রেনেসাঁ বা নবজাগরণের ইতিবাচক প্রভাব কী ছিল

রেনেসাঁ বা নবজাগরণের ইতিবাচক প্রভাব কী ছিল

রেনেসাঁ বা নবজাগরণের ইতিবাচক প্রভাব কী ছিল
রেনেসাঁ বা নবজাগরণের ইতিবাচক প্রভাব কী ছিল

রেনেসাঁ বা নবজাগরণের ইতিবাচক প্রভাব 

ইটালি তথা ইউরোপে সংঘটিত রেনেসাঁর ইতিবাচক প্রভাব ছিল নিম্নরূপ-

(1)  মানসিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন: ইউরোপীয় নবজাগরণ মানুষের নৈতিক ও মানসিক ক্ষেত্রে এক বিরাট পরিবর্তন সূচিত করেছিল। এই সময় মানুষের মনে চিরাচরিত খ্রিস্টীয় অনুশাসনের প্রতি সংশয় দেখা যায়। এই কালপর্ব থেকেই ঈশ্বরের শক্তি ও রহস্যের পরিবর্তে মানুষ তাদের প্রকৃতি, কৃতিত্ব ও সম্ভাবনার উপর গুরুত্ব আরোপ করে। ধর্মীয় প্রভাব মুক্ত এক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মানুষকে মানুষ হিসেবে প্রাধান্য দেওয়ার প্রবণতা চোখে পড়ে।

(2) স্বতন্ত্র সত্তার জ্ঞান: নবজাগরণের কারণে মানুষ নিজেকে চিনতে শিখেছিল। ইরাসমাসের ভাষায়, দীর্ঘকালীন গভীর নিদ্রা থেকে মানুষ জেগে উঠেছিল। এই মননশীল আন্দোলনের ফলে এক নতুন জীবনদর্শন জন্ম নেয় যার কেন্দ্রে ছিল ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী চেতনা। এসময় ব্যক্তিজীবন (Private sphreres of life) এবং গোষ্ঠীজীবন (Public spheres of life)-এর প্রভেদ সম্পর্কে মানুষের ধারণা পুষ্ট হয়েছিল। মানুষ বুঝতে শিখেছিল যে, কেবলমাত্র একজন যাজক, সামন্ত বা কৃষক নয়; সে একইসঙ্গে একজন স্বতন্ত্র ‘ব্যক্তি’। এইভাবে গড়ে উঠেছেল মানবতাবাদের চেতনা।

(3) ভাষা ও সাহিত্যচর্চা: রেনেসাঁর কালপর্বে ব্যাপকভাবে ধ্রুপদি যুগের ইতিহাস, সাহিত্য, বিজ্ঞানের চর্চা শুরু হয়েছিল। এই সময় মানবতাবাদী পণ্ডিতেরা ল্যাটিন ভাষায় ব্যাকরণ, পাঠ্যপুস্তক ইত্যাদি প্রকাশ করেন। এ ছাড়া শুরু হয়েছিল স্থানীয় ভাষায় সাহিত্যচর্চাও। অঞ্চল বা দেশভেদে শিল্পের ক্ষেত্রেও স্বতন্ত্র ধারা গড়ে ওঠে এসময়।

(4) শিক্ষা ও জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চায় উন্নতি: আলোচ্য পর্বে ধর্মকেন্দ্রিক শিক্ষার পরিবর্তে শুরু হয় মানবতাবাদী শিক্ষা। এই শিক্ষাব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য ছিল ‘পূর্ণ মানুষ তৈরি’ (Development of all round Man) I এই সময় থেকে উন্নত হয় জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চাও। কোপারনিকাস, গ্যালিলিও, কেপলারের প্রদত্ত সৌরকেন্দ্রিক বিশ্বের ধারণা প্রথাগত চিন্তাভাবনায় ব্যাপক পরিবর্তন আনে। পাশাপাশি মুদ্রণব্যবস্থায় বিপ্লবের ফলে প্রচুর গ্রন্থ প্রকাশিত হতে থাকে, যেগুলি সাধারণ মানুষের মধ্যে জ্ঞানের সঞ্চার ঘটায়।

(5) শিল্পে যুগান্তর: রেনেসাঁ যুগে শিল্প-স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও চিত্রকলায় যুগান্তর আসে। মধ্যযুগের শিল্পকলা ছিল ঈশ্বরকেন্দ্রিক। কিন্তু মানবতাবাদী শিল্পীরা মানুষ ও মানুষের জীবনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, রাফায়েল, দোনাতেল্লো প্রমুখের সৃষ্টিগুলি জীবন এবং জগতের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে তুলে ধরে। এইসব শিল্পীদের কর্ম, চিন্তা ও দর্শন আধুনিক শিল্পকলার ভিত্তি স্থাপন করেছিল।

আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment