রেনেসাঁ শিক্ষার মধ্যে শরীরচর্চা ও খেলাধুলা কীভাবে প্রতিভাত হয়েছিল
মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা ও সহজাত গুণাবলিকে যথার্থ শিক্ষার মাধ্যমে বিকশিত করে রুচিবান, উদারমনস্ক, সভ্য ও স্বাধীন নাগরিক সৃষ্টি অর্থাৎ পূর্ণ মানুষ গঠন করা ছিল রেনেসাঁ শিক্ষার উদ্দেশ্য। এই শিক্ষাব্যবস্থায় ইতিহাস, দর্শন, শিল্পকলা, ধ্রুপদি সাহিত্য, গ্রিক, ল্যাটিন, হিব্রু ইত্যাদি বিষয়ের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের শরীরচর্চা ও খেলাধুলাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।
রেনেসাঁ শিক্ষার মধ্যে শরীরচর্চা ও খেলাধুলা
দৈহিক অনুশীলন, দৈহিক সুস্থতা এবং স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করে এই চিন্তার বশবর্তী হয়ে রেনেসাঁ শিক্ষায় শরীরচর্চার গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়।
(1) গ্রিক ঐতিহ্যের প্রভাব: মূলত গ্রিক-ঐতিহ্য থেকে এই ধারণা রেনেসাঁ বা মানবতাবাদী শিক্ষায় সংযোজিত হয়েছে। গ্রিকরা মনে করত যে, জীবনের আনন্দ ও পরিণতি স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য ও জ্ঞানলাভের সমন্বয়েই সম্ভব। মানবতাবাদীরা মনে করেন যে, শরীর ও মন-দুটোই সুস্থ-সবল থাকলে মানুষের বৌদ্ধিক ও নৈতিক গুণাবলির পূর্ণ বিকাশ সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে অ্যারিস্টটলের অভিমত হল- যথার্থ নৈতিক উৎকর্ষ এবং সুখ হল সম্পদ, সৌন্দর্য এবং সুস্বাস্থ্যের সমাবেশ। এই মত মানবতাবাদীদের অনুপ্রাণিত করে।
(2) খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা: পোপ দ্বিতীয় পায়াস (Pope Pius II)ও শরীরচর্চাকে গুরুত্ব দেন। তিনি বলতেন যে, শরীরচর্চা একজন ব্যক্তির মনকে ভালো ও মাংসপেশিকে সতেজ রাখবে, জড়তা কেটে যাবে। তাছাড়া খেলাধুলার মধ্য দিয়ে শরীর যেমন সতেজ হবে, তেমনই জয়লাভের আনন্দ এবং পরাজয়ের গ্লানি একইভাবে মেনে নেওয়ার মানসিকতা দৃঢ় হবে। এই সময় ফ্লোরেন্স-সহ উত্তর ইটালির নগরগুলিতে ফুটবল খেলা খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পরিশেষে বলা যায়, নবজাগরণ পর্বে খেলাধুলার মধ্য দিয়ে মানুষের মানসিক শক্তির বিকাশ হয়। এর ফলে গোষ্ঠীবদ্ধ খেলাধুলার মাধ্যমে সামাজিকতার দর্শনের প্রসার ঘটেছিল।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর