শীতের সকাল রচনা
শীতের সকাল রচনা
ভূমিকা
পুব দিগন্তে সূর্যের রক্তিম হাতছানি। বনান্তরে পাখির আনন্দমুখর রাগিনী। হিমের রেশমী চাদরের অবগুন্ঠনে মুখ ঢেকে সূর্য ধীরে ধীরে উঁকি মারছে। পাখির কলরবে স্নিগ্ধ-শীতের সকাল জেগে উঠল। আনন্দের জোয়ারে প্লাবিত হল দিক-দিগন্ত।
সূর্যোদয়ের প্রাক্কালে শীতের সকাল
জানলার ফাঁকে ভীরু সূর্যালোকের কোমল স্পর্শে শীতের কাঁপুনি। শরীর লেপের তলায় জড়সড় তখন। ইচ্ছে করছেনা লেপ সরিয়ে বিছানা থেকে উঠি। শীত হিংস্র সিংহের মতো কেশর ফুলিয়ে যেন এগিয়ে দিচ্ছে তার থাবা। দুর্নিবার আলস্য ঘিরে ধরে সমস্ত চেতনাকে। তন্দ্রা-বিজড়িত চেতনায়ও দূর-দূরান্তের বনাঞ্চল থেকে ভেসে আসে পাখির কুজন, কখনও দু-একজন পথিকের অস্পষ্ট কথোপকথন। আশ্চর্য এক নিস্তব্ধতায় মগ্ন পৃথিবী ধীরে ধীরে জেগে উঠছে, এমন পরিস্থিতিতে দেখলাম কোনও এক শীতের বুড়ি কুয়াশার কম্বলা জড়ানো গায়ে, গাছের পাতা কুড়িয়ে জড়ো করে আগুন ধরাল তার হিমশীতল শরীরকে উত্তপ্ত করার জন্য।
অন্য শিহরণ
শীতের সকাল সে এক অন্য শিহরণ। ক’দিন আগে সোনালী ধান খেত পাকা ধানে ভরে গেছল। ধান কাটা হয়ে ঘেছে। গ্রাম-গঞ্জে নবান্নের সমারোহ, বাড়িতে বাড়িতেও। দূর থেকে বাতাসে ভেসে আসে খেজুরগুড়ের গন্ধ। সরষে খেতে যেন হলুদের বন্যা। মৌমাছির গুঞ্জনে কাঁপছে নরম রোদ্দুর। গাছপালা ঝোপঝাড় শীতে জড়সড়। গাছের পাতা থেকে গড়িয়ে পড়ছে চোখের জলের মতো ফোঁটা ফোঁটা শিশির বিন্দু, শিশির চোখে তাকিয়ে আছে দূর্বা ঘাস। কখনও মনে হচ্ছে শিশির নয়, মুক্তো-হীরের দ্যুতি।
শীতের অবগুন্ঠন উন্মোচন
কুয়াশার ঘোমটার আবরণ উন্মোচন করে সূর্য সপ্ত-রঙিন রথে শুরু করে পরিক্রমা বেলা বাড়ার সাথে সাথে। পাখিরা ব্যস্ত নিজের কাজে। দা-চরা, কাদা খোঁচা, বক প্রভৃতি পাখির জটলা নদীর চরে। শীতের সকাল এখন কর্মচঞ্চল।
অলস সকালের মন মোহিনী রূপ
ফল ও ফুলের গয়না পরেছিল শরতের গাছপালা। হাওয়ায় দোল খেতে খেতে হাসছিল। এখন ঝরে পড়ছে পাতাগুলো। ধান কাটার পরে ধূ ধূ করছে মাঠগুলো। ধরা পাতার মর্ম্মর শব্দে করুণ বেদনার মূর্ছনা, উত্তরে হাওয়ার হাহাকার কেঁদে বেড়ায়। কোথাও আমমুকুল চুঁইয়ে পড়া শিশির বিন্দুর শব্দ শরতের সকালের নৈশব্দকে ভেঙে করে খান খান। মাথায় করে নিয়ে আসা বা গোরুর গাড়ি বোঝাই পাকা ধানের সুঘ্রানে বাতাস আনন্দে মাতোয়ারা।
শহরের শীতের সকাল
এখানে নাই তেমন গাছপালা, পুকুর, খাল-বিল; এখানের শীতের সকালের অন্যরূপ। কাকের ডাকে বা গাড়ির শব্দে এখানের শীতের সকালের ঘুম ভাঙে। রাস্তার পোস্টের লাইটের চোখ তখনও ঘুমে ঢুলু ঢুলু। সারা রাতের শীতের কাঁপুনিতে লাইটের চোখ বেয়ে চোখের জলের মতো গড়িয়ে পড়ছে শিশির বিন্দু। শহরের শীতের সককালের বাতাস খেজুর রসের গন্দে উত্তাল হয় না, তার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় ধূলো আর কলকারখানার বিষাক্ত ধোঁয়ার জন্য। এখানে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না ইট-পাথরের মধ্যে গ্রামের বাংলার উদাস-করুণ শীতের সকালের ধ্যান-সমাহিত স্নিগ্ধ-মধুর রূপটিকে।
উপসংহার
শরতের বিদায়ের পরে শীতের আগমন। আবার শীত চলে যায় বসন্তকে অহ্বান জানিয়ে। শীতের সকালের প্রধান আকর্ষণ খেজুর রস, নলেনগুড়, পিঠা পায়েস, নানা ধরনের মেলার সমরোহ গ্রাম-প্রান্তরে। শীতের আগমন ঘটে বর্ষা ও শরৎকে বিদায় জানিয়ে ও চলে যাওয়ার আগে আহ্বান জানায় বসন্তকে ফলে-ফুলে-পত্রে সৌরভে ভরিয়ে দিতে ধরিত্রীর বুক।
আরও পড়ুন – পরিবেশ দূষণ রচনা