মানবতাবাদী সাহিত্যচর্চায় পেত্রার্কের ভূমিকা উল্লেখ করো

টীকা লেখো-পেত্রার্ক

অথবা,

মানবতাবাদী সাহিত্যচর্চায় পেত্রার্কের ভূমিকা উল্লেখ করো

ফ্রান্সিস পেত্রার্ক (Francis Petrarch) হলেন ইতালীয় রেনেসাঁ-র প্রথম মানবতাবাদী (The first humanist in the Renaissance)। তিনি ইটালির টাস্কানিতে ১৩০৪ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ পণ্ডিত হিসেবে বিবেচিত হন পেত্রার্ক।

মানবতাবাদী সাহিত্যচর্চায় পেত্রার্কের ভূমিকা

ইটালিতে রেনেসাঁর প্রসারে এবং সাহিত্যচর্চার বিকাশে পেত্রার্কের অবদান উল্লেখযোগ্য।

(1) গ্রিক ও ল্যাটিন সাহিত্যের পুনরুদ্ধার: লর্ড ব্রাইস (Lord Bryce)-এর মতে, পেত্রার্ক রেনেসাঁর মধ্যে মানবতাবাদের সূচনা করেন। ইতালীয় মনীষীদের মধ্যে তিনিই প্রথম গ্রিক ও ল্যাটিন সাহিত্য-সংস্কৃতির মূল্য বুঝতে পেরে প্রাচীন পান্ডুলিপি উদ্ধার এবং জনসাধারণের কাছে তা প্রচারে ব্রতী হন। তাঁর মৃত্যুর পর দুশো প্রাচীন পান্ডুলিপি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভার্জিল, সিসেরো, লিভির রচনাসমূহ।

(2) মহাকাব্যের অনুবাদ: প্রাচীন গ্রিক ভাষায় মহাকবি হোমার (Homer) ইলিয়াড (Iliad) ও ওডিসি (Odyssey) মহাকাব্য দুটি রচনা করেছিলেন। পেত্রার্ক রেনেসাঁ যুগে এই দুটি মহাকাব্য ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ করেন।

(3) ইতালীয় সনেটের বিকাশ: পেত্রার্ক ইতালীয় সনেটের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাঁর সনেটগুলি ক্যানজোনিয়ার (Canzoniere) নামে পরিচিত। তিনি সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতার জনক হিসেবেও পরিচিত। প্রেমিকা লরা (Laura)-র উদ্দেশে লেখা তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থের নাম সনেটস্ টু লরা (Sonnets to Laura) | তাঁর কবিতায় ছিল প্রচন্ড আবেগ, অনুভূতি, সৌন্দর্যবোধ, অন্তর্নিহিত প্রেম ও ভালোবাসা। পেত্রার্কের সনেট ভবিষ্যতে শেকস্পিয়র-সহ বহু সাহিত্যিককে উদ্বুদ্ধ করেছিল।

(4) অন্যান্য রচনা: পেত্রার্কের অপর একটি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের নাম ট্রায়ান্স (Triumphs)। প্রথমে মাতৃভাষা টাসকানে লিখলেও পরবর্তীতে তিনি ল্যাটিনে লিখতে শুরু করেন। যদিও ল্যাটিন ভাষায় লেখা তাঁর অসমাপ্ত মহাকাব্য আফ্রিকা (Africa) বুদ্ধিজীবীদের প্রশংসা লাভ করেনি। পেত্রার্ক খ্যাতিলাভ করেন তাঁর পত্রাবলির জন্য- এগুলির মধ্যে রোমের বিখ্যাত বাগ্মী সিসেরো-র পত্রাবলি বিখ্যাত। তাঁর চিন্তাধারার বৈশিষ্ট্যই ছিল আধুনিকতার বিকাশের জন্য অতীতের গভীর চেতনা। জীবনমুখী সাহিত্যে পেত্রার্কের অবদানের কথা স্মরণ করে ঐতিহাসিক উইল ডুরান্ট (Will Durant) বলেছেন যে, পেত্রার্ক ছিলেন প্রথম মানবতাবাদী চিন্তাবিদ যিনি মানুষের জীবন নিয়ে সাহিত্য সৃষ্টির অধিকারের কথা বলেন।

(5) ইতিহাসচিন্তা: পেত্রার্কের ইতিহাসচিন্তার আভাস পাওয়া যায় তাঁর অসমাপ্ত রচনা On Famous Men (De Viris Illustribus) থেকে। ল্যাটিন ভাষায় রচিত এই রচনায় তিনি যেসব নায়কদের কথা উল্লেখ করেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন প্রাচীন সভ্যতার মানুষ। তাঁর মতে, একমাত্র এই ব্যক্তিরাই হলেন প্রকৃত পুরুষকারের অধিকারী। তাছাড়া রোম সম্পর্কিত সমস্ত উপকথা ও অতিকথা তিনি কাল্পনিক বলে বাতিল করে দিয়েছিলেন।

মূল্যায়ন

পেত্রার্ক ছিলেন একজন প্রকৃত মানবতাবাদী। তিনি একদিকে যেমন প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সাহিত্যের পুনরুদ্ধার করেছিলেন, অন্যদিকে তেমনি সনেট, কবিতা, কাব্যগ্রন্থ, পত্রাবলি- ইত্যাদি বহু সাহিত্য সৃষ্টিও করেছিলেন। আর সেই কারণেই ঐতিহাসিক উইল ডুরান্ট পেত্রার্ককে ‘মানবতাবাদের জনক’ বা Father of Renaissance নামে অভিহিত করেছেন।

আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment