৯৫ দফা প্রতিবেদন’ বা ‘Ninety Five Theses’ কী

৯৫ দফা প্রতিবেদন’ বা ‘Ninety Five Theses’ কী

অথবা, মার্টিন লুথারের ৯৫ থিসিস কীভাবে ক্যাথলিক চার্চব্যবস্থা ও যাজকতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল

৯৫ দফা প্রতিবেদন' বা 'Ninety Five Theses' কী
৯৫ দফা প্রতিবেদন’ বা ‘Ninety Five Theses’ কী

৯৫ দফা প্রতিবেদন বা Ninety Five Theses

ইউরোপে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ঘোষিত মূল কারণ ছিল, বিপথগামী ক্যাথলিক চার্চ এবং যাজকতন্ত্রের অনাকাঙ্ক্ষিত স্বেচ্ছাচার থেকে খ্রিস্ট ধর্মকে মুক্ত করা। মার্টিন লুথার ছিলেন এই প্রতিবাদী আন্দোলনের পুরোধা। ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে জার্মানিতে মুক্তিপত্র বিক্রির বিরোধিতায় তিনি ৯৫ দফা প্রতিবেদন (Ninety Five Theses) লেখেন এবং এই দলিলটির মাধ্যমে তিনি চার্চব্যবস্থার অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

(1) পটভূমি: ইউরোপে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের পূর্বে খ্রিস্টান চার্চব্যবস্থা এবং পোপতন্ত্রের অধঃপতন ঘটেছিল। সেযুগে ধর্মের ধ্বজাধারী পোপ বা যাজকরা বিভিন্ন কৌশলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল মার্জনাপত্র বিক্রয়ের বিষয়টি। আগে ক্যাথলিক চার্চব্যবস্থায় ইনডালজেনস (Indulgence) বা মুক্তিপত্র বিক্রয়ের প্রথা প্রচলিত ছিল। এর মাধ্যমে মানুষ টাকার বিনিময়ে মুক্তিপত্র কিনে যাজকের আশীর্বাদে নিজেদের পাপমোচন করতেন। মার্টিন লুথার যাজকদের এই দাবিকে নস্যাৎ করতে উদ্যত হন। ঘটনাচক্রে রোমের সেন্ট পিটারস চার্চের সংস্কারহেতু অর্থসংগ্রহের জন্য ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে সন্ন্যাসী জোহান টেটজেল মার্জনাপত্র বিক্রি করতে জার্মানির উইটেনবার্গে আসেন। এর বিরুদ্ধে লুথার ক্ষোভে ফেটে পড়েন।

(2) ৯৫ দফা প্রতিবেদন রচনা: মার্টিন লুথার বুঝতে পেরেছিলেন যে, ক্যাথলিক পোপ ও যাজকগণ বাইবেলে বর্ণিত আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছেন। তিনি এইরূপ চিন্তাধারা থেকে এক দীর্ঘ প্রশ্নমালা তৈরি করেন। এটি ৯৫ দফা প্রতিবেদন বা নাইনটি ফাইভ থিসিস নামে খ্যাত। এই ঘোষণাপত্রটি তিনি ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে ৩১ অক্টোবর All Saints day-র প্রাক্কালে উইটেনবার্গ ক্যাসল চার্চের দরজায় ঝুলিয়ে দেন।

(3) লুথারের ধারণা: মার্টিন লুথার বিশ্বাস করতেন যে, মানুষের পাপ-পুণ্যের বিচার এবং তা থেকে মুক্তিদানের কাজে যাজকদের কোনও বিশেষ ক্ষমতা থাকতে পারে না। একজন যাজক ও একজন গৃহী মানুষ তাদের কৃতকর্মের জন্য একইভাবে ঈশ্বরের কাছে দায়বদ্ধ। খ্রিস্টান ধর্মের একমাত্র কর্তৃপক্ষ হল বাইবেল এবং স্বয়ং পোপের কর্তৃত্বও বাইবেল দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত। একজন প্রকৃত খ্রিস্টানের প্রধান পরিচয় হল প্রকাশিত সত্যকে অনুধাবন (Revealed Truth)। একমাত্র ‘বিশ্বাস’ দ্বারা প্রকাশিত সত্যকে অনুধাবন করা সম্ভব। মার্জনাপত্র কখনোই বিশ্বাসের স্থান নিতে পারে না। তিনি এই মার্জনাপত্র বিক্রয়কে মানুষের সঙ্গে প্রবঞ্চনা এবং চার্চ ও যাজকদের ধর্মের অজুহাতে সম্পদ সংগ্রহের অপচেষ্টা বলে প্রচার করেন।

(4) প্রতিক্রিয়া: ৯৫ দফা প্রতিবেদন বা নাইনটি ফাইভ থিসিসের অসংখ্য মুদ্রিত অনুলিপি কয়েকমাসের মধ্যেই ইউরোপের নানান প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এটি ক্যাথলিক চার্চের বিরুদ্ধে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এই ঘোষণাপত্র প্রকাশের ফলস্বরূপ খ্রিস্টান ধর্মজগতে এক নয়া মোড় আসে এবং সূচনা হয় প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কারের।

আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment