ক্রুসেডের মাধ্যমে কীভাবে পোপের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছিল

ক্রুসেডের মাধ্যমে কীভাবে পোপের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছিল 

খ্রিস্টানদের পবিত্রভূমি জেরুজালেম তুর্কিরা দখল করে নিলে ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টানদের তীর্থভ্রমণ বাধাপ্রাপ্ত হয়, যা খ্রিস্টান জগতের কাছে ছিল চূড়ান্ত অপমানের। এমতাবস্থায়, পোপ দ্বিতীয় আরবানের আহ্বানে প্রথম ক্রুসেড (১০৯৫ খ্রিস্টাব্দ) সংগঠিত হয়েছিল। ইসলামবিরোধী সামরিক অভিযান হিসেবে সর্বমোট আটটি ক্রুসেড সংগঠিত হয়েছিল প্রায় দুশো বছরব্যাপী সময়ের মধ্যে। খ্রিস্টান জগতের প্রধান পোপের আহ্বানে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সামন্তপ্রভু, সম্রাট সকলেই এই ধর্মযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

(1) ক্রুসেডের মাধ্যমে পোপের ক্ষমতা বৃদ্ধি

ক্রুসেডের এক অন্যতম ইতিবাচক রাজনৈতিক প্রভাব ছিল পোপের ক্ষমতা বৃদ্ধি। নানাভাবে পোপের এই ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছিল, যথা-

(1)  খ্রিস্টান ধর্মান্ধতা: ইউরোপে একাদশ শতক নাগাদ নর্ম্যান, ম্যাগিয়ার ও ভূমিদাসরা খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করলে একদিকে যেমন খ্রিস্টানদের সংখ্যা বহুল পরিমাণে বৃদ্ধি পায়, অন্যদিকে পোপ সপ্তম গ্রেগরির মানসিকতার প্রভাবে তারা হয়ে ওঠে উগ্র সাম্প্রদায়িক। ফলে সমাজে পোপের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছিল।

(2)  রোমান সম্রাটদের দুর্বলতার প্রকাশ: ক্রুসেড সংগঠনের তাত্ত্বিক নেতা ছিলেন পোপ। কিন্তু তাকে বাস্তবায়িত করার দায়িত্ব বর্তেছিল সম্রাট, রাজন্যবর্গ ও সামন্তদের হাতে। এই অভিযানে ধর্মযোদ্ধাদের উচ্ছৃঙ্খলতা, সেনাবাহিনীর নৃশংসতা, পরিকল্পনার ব্যর্থতা কার্যত পূর্ব ও পশ্চিম রোমান সম্রাটদের অপদার্থতাকেই প্রকট করেছিল। ফলস্বরূপ, খ্রিস্টান জগতের মূল সঞ্চালক হিসেবে পোপের উত্থান সহজ হয়েছিল।

(3) সামন্ত শ্রেণির ক্ষমতা হ্রাস: পোপের আহ্বানে উদ্বুদ্ধ হয়ে সামন্ত প্রভুরা ক্রুসেড যাত্রার পূর্বে তাদের যাবতীয় ভূসম্পত্তি ধর্মীয় সংগঠনকে দান করে যান। ক্রুসেডে বহু সামন্তপ্রভুর মৃত্যু হলে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা ক্রমশ দুর্বল হয়ে যায়, যা সমাজে পোপের কর্তৃত্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

(4) পোপের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি: পবিত্রভূমি দখলে ব্যর্থ হলেও, ক্রুসেড সংগঠনের ফলে রোমান চার্চ এবং পোপ নতুন মর্যাদা ও প্রতিপত্তির অধিকারী হন। ক্রুসেড সংগঠনের কাজে পোপ ও তাঁর প্রতিনিধিদের নেতৃত্বকারী ভূমিকা, সম্রাট, রাজন্যবর্গ ও ধর্মযোদ্ধাগণ কর্তৃক পোপের নেতৃত্বের স্বীকৃতি কার্যত পোপকেই জননায়কের মর্যাদায় ভূষিত করে। সম্রাট বা রাজার পরিবর্তে পোপই বিধর্মীদের বিরুদ্ধে খ্রিস্টান সমাজের সর্বোচ্চ নেতার আসনে অধিষ্ঠিত হন।

মূল্যায়ন

তবে এই ইতিবাচক সম্ভাবনা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ধর্মযুদ্ধের নামে পোপ ও যাজকগণ কর্তৃক অর্থসংগ্রহ ও আত্মসাৎ-এর ঘটনা, পাপমুক্তির নামে মার্জনাপত্র (Indulgence) বিক্রয় চার্চের ব্যাবসাদারী মানসিকতা প্রকাশ করে দেয়। ফলে পোপ একাদশ শতকে অর্জিত প্রতিপত্তি কিছুকালের মধ্যেই হারাতে বাধ্য হন।

আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment