খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা
"..... আলো চাই, চাই মুক্ত বায়ু চাই বল, চাই স্বাস্থ্য, আনন্দ, উজ্জ্বল পরমায়ু সাহসবিস্তৃত বক্ষপট।"
আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু লাভের অধিকারী হতে গেলে খেলাধুলা তথা শরীরচর্চাকে অবলম্বন করতেই হবে। সুস্থ দেহ, সুস্থ মনের অধিকারী মানব বিকাশের জন্য যেমন প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের প্রয়োজন, তেমনি সুস্থ শরীরের জন্য প্রয়োজন খেলাধুলার চর্চা। খেলাধুলা আমাদের প্রাণের ধর্ম, মনের বিকাশ আর হৃদয়ের প্রশান্তি। প্রাচীনকাল থেকে একথা বিশেষভাবেই স্বীকৃত হয়ে আসছে যে, ‘All work and no play makes Jack a dull boy.” ছাত্রদের অধ্যয়নই তপস্যা কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, শুধুমাত্র বই-বন্দি হয়ে থাকলেই চলবে না, খেলাধুলার বিস্তৃত অঙ্গনে নেমে আসতে হবে সুস্থ সবল জীবনের জন্য, তেজোময় জাতি গঠনের জন্য।
সর্বাঙ্গীণ বিকাশে খেলাধুলার ভূমিকা
শিক্ষার মাধ্যমেই ব্যক্তিত্বের বিকাশ হয় একথা দিনের আলোর মতো সত্য। আনন্দপূর্ণ খেলাধুলার মাধ্যমে শিশু-কিশোর-বালক-বালিকাদের ব্যক্তিত্বের পূর্ণাঙ্গ বিকাশসাধন সম্ভবপর। খেলাধুলার চর্চা না করলে অসুস্থ, নানা রোগে জীর্ণ নাগরিক সমাজ কখনোই জাতি গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে না। খেলাধুলার ব্যাপক চর্চা ছাত্রজীবনে আনতে পারে নব উদ্দীপনার জোয়ার। মানবিক গুণাবলির যথার্থ বিকাশে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অনস্বীকার্য। তাই খেলাধুলাকে বিদ্যালয়ের পাঠক্রমে আর ‘Extra curricular activ- ity’ না বলে ‘Co-curricular activity’ হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
শৃঙ্খলাবোধে খেলাধুলা
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন-“যে সমাজে শৃঙ্খলা আছে, ঐক্যের বিধান আছে, সকলের স্বতন্ত্র স্থান ও অধিকার আছে, সেই সমাজে পরকে আপন করিয়া লওয়া সহজ”-সুশৃঙ্খল ছাত্রসমাজ আগামী দিনের সুসংঘবদ্ধ জাতি। পৃথিবী যেমন শৃঙ্খলার অভ্রান্ত অনুসরণে এগিয়ে চলেছে তেমনি ছাত্রসমাজ যদি সুশৃঙ্খলভাবে ও নিয়মনীতিবদ্ধভাবে পরিচালিত হয়, তবে সমাজের উন্নতি, সমষ্টির উন্নতি তথা জাতির উন্নতি। খেলাধুলা এই শৃঙ্খলা রচনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দাবি করে। প্রকৃতপক্ষে খেলাধুলা জীবনকে একটা শৃঙ্খলার নিয়মে আবদ্ধ করে, সময়ানুবর্তিতা খেলাধুলার একটি বিশেষ ধর্ম যা শৃঙ্খলা রচনায় সার্বিক ভূমিকা গ্রহণ করে। যে-কোনো খেলাধুলার ক্ষেত্রেই একজন খেলোয়াড়কে খেলাধুলার নিয়মকানুনগুলো বাধ্যতামূলকভাবে মেনে চলতে হয়, ফলে নিয়মানুবর্তিতা ও সময়ানুবর্তিতার পাঠ খেলাধুলাকে কেন্দ্র করেই বিকশিত হয়।
শিক্ষার অঙ্গ হিসেবে খেলাধুলা
খেলোয়াড়সুলভ মনোভাব যথার্থভাবে আমাদের জীবনের সাফল্য ও ব্যর্থতাকে গ্রহণ করতে শেখায়। ছাত্রসমাজের মানসিক বিকাশ ও বুদ্ধির বিকাশের ক্ষেত্রে খেলাধুলা এনে দেয় উপযুক্ত পরিবেশ। আমাদের আত্মবিকাশ, লড়াইয়ের মনোভাব বহুগুণে বর্ধিত হয় শরীরচর্চায়। প্রতিটি ইন্দ্রিয় সবল ও সুস্থ হয়ে ওঠে খেলাধুলায় নিয়মিত অংশগ্রহণে। ছাত্রজীবনে খেলাধুলা শুভ ফলদায়ক বলেই আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় খেলাধুলাকে পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, শুধু তাই নয়, বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে কৃতি খেলোয়াড়দের জন্য সংরক্ষণ প্রথাও চালু করা হয়েছে।
বলিষ্ঠ চরিত্র গঠনে খেলাধুলা বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে, হৃদয়ের প্রসারতা বাড়ায়, সংকীর্ণতা দূর করে এবং হৃদয়ে আনে উৎসাহ ও উদ্দীপনার হিল্লোল। সমষ্টিবোধ ও নেতৃত্বদানের কুশলতা বৃদ্ধি পায় খেলাধুলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে। বিশেষত, দলগত খেলায় দলনায়কের নেতৃত্বদানের অসামান্য ক্ষমতার গুণে দল বিজয়ীর মুকুট পরতে পারে। ব্যক্তিস্বার্থকে বাদ দিয়ে সমষ্টিগত স্বার্থের দিকটি বিশেষভাবে গ্রহণীয়-এই বোধ বা চেতনা সঞ্চারিত হয় খেলাধুলায় আবশ্যিক অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে।
জাতীয় উন্নয়নে খেলাধুলা
যে-কোনো প্রগতিশীল দেশ খেলাধুলাকে বিশেষ মর্যাদা দান করে। কারণ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে দেশের মর্যাদা ও সম্মান সম্যকভাবে বৃদ্ধি পায়। বিশেষত আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি আন্তর্জাতিক স্তরে নিজেদের খ্যাতি প্রতিষ্ঠার জন্য খেলাধুলাকে মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করে। এ কারণেই অলিম্পিক গেমস, কমনওয়েলথ গেমস, এশিয়ান গেমস, সাফ গেমস ও বিশ্বকাপ ক্রিকেট এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতায় আমাদের দেশ অংশগ্রহণ করে। জাতির পরিচয় লিপিবদ্ধ হয় খেলাধুলার সবুজ মাঠে।
উপসংহার
"ডাকছে আকাশ, ডাকছে বাতাস ডাকছে মাঠের সবুজ ঘাস ও ছেলেরা খেলা ফেলে শুধুই কেন পড়তে যাস।"-
সবুজ মাঠের হাতছানি এড়িয়ে ব্যাগের বোঝা কাঁধে নিয়ে এগিয়ে চলাটাই জীবন নয়। সবুজ মাঠকে পড়ার চাপে না ছুঁতে পারলে কচিকাঁচা কিশলয়ের ফলে পরিণত হয়ে যৌবনের শ্যামল গৌরবে গর্বিত হওয়া সম্ভব নয়। মানসিক ও বৌদ্ধিক বিকাশের প্রয়োজনে খেলাধুলোকে গুরুত্ব দিতেই হবে, না-হলে আগামী প্রজন্ম প্রকৃত মানব না হয়ে যন্ত্রমানবে পরিণত হবে। তাই জীবনের মাটিকে সতেজ ও সরস করতে হলে খেলার মাঠে নেমে পড়তেই হবে সকল শিক্ষার্থীকে।
আরও পড়ুন –
১। পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা
২। পরিবেশ রক্ষায় অরণ্য – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা
৩। পরিবেশ বনাম উন্নয়ন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৪। বিশ্ব উষ্ণায়ন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৫। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৬। মানবজীবনে পরিবেশের প্রভাব – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৭। বিজ্ঞানচেতনার প্রসারের প্রয়োজনীয়তা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৮। বিজ্ঞানচেতনা ও কুসংস্কার – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৯। কম্পিউটার ও আধুনিক জীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা