ক্রুসেডের ব্যর্থতার কারণসমূহ আলোচনা করো
ব্রিটিশ ঐতিহাসিক উইলসন (Wilson) বলেছেন যে, ক্রুসেডগুলি মধ্যযুগের ধর্মান্ধতা এবং নির্বুদ্ধিতার প্রতিফলন ছাড়া কিছুই ছিল না। বস্তুত সহজাত নানা ত্রুটির কারণে শেষপর্যন্ত পুণ্যভূমি পুনরুদ্ধারের কাজ অসমাপ্ত – রেখেই ক্রুসেডগুলি পরিত্যক্ত হয়েছিল।
(1) ক্রুসেড পরিত্যক্ত হওয়ার / ব্যর্থতার কারণসমূহ
ক্রুসেডের ব্যর্থতার পিছনে একাধিক কারণ দায়ী ছিল। যথা-
(1) অবাস্তব প্রশাসনিক পরিকল্পনা: হেনরি পিরেন (H Pirenne)-এর মতে, সিরিয়া বা প্যালেস্টাইন দখল করলেও সেগুলি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব ছিল না। এই পরিকল্পনা প্রশাসনিকভাবে অবাস্তব হওয়ায় ব্যর্থতা ছিল অনিবার্য পরিণতি।
(2) ইটালির বাণিজ্যিক লক্ষ্যপূরণ: ইটালির নগররাষ্ট্রগুলির বাণিজ্যিক লক্ষ্য প্রথম তিনটি ক্রুসেডেই পূরিত হয়ে যায়। প্রাচ্যে যাওয়ার বাণিজ্যপথ তাদের করায়ত্ত হয়ে গেলে, পরবর্তীকালে ক্রুসেড সংগঠিত করার প্রেরণা তারা হারিয়ে ফেলে।
(3) ধর্মযোদ্ধার অভাব: সামন্তব্যবস্থা ক্রুসেডের ফলে দুর্বল হয়। বহু ম্যানর ভেঙে যায়, ভূমিদাসরা মুক্ত হয়। ফলে কৃষিক্ষেত্র থেকে ধর্মযোদ্ধা সংগ্রহের কাজ ব্যাহত হয়।
(4) ধর্মযুদ্ধে বিমুখতা: পোপ এবং রাজন্যবর্গের স্বার্থদ্বন্দ্ব, ধর্মবহির্ভূত কার্যকলাপ, অকারণ রক্তপাত যথার্থ ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টান ধর্মযোদ্ধাদের ক্রমশ আন্দোলন বিমুখ করে তুলেছিল।
(5) নাইটদের অনিচ্ছা: কোনোরকম পারিশ্রমিক ছাড়া দূরবর্তী স্থানে গিয়ে যুদ্ধ করার আকর্ষণ নাইটরা হারিয়ে ফেলেছিল। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়াটাও তাদের পক্ষে ক্রমশ অসম্ভব হয়ে পড়ে।
(6) শাসকবর্গের অনাগ্রহ: ইউরোপের নৃপতি ও সামন্তপ্রভুরাও দীর্ঘস্থায়ী ধর্মযুদ্ধে লিপ্ত থাকতে অনাগ্রহী হয়ে ওঠেন। এইসব কারণে ক্রুসেড সংগঠন দুর্বল হয় এবং তা নীরবেই পরিত্যক্ত হয়। ক্রুসেড সফল না হওয়ার পিছনে আরও একটি প্রধান কারণ ছিল বিবিধ স্বার্থের দ্বন্দ্ব। বিভিন্ন বৃত্তির মানুষ বিভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে ক্রুসেডে যোগদান করেছিল, ফলে জেরুজালেম পুনরুদ্ধারের চেয়ে তারা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতেই বেশি আগ্রহী ছিল। নিজেদের প্রয়োজন মিটে গেলে তারাও ক্রুসেডে উৎসাহ হারিয়ে ফলে এবং ধীরে ধীরে ক্রুসেড পরিত্যক্ত হয়।
আরও পড়ুন –
১। সামন্ততন্ত্র বলতে কী বোঝায়?
২। ইউরোপের সামন্ততন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল?
৩। ‘ফিফ’ ও ‘শিভালরি বলতে কী বোঝো?
৪। সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার পতনের কারণ সম্পর্কে লেখো।
৫। ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের ইতিবাচক প্রভাবগুলি কী ছিল?
৬। ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের নেতিবাচক প্রভাবগুলি কী ছিল?
৭। পোপতন্ত্রের বিকাশের কারণগুলি লেখো।
৮। ইউরোপে মধ্যযুগকে ‘অন্ধকার যুগ (Dark Age) বলা কতটা যুক্তিসঙ্গত?
১০। সেন্ট বেনেডিক্ট-এর সংস্কারসমূহ সম্পর্কে লেখো।
১২। টীকা লেখো- ক্লুনির সংস্কার আন্দোলন।
১৩। ওয়ার্মস-এর চুক্তির তাৎপর্য লেখো।
১৪। ক্রুসেড’ কী?
১৫। ক্রুসেডের ধর্মীয় কারণ আলোচনা করো।
১৬। ক্রুসেড সংগঠনে খ্রিস্টান চার্চের ভূমিকা কী ছিল?
১৭। ক্রুসেডের অর্থনৈতিক কারণ আলোচনা করো।
১৮। ক্রুসেডের সামাজিক কারণ আলোচনা করো।
১৯। সামন্ততান্ত্রিক শোষণ ক্রুসেডের অন্যতম কারণ ছিল- ব্যাখ্যা করো।
২০। সাধারণ মানুষ কেন দলে দলে ক্রুসেডে যোগ দিয়েছিল।
২১। ক্রুসেডের প্রত্যক্ষ কারণ উল্লেখ করো।
২২। টীকা লেখো – প্রথম ক্রুসেড।
২৩। টীকা লেখো – দ্বিতীয় ক্রুসেড।
২৪। প্রথম চারটি ক্রুসেডের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
২৫। টীকা লেখো- শিশুদের ক্রুসেড।
২৬। পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম ক্রুসেডের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও