জাতিরাষ্ট্রের উত্থানে ক্রুসেডের ভূমিকা আলোচনা করো
মধ্যযুগীয় ইউরোপের রাজনৈতিক বাস্তবতায় ক্রুসেড এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ- ক্রুসেডের মাধ্যমে ইউরোপে রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এই রাজনৈতিক ঐক্যবোধ থেকেই পরবর্তীকালে জন্ম নেয় জাতিরাষ্ট্র।
(1) জাতিরাষ্ট্রের উত্থানে ক্রুসেডের ভূমিকা
(1) শক্তিশালী রাজতন্ত্রের উত্থান: ক্রুসেড সামন্ততান্ত্রিক ইউরোপের ভিত্তিমূলে আঘাত করেছিল। এতকাল রাজা তাঁর পদমর্যাদা ও সামরিক শক্তি সুনিশ্চিত করার জন্য সামন্তপ্রভুদের উপর নির্ভরশীল ছিলেন। কিন্তু ক্রুসেডের ফলে সামন্তদের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি, প্রতিপত্তি ও সংখ্যা কমে গেলে রাজতন্ত্রের কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ ও সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়। উত্তরাধিকারহীন সামন্তদের জমি, অর্থসম্পদ রাজার হস্তগত হয়। রাজার একক অনুচর ও সেনাশক্তি অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে। সাধারণ মানুষ সামন্তদের অবর্তমানে রাজার শরণাপন্ন হন। এইভাবে রাজতন্ত্র তার হারানো মর্যাদা ফিরে পায়। শক্তিশালী রাজতন্ত্রের উত্থান ঘটে।
(2) জাতীয় রাজতন্ত্রের সম্ভাবনা: ক্রুসেডে অংশ নিয়েছিল নানা দেশ, নানা জাতির মানুষ। তাদের ভাষা, জীবনধারা, আচার-বিচার ছিল পৃথক। বিদেশ-বিভুঁইয়ে এই ভিন্নতর গোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে থাকতে থাকতে ধর্মযোদ্ধারা আত্মীয়-পরিজন, স্বজাতি, স্বভাষী মানুষের জন্য গভীর একাত্মতা অনুভব করতে থাকেন। এইভাবে একই দেশে বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে একাত্মতার জন্ম হয়, যা পরবর্তী পর্যায়ে জাতীয়তাবোধের সম্ভাবনার বীজ বপন করে। রাজাকে কেন্দ্র করে রাজ্যগঠনের এই মানসিকতা জাতীয় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা তৈরি করে। এইভাবে ক্রুসেডের ফলে রাজা ও রাজতন্ত্রের ক্ষমতা ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স-সহ ইউরোপের অন্যান্য দেশে জাতিরাষ্ট্রের উত্থান ঘটে।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর