সামন্ততান্ত্রিক শোষণ ক্রুসেডের অন্যতম কারণ ছিল- ব্যাখ্যা করো
সামন্ততান্ত্রিক শোষণ ক্রুসেডের অন্যতম কারণ ছিল-ব্যাখ্যা
১০৯৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২৯১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় ২০০ বছরব্যাপী সংঘটিত ক্রুসেডের পশ্চাৎপটে যেসকল কারণ দায়ী ছিল, তার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, সামন্ততান্ত্রিক শোষণ। সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় সামন্তপ্রভুরা কৃষক ও ভূমিদাসদের উপর অত্যাচার চালাতেন। এই শোষণের মাত্রা সর্বত্র সমান ছিল না, কোথাও কোথাও তার তীব্রতা অমানুষিক পর্যায়ে পৌঁছেছিল। ফলে ভূমিদাস ও কৃষকরা ক্রুসেডে যোগদান করে নিজেদের এই দুরবস্থার অবসান ঘটাতে চেয়েছিল।
(1) অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি: সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় কৃষক শ্রেণি (স্বাধীন কৃষক, ভিলেন, সার্ফ প্রমুখ) নানান করভারে জর্জরিত ছিল। তাদের ক্যাপিটেশন (Capitation), টেইলে (Taille), প্রেসটেশন (Prestation), করভি (Corvee), টাইথ (Tithe) ও অন্যান্য বিভিন্ন কর দিতে হত। এমনকি করপ্রদানে ব্যর্থ কোনও কৃষকের মৃত্যু ঘটলেও তার পরিবার রক্ষা পেত না। ক্রুসেডে যোগদানের মাধ্যমে তারা নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি চেয়েছিল।
(2)সামন্ত প্রভুদের অত্যাচার থেকে নিষ্কৃতি: সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় কৃষকদের মধ্যে ভূমিদাস বা সার্ফদের অবস্থা ছিল সবচেয়ে শোচনীয়। সামন্তপ্রভুরা তাদের উপর অকথ্য দৈহিক ও মানসিক অত্যাচার চালাতেন। এই নির্মম অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কৃষক শ্রেণি ক্রুসেডে যোগদান করে।
(3) সার্ফদের মুক্তিলাভের আশা: সামন্ততন্ত্রে সার্ফ বা ভূমিদাসরা এক ধরনের ভূমিদাসত্ব (Serfdom)-এর বন্ধনে আবদ্ধ ছিল। একজন ভূমিদাসের পুত্র-কন্যারাও ভূমিদাসই হত। ক্রুসেডের সময় পোপ দ্বিতীয় আরবান ক্লেরমন্ট ধর্মসম্মেলনে ঘোষণা করেন যে, ক্রুসেডে যোগদানকারী সার্ফরা যুদ্ধশেষে ভূমিদাসত্ব থেকে মুক্তিলাভ করবে ও স্বাধীন নাগরিক হিসেবে জীবন শুরু করতে পারবে। ভূমিদাসত্ব থেকে মুক্তিলাভের আশাই ভূমিদাসদের ক্রুসেডে যোগদান করতে উৎসাহী করে তুলেছিল।
(4) স্বর্গলাভের আকাঙ্ক্ষা: পোপ ঘোষণা করেছিলেন যে, ক্রুসেডের যুদ্ধে যদি কেউ মারা যায়, তাহলে সে যেমন শহীদের মর্যাদালাভ করবে, তেমনই তার মৃত্যুর পর স্বর্গলাভও হবে। এই ঘোষণার ফলে অগণিত কৃষক, ভূমিদাস ও ভবঘুরে পোপের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ক্রুসেডে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
মূল্যায়ন
উপরোক্ত কারণগুলির পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় আটকে পড়া কৃষক শ্রেণি দীর্ঘকালের অত্যাচার ও শোষণ থেকে মুক্তির পথ খুঁজছিল। এমতাবস্থায় পোপের ঘোষণা তাদের মনে নতুন আশার সঞ্চার করে। স্বাধীনভাবে নতুন জীবন লাভের স্বপ্ন তাদের ক্রুসেডে যোগদানে উদ্দীপিত করে তোলে। অধ্যাপক বার্কার তাই সামন্ততান্ত্রিক শোষণকেই ক্রুসেডের জন্য দায়ী করেছেন।
আরও পড়ুন –
১। সামন্ততন্ত্র বলতে কী বোঝায়?
২। ইউরোপের সামন্ততন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল?
৩। ‘ফিফ’ ও ‘শিভালরি বলতে কী বোঝো?
৪। সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার পতনের কারণ সম্পর্কে লেখো।
৫। ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের ইতিবাচক প্রভাবগুলি কী ছিল?
৬। ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের নেতিবাচক প্রভাবগুলি কী ছিল?
৭। পোপতন্ত্রের বিকাশের কারণগুলি লেখো।
৮। ইউরোপে মধ্যযুগকে ‘অন্ধকার যুগ (Dark Age) বলা কতটা যুক্তিসঙ্গত?
১০। সেন্ট বেনেডিক্ট-এর সংস্কারসমূহ সম্পর্কে লেখো।
১২। টীকা লেখো- ক্লুনির সংস্কার আন্দোলন।
১৩। ওয়ার্মস-এর চুক্তির তাৎপর্য লেখো।
১৪। ক্রুসেড’ কী?
১৫। ক্রুসেডের ধর্মীয় কারণ আলোচনা করো।
১৬। ক্রুসেড সংগঠনে খ্রিস্টান চার্চের ভূমিকা কী ছিল?