মুক্তিপত্র (Indulgence) কী
মুক্তিপত্র
মুক্তিপত্র বা মার্জনাপত্র বা Indulgence-এর অর্থ হল, পাপীর পাপের ছাড়পত্র, যা অর্থের বিনিময়ে লাভ করা যেত। ইউরোপে ক্যাথলিক চার্চে দীর্ঘকাল ধরে এই কলঙ্কিত প্রথা প্রচলিত ছিল।
(1) ধারণা: মুক্তিপত্র বিক্রির একটি তাত্ত্বিক ভিত্তি ছিল। রোমান ক্যাথলিক ধর্মে মনে করা হত যে, মৃত্যুর পর মানুষ যাজকদের আশীর্বাদে ছোটোখাটো পাপ থেকে মুক্তি লাভ এবং সাময়িক যন্ত্রণাভোগের মাধ্যমে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হতে পারে। Subber in purgatory নামে এই বিষয়টি পরিচিত ছিল। এই প্রথার মাধ্যমে অযাজকীয় ব্যক্তি কর্তৃক প্রদত্ত অর্থের দ্বারা জিশুখ্রিস্ট ও মাতা মেরির অপার গুণাবলি পাপীর কাছে স্থানান্তরিত হত। এর ফলে উক্ত ব্যক্তির যে শাস্তি প্রাপ্য ছিল, তার আংশিক বা পুরোপুরি মার্জনা করা হত। এমনকি এরকম ধারণাও পোষণ করা হত যে, যদি কেউ ছাড়পত্র ক্রয় করে, তাহলে মৃত্যুর পরে তাঁর আত্মা মুক্তি লাভ করবে। এই মার্জনাপত্র বা ক্ষমাপত্র বিক্রির মাধ্যমে পাওয়া অর্থ সেকালে পোপ তথা যাজকদের আয়ের অন্যতম উৎস ছিল।
(2) নুখারের মত: ইউরোপে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের মূল হোতা মার্টিন লুথার এই প্রথার বিরুদ্ধে সরব হন। তাঁর মতে, গির্জার এই কারুণ্য ক্ষমাপত্র যিনি কিনছেন, তার মনে একটা ভ্রম ও মোহ সৃষ্টি করে। তখন সেই পাপী ব্যক্তি ভাবতে থাকেন যে, পাপ করে বুঝি সহজেই ক্ষমা লাভ করা যায়। লুথার বিশ্বাস করতেন যে, মানুষের পারলৌকিক যন্ত্রণাভোগের ক্ষেত্রে পোপের কোনও ক্ষমতা নেই। ব্যক্তির বিশ্বাসই তার চালিকাশক্তি, তাই সন্ত বা যাজকদের এমন কোনও অতিরিক্ত পুণ্য নেই, যেটা আগামীদিনে বিতরণের জন্য সঞ্চয় করা যেতে পারে। মানুষ যদি নিজে থেকে প্রভু জিশুর বাণীতে বিশ্বাসী না হন, তাহলে পোপ লক্ষাধিক বার ক্ষমা করলেও সে কোনোদিনই অন্তরের শান্তি পাবেন না-এই ছিল লুথারের Indulgence-এর বিরুদ্ধে বক্তব্যের সারমর্ম।
প্রতিবাদ: ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে উইটেনবার্গে লুথারের মুক্তিপত্রবিরোধী মনোভাবের সোচ্চার প্রকাশ ঘটেছিল। আসলে রোমের সেন্ট পিটারস চার্চ সংস্কারের জন্য যেহেতু প্রভৃত অর্থের প্রয়োজন ছিল, তাই এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থসংগ্রহের উদ্দেশ্যে ওই বছরে পোপ দশম লিও (Pope Leo X)-র অনুমোদনক্রমে ডোমিনিকান সন্ন্যাসী জোহান টেটজেল (Johann Tetzel) মার্জনাপত্র বিক্রয়ের জন্য উইটেনবার্গে এলে মার্টিন লুথার প্রতিবাদে সরব হয়ে উঠেছিলেন। লুথার ‘মার্জনাপত্র’ নামক মিথ্যাচারের প্রকৃত স্বরূপ উদ্ঘাটনের জন্য ৯৫ দফা প্রতিবেদন বা Ninety Five Theses রচনা করেন এবং তা উইটেনবার্গ চার্চের দরজায় ঝুলিয়ে দেন। এইভাবেই সূচনা হয় ধর্মসংস্কার আন্দোলনের।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর