মানবতাবাদী হিসেবে ইরাসমাসের ভূমিকা উল্লেখ করো

মানবতাবাদী হিসেবে ইরাসমাসের ভূমিকা উল্লেখ করো

অথবা, ‘মানবতাবাদীদের রাজপুত্র কাকে বলা হয়? তিনি কেন বিখ্যাত?

অথবা, টীকা লেখো- ডেসিডেরিয়াস ইরাসমাস

নবজাগরণ যুগের বিখ্যাত পণ্ডিত এবং আল্পসের উত্তরের মানবতাবাদী আন্দোলনের শ্রেষ্ঠ প্রবক্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন ওলন্দাজ পণ্ডিত ডেসিডেরিয়াস ইরাসমাস (Desiderius Erasmus, ১৪৬৬-১৫৩৬ খ্রি.)। উত্তর ইউরোপের সর্বশ্রেষ্ঠ মানবতাবাদীরূপে পরিগণিত ইরাসমাস প্রকৃতপক্ষে ছিলেন একজন ক্যাথলিক ধর্মযাজক। তাঁকে মানবতাবাদের রাজপুত্র বলা হয়ে থাকে।

মানবতাবাদী হিসেবে ইরাসমাসের ভূমিকা

(1) ‘নিউ টেস্টামেন্ট’ গ্রন্থ সম্পাদনা: গ্রিক, ল্যাটিন ও খ্রিস্টীয় সাহিত্য- দর্শনে সুপণ্ডিত এই ধর্মযাজক ইংল্যান্ড, ফ্রান্স- সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ পরিভ্রমণ করে মানবতাবাদী ধারণা প্রচার করেন। খ্রিস্টান নবজাগরণ বা Christian Renaissance এই ছিল ইরাসমাস ও তাঁর অনুগামীদের অন্যতম লক্ষ্য। খ্রিস্ট ধর্ম এবং নতুন বই পড়ার আগ্রহ বৃদ্ধির জন্য তিনি নিউ টেস্টামেন্ট (New Testament)-এর নতুন গ্রিক ও ল্যাটিন সংস্করণ ইরাসমাস প্রকাশ করেন (১৫১৬ খ্রি.) F। বাইবেল পাঠের ক্ষেত্রে তিনি সমালোচনামূলক পদ্ধতি প্রয়োগ করেন।

(2) ইন প্রেইজ অফ ফলি’ রচনা প্রকাশ: ইরাসমাসের বিখ্যাত রচনা হল ইন প্রেইজ অফ ফলি (In Praise of Folly)। ১৫০৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি এটি ল্যাটিন ভাষায় রচনা করেন ও তা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৫১১ খ্রিস্টাব্দে। এখানে তিনি বিদ্রূপাত্মকভাবে চার্চ ও যাজকদের দুর্নীতি, যাজকদের ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদির কথা তুলে ধরেন। তাঁর মতে, মানবপ্রকৃতির সঙ্গে ধর্মের যথার্থ সমন্বয়সাধন করে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটানো সম্ভব।

(3) ধর্মসংস্কার আন্দোলনের অগ্রদূত: ইরাসমাসের লক্ষ্য ছিল সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে খ্রিস্টের বাণী সঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়া। ধর্মের নামে অনাচার বা কুসংস্কার ধ্বংস করে ধর্মের প্রকৃত সত্য সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করাই ছিল তাঁর অন্যতম উদ্দেশ্য। যাজকদের ভ্রষ্টাচারকে উদ্‌ঘাটিত করে তিনি সঠিক ধর্মপথে মানুষকে প্রতিষ্ঠালাভের প্রেরণা দেন। শুধু তাই নয়, ইরাসমাসের চার্চের সমালোচনা প্রাচীন ধর্মব্যবস্থার মূলে সজোরে আঘাত করেছিল। তিনিই ছিলেন ধর্মসংস্কার আন্দোলনের অগ্রদূত।

(4) নৈতিক শিক্ষায় গুরুত্ব: খ্রিস্ট ধর্মের নৈতিক শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেন ইরাসমাস। এর সঙ্গে মানবতাবাদীদের প্রদর্শিত জীবনধারা অনুসরণ করে মানুষের জীবন ও জীবনযাত্রার উন্নতির কথা বলেন। তাঁর রচিত ‘Handbook of the Christian Knight’ মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।

(5) সামন্তদের সমালোচনা: ইরাসমাস তাঁর রচনার মাধ্যমে মধ্যযুগের নাইট যোদ্ধাদের ও তাদের আচার-আচরণের সমালোচনা করেন। এমনকি তাদের উপহাসের পাত্রেও পরিণত করেন। যুদ্ধকে তিনি ঘৃণা করতেন, তাই ক্রুসেডের তিনি বিরোধী ছিলেন।

মূল্যায়ন

উত্তর ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় মানবতাবাদের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন ইরাসমাস। ঐতিহাসিক ফিশার মনে করেন যে, ভলতেয়ারের আগে ইরাসমাসের মতো আর কেউই ইউরোপকে প্রভাবিত করতে পারেননি।

আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment