরিচালনার কোনও নৈতিক অধিকার তাদের নেই। এ ছাড়া চেক ভাষায় বাইবেলের অনুবাদের মাধ্যমে জন হাস পোপতন্ত্রের বিরোধিতায় প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিলেন।
(2) আন্দোলন পরিচালনা: ক্যাথলিক চার্চ, পোপতন্ত্র ও ব্যয়বহুল ধর্মীয় অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করে জন হাস যে প্রতিবাদী আন্দোলনের সূচনা করেন, বোহেমিয়ার ইতিহাসে তা হুসাইট আন্দোলন (Hussite Movement) নামে পরিচিত। ক্রমে এই আন্দোলন সমগ্র বোহেমিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল।
(3) প্রতিক্রিয়া: জন হাসের নেতৃত্বে পরিচালিত হুসাইট আন্দোলন দমন করতে পোপ ও চার্চ কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। পোপ হাসকে সমাজচ্যুত বলে ঘোষণা করেন এবং জীবন্ত অগ্নিদগ্ধ করে তাঁকে হত্যা করা হয়।
মূল্যায়ন
অবশ্য জন হাসের আন্দোলন পুরোপুরি বিফলে যায়নি। তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকরী হলে সমগ্র বোহেমিয়া বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বহু ভ্রষ্টাচারী যাজক আক্রান্ত হন। হুসাইটগণ এরপর বিশিষ্ট ধর্মজ্ঞানী লুক-এর নেতৃত্বে গড়ে তোলেন বোহেমিয়ান ব্রিদরেন (Bohemian Brethren) নামক সংগঠন, যার মাধ্যমে তাঁরা তাঁদের ধর্মীয় আন্দোলন জারি রেখেছিলেন।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর