প্রথম চারটি ক্রুসেডের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও
একাদশ থেকে ত্রয়োদশ শতকের মধ্যে সর্বমোট আটটি ক্রুসেড সংঘটিত হয়েছিল।
(1) প্রথম ক্রুসেড (১০৯৫-১০৯৯ খ্রিস্টাব্দ)
১০৯৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১০৯৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কাল প্রথম ক্রুসেডের অন্তর্গত। পোপ দ্বিতীয় আরবানের আহ্বানে জার্মানি, ইটালি, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশের ধর্মযোদ্ধারা প্রথম ক্রুসেডে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১০৯৭ খ্রিস্টাব্দে ক্রুসেডাররা নিসিয়া, এডেসা, ১০৯৮ খ্রিস্টাব্দে অ্যান্টিওক শহর এবং ১০৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জুন জেরুজালেম দখল করে। প্রথম ক্রুসেডে প্রায় ষাট হাজার খ্রিস্টান যোগদান করেছিলেন, তাই এই ক্রুসেডকে জনগণের ক্রুসেডও (People’s Crusade) বলা হয়।
(2) দ্বিতীয় ক্রুসেড (১১৪৭ – ১১৫০ খ্রিস্টাব্দ)
পোপ তৃতীয় ইউজিন ১১৪৭ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় ক্রুসেডের ডাক দেন। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ক্রুসেডে যোগদান করেন জার্মান সম্রাট তৃতীয় কনরাড এবং ফরাসিরাজ সপ্তম লুই। কিন্তু দ্বিতীয় ক্রুসেডে খ্রিস্টানরা পরাজিত হয়।
(3) তৃতীয় ক্রুসেড (১১৮৭-১১৯২ খ্রিস্টাব্দ)
দ্বিতীয় ক্রুসেডের ব্যর্থতা মুসলমানদের সংঘবদ্ধতা ও খ্রিস্টানদের অন্তর্দ্বন্দ্বকে তুলে ধরে। জেরুজালেম ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে মুসলিম বিজয়ের সংবাদে আশঙ্কিত হয়ে পোপ অষ্টম গ্রেগরি (Pope Gregory VIII) তৃতীয় ক্রুসেডের ডাক দেন (১১৮৭ খ্রিস্টাব্দ)। এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম রিচার্ড (Richard।, যিনি তাঁর বীরত্বের জন্য Richard the Lionheart নামেও পরিচিত), ফরাসিরাজ ফিলিপ অগাস্টাস (Philip Augustus বা Philip II), পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের (জার্মানি) সম্রাট ফ্রেডরিখ বারবারোসা (Frederick Barbarossa বা Frederick ।) প্রমুখ জেরুজালেম উদ্ধারের শপথ গ্রহণ করেন। নিখুঁত পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও এই সকল মহান যোদ্ধাদের সমন্বয়ে ১১৮৯ খ্রিস্টাব্দে সূচনা হয় তৃতীয় ক্রুসেডের কিন্তু এবারেও পরাজিত হন খ্রিস্টান ধর্মযোদ্ধারা। জেরুজালেমে পৌঁছোনোর আগেই জাহাজডুবিতে প্রাণ হারান বারবারোসা। ইংল্যান্ডরাজ ও ফরাসিরাজ জড়িয়ে পড়েন অন্তর্দ্বন্দ্বে। তবে জেরুজালেম মুসলমানদের দখলে থাকলেও বলা হয়, খ্রিস্টান তীর্থযাত্রীরা সেখানে তীর্থ করতে আসতে পারবে।
(4) চতুর্থ ক্রুসেড (১২০২-১২০৪ খ্রিস্টাব্দ)
উচ্চাকাঙ্ক্ষী, ক্ষমতাগর্বী পোপ তৃতীয় ইনোসেন্ট (Pope Innocent III)-এর প্রচেষ্টায় ফ্ল্যান্ডার্স (Flanders) এবং শ্যাম্পেন (Champagne)-এর শক্তিশালী ফরাসি সামন্তপ্রভু এবং ইতালীয় মার্কুইস (Marquis) চতুর্থ ক্রুসেড সংগঠনের (১২০২-১২০৪ খ্রিস্টাব্দ) দায়িত্ব নেন। ইতিপূর্বে স্থলপথে পবিত্রভূমি অভিযানের ব্যর্থতাগুলির কথা বিবেচনা করে, এবার জলপথে ক্রুসেড অভিযানের উদ্যোগ শুরু হয়।
এই সময় প্রচার করা হয় যে, কনস্ট্যান্টিনোপল দখল করলে জেরুজালেমে অভিযান চালানো সহজ হবে। পোপ তৃতীয় ইনোসেন্ট খ্রিস্টান ধর্মযোদ্ধা কর্তৃক আর একটি খ্রিস্টান রাজ্য আক্রমণের বিরোধিতা করেন। কিন্তু পোপের নিষেধাজ্ঞা সম্পূর্ণ অমান্য করে তাঁরই ঝান্ডাবাহী ধর্মযোদ্ধার দল ভেনিসীয়দের নির্দেশে জারা (Zara) বন্দর জয় এবং কনস্ট্যান্টিনোপল আক্রমণ এবং দখল করে নেন (১২০৪ খ্রিস্টাব্দ)। লুণ্ঠন, হত্যা, ধ্বংস, অগ্নিসংযোগের মতো নৃশংস কর্মকাণ্ড দ্বারা স্বধর্মী মানুষের রক্তে রাঙা হয় খ্রিস্টান ধর্মযোদ্ধাদের হাত। অধরা থেকে যায় পবিত্রভূমি দখলের বাসনা। সব মিলিয়ে চতুর্থ ক্রুসেডও শেষ হয় ব্যর্থতার গ্লানির মাধ্যমে।
আরও পড়ুন –
১। সামন্ততন্ত্র বলতে কী বোঝায়?
২। ইউরোপের সামন্ততন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল?
৩। ‘ফিফ’ ও ‘শিভালরি বলতে কী বোঝো?
৪। সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার পতনের কারণ সম্পর্কে লেখো।
৫। ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের ইতিবাচক প্রভাবগুলি কী ছিল?
৬। ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের নেতিবাচক প্রভাবগুলি কী ছিল?
৭। পোপতন্ত্রের বিকাশের কারণগুলি লেখো।
৮। ইউরোপে মধ্যযুগকে ‘অন্ধকার যুগ (Dark Age) বলা কতটা যুক্তিসঙ্গত?
১০। সেন্ট বেনেডিক্ট-এর সংস্কারসমূহ সম্পর্কে লেখো।
১২। টীকা লেখো- ক্লুনির সংস্কার আন্দোলন।
১৩। ওয়ার্মস-এর চুক্তির তাৎপর্য লেখো।
১৪। ক্রুসেড’ কী?
১৫। ক্রুসেডের ধর্মীয় কারণ আলোচনা করো।
১৬। ক্রুসেড সংগঠনে খ্রিস্টান চার্চের ভূমিকা কী ছিল?
১৭। ক্রুসেডের অর্থনৈতিক কারণ আলোচনা করো।
১৮। ক্রুসেডের সামাজিক কারণ আলোচনা করো।
১৯। সামন্ততান্ত্রিক শোষণ ক্রুসেডের অন্যতম কারণ ছিল- ব্যাখ্যা করো।
২০। সাধারণ মানুষ কেন দলে দলে ক্রুসেডে যোগ দিয়েছিল।
২১। ক্রুসেডের প্রত্যক্ষ কারণ উল্লেখ করো।