সুফিবাদের উপর অন্যান্য সাহিত্য ও দর্শনের প্রভাব লেখো। সুফিবাদের উপর ভারতীয় প্রভাব কতটা ছিল
সুফিবাদের উপর অন্যান্য সাহিত্য ও দর্শনের প্রভাব
সুফি মতবাদ এসেছে ইসলাম থেকেই, আর এই সুফিবাদের ভিত্তি হল কোরান। কিন্তু সমকালীন ধর্মতত্ত্ব ও সাহিত্যসমূহ এই সুফিবাদকে যথেষ্ট প্রভাবিত করেছিল।
(1) খ্রিস্টান ধর্মতত্ত্বের প্রভাব: প্রাথমিকভাবে এই মতবাদ খ্রিস্টান ধর্মতত্ত্বের সংস্পর্শে এসে নতুন গতিবেগ পেয়েছিল। বিধিগতভাবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা বা ঈশ্বরকে স্মরণ করা এবং ইহজাগতিক বিষয়ে অনাসক্তি -এই দুইভাবে খ্রিস্টবাদ সুফিবাদকে প্রভাবিত করেছিল। নবম শতকে আরবি ভাষায় গ্রিক সাহিত্যের অনুবাদ শুরু হলে সুফিবাদ এক নবপ্রেরণা লাভ করে। নব্য প্লেটোনিক মতবাদ (Neo Platonism) একদিকে যেমন সুফিদের ঈশ্বরের প্রতি আস্থা গভীরতর করে, তেমনই আত্মনিবেদনের চেতনা বৃদ্ধি এবং সর্বেশ্বরবাদের ধারণাকেও পুনরুজ্জীবিত করে তোলে। তবে অনেক ঐতিহাসিকের মতে, খ্রিস্ট ধর্ম ছাড়াও পরবর্তীতে সুফিবাদের উপর ভারতের বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মদর্শন এবং সাহিত্যেরও যথেষ্ট প্রভাব পড়েছিল।
সুফিবাদের উপর ভারতীয় প্রভাব
সুফিবাদের উৎস হজরত মহম্মদের আদর্শ এবং পবিত্র কোরান হলেও এর উপর ভারতীয় প্রভাবও লক্ষণীয়। এর কারণগুলি হল-
(1) অতি প্রাচীনকাল থেকে ভারতের সঙ্গে আরব দেশগুলির বাণিজ্যের সূত্রে ভারতীয় দর্শন, গণিত ও অন্যান্য বিদ্যার সঙ্গে আরবরা পরিচিত হয়।
(2) বহু হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে তাদের সংস্কৃতি ইসলামে রূপান্তরিত হয়।
(3) হিন্দু ও বৌদ্ধদের অনেক লোককথা, নীতি ও যোগশাস্ত্র বিষয়ক কাহিনির আরবি অনুবাদ হলে বা লোকপরম্পরায় প্রচলিত হলে তা সুফিবাদের উপর প্রভাব বিস্তার করে।
(1) প্রভাবসমূহ:
- চার অঙ্গীকার: শুদ্ধতা (Purity), পবিত্রতা (Cleanliness), দারিদ্র্য (Poverty) ও সততা (Truth) -সুফি ভাবধারার এই চারটি অঙ্গীকার হিন্দুদর্শন থেকেই জন্ম নিয়েছিল।
- জপমালার ব্যবহার: সুফিসাধকেরা হিন্দুদের মতোই জপমালার ব্যবহার করতে থাকেন। পাশাপাশি বৌদ্ধদর্শন থেকেই তাঁরা লাভ করেন আর্য-অষ্টাঙ্গমার্গ (সালুক) এবং নির্বাণ (ফানা)-এর ধারণা।
- বই অনুবাদ : ঐতিহাসিক সতীশচন্দ্রের মতে, মধ্য এশিয়ায় ইসলামের আবির্ভাবের বহু পূর্ব হতেই বৌদ্ধ ধর্ম পরিচিত ছিল। আবার পশ্চিম এশিয়ায় বহু হিন্দু যোগীরও যাতায়াত ছিল যথেষ্ট। এই সময় সংস্কৃতে রচিত অমৃত কুণ্ড নামক যোগসাধনার একটি বই প্রথমে আরবি ও পরে ফারসি ভাষায় অনূদিত হয়। এর ফলে সুফিরা হিন্দু ও বৌদ্ধ যোগসাধকদের ধর্মাচরণ পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হন।
- সাধন পদ্ধতি: তাছাড়া সুফিসাধকদের পালনীয় সাধন পদ্ধতি চিল্লা (নির্জন কক্ষে ৪০ দিন একান্তে সাধনা), পাস-ই-আনপাস (ধ্যানে লিপ্ত থাকা), চিল্লা-ই-মা-কুস (৪০ দিন গাছের ডালে পদবন্ধন করে মাথা নীচে রেখে সাধনা) ইত্যাদি বৌদ্ধ, জৈন ও হিন্দু ধর্ম থেকেই গৃহীত হয়েছিল বলে অনুমিত হয়।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর