ক্রুসেডের সামাজিক কারণ আলোচনা করো

ক্রুসেডের সামাজিক কারণ আলোচনা করো

অথবা,

ক্রুসেডের সামাজিক পটভূমি কী ছিল

অথবা,

ক্রুসেডের জন্য সামাজিক কারণ কতটা দায়ী

ক্রুসেডের সামাজিক কারণ আলোচনা করো
ক্রুসেডের সামাজিক কারণ আলোচনা করো

খ্রিস্টান, ইহুদি ও মুসলমানদের পবিত্রভূমি জেরুজালেমের উপর খ্রিস্টান না মুসলমান -কার কর্তৃত্ব বজায় থাকবে, তা নিয়ে প্রায় দুশো বছরব্যাপী যে ধর্মযুদ্ধ বা ক্রুসেড চলেছিল, তার পিছনে শুধু ধর্মীয় বা অর্থনৈতিক কারণই নয়, দায়ী ছিল সামাজিক কারণও।

ক্রুসেডের সামাজিক কারণসমূহ/পটভূমি

(1)  সামন্ত শ্রেণির লালসা: সামন্ততন্ত্রের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ক্রুসেডকে উৎসাহিত করেছিল। সামন্তরাজারা ক্ষমতা ও সম্পত্তি বৃদ্ধির জন্য সর্বদা একে অন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হতেন। এখন তারা আশান্বিত হন যে, ক্রুসেডের সূত্রে নতুন নতুন এলাকা তাদের দখলে আসবে। এইসব অধিকৃত অঞ্চলের লোকেদের ভূমিদাস হিসেবে জমিতে নিয়োগ করা যাবে। এহেন লালসাপূরণের লক্ষ্যে দলে দলে সামন্তপ্রভু ক্রুসেডের ডাকে এগিয়ে আসেন।

(2) নাইটদের উন্মাদনা: সামন্ততন্ত্রের প্রস্ফুটিত ফুল হিসেবে বন্দিত হতেন মধ্যযুগীয় নাইট (Knight) যোদ্ধা সম্প্রদায়। অভিজাত ও সাধারণ পরিবারের বহু যুবক নাইট নামক সুসজ্জিত, সুশিক্ষিত অস্ত্রধারী বাহিনীর সদস্য ছিলেন। এদের ক্রমবর্ধমান শক্তি ও ক্ষমতাদখলের উন্মাদনা রাজ্যগুলিতে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। এই যুদ্ধপ্রিয়, লুণ্ঠন মনোবৃত্তির যোদ্ধাদের দেশের বাইরে পাঠিয়ে তাদের যুদ্ধোন্মাদনা ও লুণ্ঠন-পিপাসা নিবৃত্ত করার একটা উদ্দেশ্য ক্রুসেড সংগঠনের পশ্চাৎপটে সক্রিয় ছিল। ক্রিস্টোফার ব্রুকস (Christopher Brooks) বলেছেন, পোপ দ্বিতীয় আরবানের কাছে ক্রুসেড ছিল আসলে একটি আত্মরক্ষামূলক সামরিক অভিযান, যার মধ্যে ধর্মীয় উন্মাদনা জুড়ে দেওয়া হয়েছিল।

(3) সামাজিক চাহিদা: পশ্চিম ইউরোপের অধিকাংশ অঞ্চলে প্রাইমোজেনিচার (Primogeniture) বিধান অনুসারে, পরিবারের সম্পত্তির (ফিফ) উপর কেবল জ্যেষ্ঠ পুত্রের অধিকার স্বীকৃত ছিল। পরিবারের কনিষ্ঠ পুত্রদের সম্পত্তির অংশ পাওয়ার কোনও সুযোগ ছিল না। সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত এই সকল ব্যক্তিদের বিকল্প জীবিকা ছিল যাজকবৃত্তি কিংবা অসৎ উপায়ে অর্থ সংগ্রহ করা। এই সামাজিক সমস্যাসমাধানের অন্যতম উপায় হিসেবে পোপ এই শ্রেণির মানুষদের ক্রুসেডে অংশ নিয়ে ভাগ্য ফেরানোর স্বপ্ন দেখান। ভাগ্যান্বেষণ এবং ধর্মীয় কর্তব্যপালনের দ্বৈত প্রেরণা অসংখ্য মানুষকে ক্রুসেড জাতীয় আন্দোলনে শামিল করে।

(4) দাসত্ব থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা: এসময় প্রচার করা হয় যে, ভূমিদাসরা ক্রুসেডে যোগদান করলে, তাদের দাসত্ব থেকে মুক্তি প্রদান করা হবে। কাজেই যুদ্ধশেষে মুক্ত জীবনের আশায় ভূমিদাসেরা ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধে অংশ নেয়।

(5) খ্রিস্টান ধর্মান্ধতা: ইউরোপে একাদশ শতক নাগাদ নর্ম্যান, ম্যাগিয়ার ও ভূমিদাসরা খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করলে একদিকে যেমন খ্রিস্টানদের সংখ্যা বহুল পরিমাণে বৃদ্ধি পায়, অন্যদিকে পোপ সপ্তম গ্রেগরির মানসিকতার প্রভাবে তারা হয়ে ওঠেন উগ্র সাম্প্রদায়িক। এই খ্রিস্টান ধর্মান্ধতাও ক্রুসেডের একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক কারণ হিসেবে চিহ্নিত। এইভাবে ধর্ম, অর্থ, মোক্ষ এবং ক্ষমতালিপ্সা একীভূত হয়ে ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের মধ্যে প্রকাশ পায়।

(6) সাংস্কৃতিক সংঘাত: ইসলাম ধর্মগ্রহণের পর আরব জাতি এক উন্নত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অধিকারী হয়। শিল্প-স্থাপত্য, শিক্ষা-সাহিত্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাদের অবদান গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এতকাল রোমান ও গ্রিকরা উন্নত সভ্যতা-সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে নিজেদের আধিপত্য জাহির করত। এখন ইসলামের সাংস্কৃতিক গরিমা তাদের অহমকে আঘাত করে। তাই ইসলামীয় সংস্কৃতির ধ্বংস ও গ্রিকো-রোমান সংস্কৃতির আধিপত্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে তারা ক্রুসেডকে বেছে নেন।

আরও পড়ুন –

১। সামন্ততন্ত্র বলতে কী বোঝায়?

২। ইউরোপের সামন্ততন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল?

৩। ‘ফিফ’ ও ‘শিভালরি বলতে কী বোঝো?

৪। সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার পতনের কারণ সম্পর্কে লেখো।

৫। ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের ইতিবাচক প্রভাবগুলি  কী ছিল?

৬। ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের নেতিবাচক প্রভাবগুলি কী ছিল?

৭। পোপতন্ত্রের বিকাশের কারণগুলি লেখো।

৮। ইউরোপে মধ্যযুগকে ‘অন্ধকার যুগ (Dark Age) বলা কতটা যুক্তিসঙ্গত?

৯। মঠজীবনবাদ বলতে কী বোঝো?

১০। সেন্ট বেনেডিক্ট-এর সংস্কারসমূহ সম্পর্কে লেখো।

১১। ইনভেস্টিচার দ্বন্দ্ব কী?

১২। টীকা লেখো- ক্লুনির সংস্কার আন্দোলন।

১৩। ওয়ার্মস-এর চুক্তির তাৎপর্য লেখো।

১৪। ক্রুসেড’ কী?

১৫। ক্রুসেডের ধর্মীয় কারণ আলোচনা করো।

১৬। ক্রুসেড সংগঠনে খ্রিস্টান চার্চের ভূমিকা কী ছিল?

১৭। ক্রুসেডের অর্থনৈতিক কারণ আলোচনা করো

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment