ক্রুসেডের প্রত্যক্ষ কারণ উল্লেখ করো
অথবা,
ক্রুসেডে পোপ দ্বিতীয় আরবানের ভূমিকা কী ছিল
একাদশ শতকের সংস্কার আন্দোলনের ফলে চার্চ তথা পোপের কর্তৃত্বের মনোভাব প্রবল হয়ে ওঠে। সমগ্র খ্রিস্টান জগতের উপর পোপের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং বাইজানটাইন সাম্রাজ্যের উপর নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ লাভের আকাঙ্ক্ষায় পোপ দ্বিতীয় আরবান প্রথম ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের ডাক দেন। পোপের এই আহ্বানের পরেই শুরু হয় রক্তক্ষয়ী ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ।
ক্রুসেডে পোপ দ্বিতীয় আরবানের ভূমিকা / ক্রুসেডের প্রত্যক্ষ কারণ
মেক্সিকার্ট (Menzikert)-এর যুদ্ধে (১০৭১ খ্রিস্টাব্দ) বাইজানটাইন সম্রাট চতুর্থ রোমানোস (Romanos IV) দুর্ধর্ষ সেলজুক তুর্কি-সুলতান আলপ আর্সলান (Alp Arslan)-এর হাতে পরাজিত হন। সমস্ত আনাতোলিয়া সম্রাটের হস্তচ্যুত হয়। রুক্ষ ও অসহিষ্ণু সেলজুক তুর্কিরা জেরুজালেমে আগত খ্রিস্টান তীর্থযাত্রীদের নানাভাবে হেনস্থা করতে থাকে। ফলে ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টানদের মনে তীব্র ক্ষোভ সঞ্চারিত হয়। সম্রাট আলেক্সিয়াস কনিনাস (Alexius Comnenus, রাজত্বকাল ১০৮১-১১১৮ খ্রিস্টাব্দ) সেলজুকদের হাত থেকে খ্রিস্টান ধর্ম ও রোমের সিংহাসন বাঁচানোর তাগিদে পোপের সাহায্যপ্রার্থী হন। পোপ সপ্তম গ্রেগরি ইচ্ছা থাকলেও কিছু করতে পারেননি। পরবর্তী পোপ দ্বিতীয় আরবান (Pope Urban II, ১০৯১ খ্রিস্টাব্দ) সম্রাটের আর্তিতে সাড়া দেন। ক্ষমতালোভী পোপের লক্ষ্য ছিল, সংকটকালে ধর্মযুদ্ধের ডাক দিয়ে খ্রিস্টান জগতে পোপের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব স্থাপন করা। এমতাবস্থায় ১০৯৫ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ-পূর্ব ফ্রান্সের ক্লেরম বা ক্লেরমন্ট শহরে এক ধর্মসভা (Council of Clermont) আহ্বান করে পোপ দ্বিতীয় আরবান পবিত্র তীর্থভূমি জেরুজালেম উদ্ধারের লক্ষ্যে সকল স্তরের খ্রিস্টানদের ধর্মযুদ্ধে (ক্রুসেড) যোগদানের আহ্বান জানান। ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্যে হলেও নানা স্তর, নানা বৃত্তির খ্রিস্টান জনতা এই যুদ্ধে যোগ দেন। এইভাবে যে ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের সূচনা হয়, তা প্রায় দীর্ঘ দুশো বছর ধরে ইউরোপকে অশান্ত করে রেখেছিল।
মূল্যায়ন
ক্রিস্টোফার ব্রুকস-এর মতে, পোপ দ্বিতীয় আরবানের কাছে ক্রুসেড ছিল আসলে একটি আত্মরক্ষামূলক সামরিক অভিযান, যার মধ্যে ধর্মীয় উন্মাদনা জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। ঐতিহাসিক মার্গারেট ভিনস্লি বলেছেন, ক্রুসেডগুলি ছিল বিধর্মীর হাত থেকে পবিত্র জেরুজালেম উদ্ধারের জন্য ধর্মযুদ্ধ। প্রাথমিকভাবে এবং প্রধানত ধর্মীয় প্রয়োজনবোধ থেকেই ক্রুসেড সংগঠিত হয়েছিল। কিন্তু কালক্রমে ধর্মের উত্তেজনা প্রশমিত হয়ে ধর্মনিরপেক্ষ এবং বস্তুগত নানা বৈশিষ্ট্য এই সকল অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং আন্দোলনের চরিত্র পাল্টে যায়।
আরও পড়ুন –
১। সামন্ততন্ত্র বলতে কী বোঝায়?
২। ইউরোপের সামন্ততন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল?
৩। ‘ফিফ’ ও ‘শিভালরি বলতে কী বোঝো?
৪। সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার পতনের কারণ সম্পর্কে লেখো।
৫। ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের ইতিবাচক প্রভাবগুলি কী ছিল?
৬। ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের নেতিবাচক প্রভাবগুলি কী ছিল?
৭। পোপতন্ত্রের বিকাশের কারণগুলি লেখো।
৮। ইউরোপে মধ্যযুগকে ‘অন্ধকার যুগ (Dark Age) বলা কতটা যুক্তিসঙ্গত?
১০। সেন্ট বেনেডিক্ট-এর সংস্কারসমূহ সম্পর্কে লেখো।
১২। টীকা লেখো- ক্লুনির সংস্কার আন্দোলন।
১৩। ওয়ার্মস-এর চুক্তির তাৎপর্য লেখো।
১৪। ক্রুসেড’ কী?
১৫। ক্রুসেডের ধর্মীয় কারণ আলোচনা করো।
১৬। ক্রুসেড সংগঠনে খ্রিস্টান চার্চের ভূমিকা কী ছিল?
১৭। ক্রুসেডের অর্থনৈতিক কারণ আলোচনা করো।
১৮। ক্রুসেডের সামাজিক কারণ আলোচনা করো।
১৯। সামন্ততান্ত্রিক শোষণ ক্রুসেডের অন্যতম কারণ ছিল- ব্যাখ্যা করো।