রোমান ক্যাথলিক চার্চের উত্থান হয় কীভাবে
প্রাচীন কালে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যে বহুত্ববাদী তথা প্যাগান (Pagan) ধর্ম প্রচলিত ছিল। অর্থাৎ সেসময় মূর্তিপূজার বাহুল্য ছিল। অ্যাপোলো, জুপিটার, ডায়ানা, মার্স প্রমুখ ছিলেন প্রাচীন রোমানদের অন্যতম দেবদেবী। কিন্তু পরবর্তীতে সম্রাট কনস্ট্যানটাইন, থিওডোসিয়াস-এর হাত ধরে রোম-সহ ইউরোপে বহুত্ববাদের অবসান হয় ও খ্রিস্ট ধর্ম প্রসারিত হতে থাকে, গড়ে উঠতে থাকে চার্চ। এই খ্রিস্ট ধর্মেরই একটি শাখা ছিল রোমান ক্যাথলিক ধর্ম। কালক্রমে রোমান ক্যাথলিক ধর্ম এবং রোমান ক্যাথলিক চার্চের নেতৃত্বে খ্রিস্ট ধর্মের বিজয় পতাকা উড্ডীন হতে থাকে।
রোমান ক্যাথলিক চার্চের উত্থান
(1) খ্রিস্টান ধর্মের প্রসার: প্রাথমিক পর্বে, আবির্ভাবের পর খ্রিস্ট ধর্মকে বহু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। কাজেই তার প্রসারের গতিও ছিল অত্যন্ত ধীর। রোমান সম্রাট কনস্ট্যানটাইন-এর আমলে খ্রিস্ট ধর্ম রাজনৈতিক স্বীকৃতি লাভ করায় খ্রিস্ট ধর্মের প্রসারের পথ খুলে যায়। এই সময় বহুত্ববাদীরা কোথাও স্বেচ্ছায়, কোথাও বা বাধ্য হয়ে খ্রিস্টান মতে ধর্মান্তরিত হন।
(2) ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় চার্চ নির্মাণ: খ্রিস্ট ধর্ম প্রসারের শুরুতে কোনও শক্তিশালী কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব ছিল না। ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় বিক্ষিপ্তভাবে নির্মিত কয়েকটি চার্চ নিয়েই আরম্ভ হয়েছিল খ্রিস্টানদের ধর্মীয় জীবন।
(3) প্রথম পর্বের কয়েকটি চার্চ: ৩২ খ্রিস্টাব্দে (মতান্তরে ৩৩ খ্রিস্টাব্দ) জেরুজালেমে প্রথম খ্রিস্টান চার্চ নির্মিত হয়। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতক নাগাদ পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি নগরকে (রোম, কনস্ট্যান্টিনোপল, অ্যান্টিওক, আলেকজান্দ্রিয়া এবং জেরুজালেম) কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে চার্চ।
(4) বিশপতন্ত্রের উত্থান: চার্চ প্রতিষ্ঠার সূত্রে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যে প্রথম ‘বিশপ’ পদের সৃষ্টি হয়। সেন্ট পিটার ছিলেন রোমান চার্চের প্রথম বিশপ। ধর্মীয় বিশুদ্ধতা রক্ষা এবং খ্রিস্টীয় ধর্মশাস্ত্রকে অপব্যাখ্যার হাত থেকে রক্ষা করা ছিল বিশপের কাজ। প্রথম দিকে নগরগুলির বিভিন্ন বিশপদের মর্যাদা সমান ছিল। পরবর্তীকালে ভ্রান্ত ব্যাখ্যার হাত থেকে খ্রিস্টের উপদেশাবলিকে অক্ষুণ্ণ রাখা ও ধর্মের শুদ্ধতা বজায় রাখার লক্ষ্যে বিশপদের মধ্যে ক্রমোচ্চ শ্রেণিবিভাজন ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।
(5) রোমান ক্যাথলিক চার্চের ক্ষমতায়ন: এইভাবে রোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন শহরে যেসকল চার্চ গড়ে উঠেছিল, ক্রমে তাদের মধ্যে কনস্ট্যান্টিনোপল ও রোমের চার্চের বিশপরাই তুলনামূলক বেশি ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠেন। -} যাঁদের মধ্যে আবার রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রধান বিশপই খ্রিস্টান জগতের সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হন। ধর্মীয় প্রতিপত্তির প্রশ্নে কনস্ট্যান্টিনোপলের চার্চকে পিছনে ফেলে রেখে উত্থান ঘটে রোমান চার্চের।
মূল্যায়ন
খ্রিস্টান চার্চব্যবস্থায় রোমান ক্যাথলিক চার্চ তথা পোপের যে জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেটাই পরবর্তীতে বৃহৎ রূপ ধারণ করে। পশ্চিম ইউরোপে প্রতিদ্বন্দ্বীর অভাব, বর্বর আক্রমণ প্রতিরোধে রোমান চার্চের কর্তৃত্ব, পোপ প্রথম গ্রেগরি ও তৃতীয় ইনোসেন্টের অবদান-এই সব বিষয়গুলি পরবর্তী পর্যায়ে রোমান চার্চকে বসিয়েছিল শ্রেষ্ঠত্বের আসনে।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর