কুসেডের অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো
অথবা, ক্রুসেড কীভাবে মধ্যযুগীয় ইউরোপে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও নগর বিকাশে সাহায্য করেছিল
ক্রুসেড ইউরোপের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানান পরিবর্তন ঘটিয়েছিল। কৃষিভিত্তিক স্থবির অর্থনীতি থেকে বাণিজ্যমুখী নগরকেন্দ্রিক মিশ্র অর্থনীতি গড়ে ওঠার পিছনে ক্রুসেডের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
ক্রুসেডের অর্থনৈতিক প্রভাব/মধ্যযুগীয় ইউরোপে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও নগর বিকাশে সহায়তা
(1) শিল্পের বিকাশ: মধ্যযুগীয় ইউরোপে প্রধান জীবিকা ছিল কৃষি। কিন্তু ক্রুসেডের ফলে শিল্প ও বাণিজ্যের অগ্রগতির পথ সুগম হয়। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটে। শিল্প ও কারিগরি পেশায় নতুন নতুন বহু মানুষের নিযুক্তি ঘটতে থাকে। শিল্পের মধ্যে বস্ত্রবয়ন (সুতি, রেশম, পশম) প্রধান ছিল। দেশভেদে মখমল, মদ, রঞ্জক, সামুদ্রিক মাছ প্রক্রিয়াকরণ, চামড়ার ও ধাতব জিনিসপত্র উল্লেখযোগ্য ছিল। মুক্ত ভূমিদাসরা শিল্প ও কারিগরি পেশায় যুক্ত হলে শ্রমিকের জোগান বাড়ে। ফলে শিল্পের বিকাশ দ্রুততর হয়।
(2) বাণিজ্যের বিকাশ: ক্রুসেডের ফলে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ইউরোপের আধিপত্য স্থাপিত হওয়ার ফলে পাশ্চাত্যের সঙ্গে প্রাচ্যের বাণিজ্যিক শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। ক্রুসেডের জন্য অনেকেই ইটালির বন্দরগুলি ব্যবহার করত। যুদ্ধের প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র, রসদ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ধর্মযোদ্ধাগণ ইটালি থেকে কিনত। সেইজন্য ইটালির শহর, বন্দর, বাজার সর্বদা কর্মচঞ্চল থাকত। ইটালির শহরগুলিতে পুঁজিবাদী বণিক শ্রেণির উদ্ভব ঘটে, তৈরি হয় বৃহদাকার জাহাজ। এই দৃষ্টান্তে উদ্বুদ্ধ হয় ইউরোপের অন্যান্য দেশের বণিককুল। প্রাচ্যের দেশগুলিতে ইউরোপীয় শিল্পপণ্যের বাজার যেমন সৃষ্টি হয়, তেমনই প্রাচ্যের রেশম বস্ত্র, কার্পাস বস্ত্র, সুগন্ধি, খেজুর ইত্যাদি লোভনীয় পণ্যসম্ভার পৌঁছে যায় ইউরোপের ঘরে ঘরে।
(3) নতুন নগরের পন্ডন: ক্রুসেড চলাকালীন সময়ে ইউরোপের পুরোনো শহরগুলির শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। এরপর প্রাচ্যের সঙ্গে বাণিজ্যসূত্র স্থাপিত হলে ভেনিস, জেনোয়া, পিসা, নেপলস, মার্সেই প্রভৃতি শহর সমৃদ্ধশালী হয়ে ওঠে। গড়ে ওঠে আরও নতুন নতুন নগর ও শহর।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর