ইটালির রেনেসাঁর সঙ্গে বাংলার নবজাগরণের তুলনামূলক আলোচনা করো

ইটালির রেনেসাঁর সঙ্গে বাংলার নবজাগরণের তুলনামূলক আলোচনা করো

ইটালির রেনেসাঁর সঙ্গে বাংলার নবজাগরণের তুলনামূলক আলোচনা করো
ইটালির রেনেসাঁর সঙ্গে বাংলার নবজাগরণের তুলনামূলক আলোচনা করো

ইটালির রেনেসাঁর সঙ্গে বাংলার নবজাগরণের তুলনা 

পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর, খ্রিস্টান চার্চের কর্তৃত্ব ও সামন্ততান্ত্রিক শোষণের দরুন গ্রিকো-রোমান ধ্রুপদি সংস্কৃতিচর্চার অবসান ঘটে। পঞ্চদশ শতকে সেই হারানো ধ্রুপদি সংস্কৃতিচর্চা পুনরায় শুরু হলে মানবসমাজে যে বৈপ্লবিক রূপান্তর ঘটে, তাই হল নবজাগরণ-যার উৎসকেন্দ্র ছিল ইটালি। অন্যদিকে ভারতে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি, পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের সূত্রে উনিশ শতকের বাংলায় শিক্ষা-সংস্কৃতির কেন্দ্রে ঘটে ব্যাপক পরিবর্তন -যাকে অনেকে ‘নবজাগরণ’ আখ্যা দেন। এই দুইয়ের মধ্যে তুলনা করতে গেলে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য উভয়ই উঠে আসে।

(1) ইটালির রেনেসাঁর সঙ্গে বাংলার নবজাগরণের সাদৃশ্য: অধ্যাপক সুশোভন সরকার, ড. অমলেশ ত্রিপাঠী প্রমুখ ঐতিহাসিকগণ ইটালির রেনেসাঁর সঙ্গে বাংলার নবজাগরণের বেশকিছু সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন। 

  • নবজাগরণের লক্ষ্য: ইটালির নবজাগরণ ইটালিবাসীকে কুসংস্কারমুক্ত ও জড়তামুক্ত একটি সমাজ গঠনে সহায়তা করেছিল। বাংলার নবজাগরণও বাঙালি সমাজকে মধ্যযুগীয় অন্ধকার ও কুসংস্কার থেকে মুক্তি দিয়েছিল।
  • যুক্তিবাদের জন্ম: ইটালির নবজাগরণ যেমন ইটালিবাসীর মনে এক স্বাধীন, যুক্তিবাদী, মানবতাবাদী ও জাতীয়তাবাদী চেতনার জন্ম দিয়েছিল, তেমনই বাংলার নবজাগরণ ভারতীয় সমাজে যুক্তিবাদী ও মানবতাবাদী চিন্তার জন্ম দেয়।
  • জ্ঞানের বিকাশ: ইটালির নবজাগরণের ফলে ভাষা, সাহিত্য, চিত্রকলা, বিজ্ঞান, শিল্প-স্থাপত্য, ভাস্কর্যের ব্যাপক বিকাশ ঘটেছিল। একইভাবে বাংলার নবজাগরণের ফলে ভাষা, সাহিত্য, সংগীত, জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগতে ব্যাপক আলোড়ন দেখা দিয়েছিল।
  • প্রেরণা : প্রাচীন ল্যাটিন ও ইংরেজি ভাষা ইউরোপীয় নবজাগরণে উৎসাহ জুগিয়েছিল। আবার, বাংলার নবজাগরণের ক্ষেত্রেও প্রেরণা ছিল প্রাচীন সংস্কৃত ভাষা ও ইংরেজি সাহিত্য।

মূল্যায়ন

আলোচনা শেষে বলা যায় যে, বাংলায় উনিশ শতকের পুনরুজ্জীবন ছিল এক জ্ঞানদীপ্তিস্বরূপ। হয়ত ইটালির ফ্লোরেন্স নগরী ইউরোপের রেনেসাঁয় যে ভূমিকা পালন করেছিল, বাংলার কলকাতা তা করতে পারেনি, বা ঔপনিবেশিক কেন্দ্র হওয়ার কারণে ফ্লোরেন্সের মতো স্বাধীন মানসিকতা ও শিল্পীমনও অর্জন করতে পারেনি। তবুও বাংলা তথা কলকাতার বুকে জেগে ওঠা জ্ঞানদীপ্তির আলো ছড়িয়ে পড়েছিল ভারতের নানান অংশে। জনৈক জার্মান সমাজতত্ত্ববিদের মতে, ভারতে নবজাগরণের মাধ্যমে মধ্যযুগের অবসান এবং আধুনিক যুগের সূচনা হয়েছিল।

আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment