নাগরিক মানবতাবাদ বলতে কী বোঝো
ঐতিহাসিকগণ মানবতাবাদী আন্দোলনে দুটি ধারা লক্ষ করেছেন- খ্রিস্টান মানবতাবাদ (Christian Humanism) এবং ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদ (Secular Humanism)। ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদের অঙ্গ হিসেবেই ফ্লোরেন্সে সেই সময় বিকাশলাভ করেছিল অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা, যা নাগরিক মানবতাবাদ (Civic Humanism) নামে পরিচিত।
নাগরিক মানবতাবাদ
(1) ধারণা: নাগরিক মানবতাবাদ হল রেনেসাঁ-প্রসূত মানবতাবাদের ধর্মীয় প্রভাবমুক্ত এমন একটি ধারা, যেখানে নাগরিকদের সক্রিয়ভাবে সমাজ ও রাজনীতিতে অংশগ্রহণের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। নাগরিক মানবতাবাদকে অনেকে পৌর মানবতাবাদও বলে থাকেন। এই ধারণাটি প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সমাজ থেকে উদ্ভূত হয়েছে।
(2) ভিত্তি: নাগরিক মানবতাবাদ মূলত নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল-
- নাগরিকদের কর্তব্য: নাগরিক মানবতাবাদে নাগরিকদের সামাজিক কর্তব্যের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার কথা বলা হয়েছে। রেনেসাঁ সময়কালে নাগরিকদের সমাজের উন্নতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। এমনকি ব্যক্তির নিজস্ব উন্নতির পাশাপাশি সমাজের বৃহত্তর কল্যাণের জন্য কর্তব্য পালনও গুরুত্বপূর্ণ ছিল নাগরিক মানবতাবাদের ক্ষেত্রে।
- প্রজাতন্ত্রের ধারণা: প্রজাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্র পরিচালিত হয় নাগরিকদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে। নাগরিক মানবতাবাদের ক্ষেত্রেও এই একই কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ বলা যায়, প্রজাতন্ত্রের ধারণাই নাগরিক মানবতাবাদের ভিত্তি, যেখানে ব্যক্তির স্বাধীনতা ও মর্যাদার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
(3) মানবতাবাদীগণ : লিওনার্দো বুনি (Leonardo Bruni)-কে ঐতিহাসিকগণ নাগরিক মানবতাবাদের পুরোধা বলে মনে করেন। লিওনার্দো ব্লুনি ছাড়াও সালুতাতি (Salutati)-ও নাগরিক মানবতাবাদের ধারণার প্রচার করেন।
(4) বিস্তার: নাগরিক মানবতাবাদের ধারণাটি রেনেসাঁ সময়কালে ইটালির বিভিন্ন নগররাষ্ট্রগুলিতে বিশেষত ফ্লোরেন্সে প্রসার লাভ করেছিল। কারণ- ফ্লোরেন্সের নাগরিকরা শহরের রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করতেন।
মূল্যায়ন
নাগরিক মানবতাবাদে নাগরিকদের সমস্যাগুলি মানবিকতার দিক থেকে বিবেচিত হলে ধর্মান্ধতা দূর হয়, যা ইউরোপের ইতিহাসচর্চার গতিপ্রকৃতিকে পরিবর্তন করেছিল। ইতিহাসকে ধর্মীয় মোড়ক থেকে মুক্ত করে মানবতাবাদীরা তার নতুন ব্যাখ্যা গড়ে তোলেন নাগরিক মানবতাবাদের আলোকে।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর