ভক্তিবাদ প্রচারে রামানন্দের ভূমিকা কী ছিল
ভক্তিবাদের প্রচারে রামানন্দের ভূমিকা
মধ্যযুগে ভক্তিবাদকে কেন্দ্র করে সমগ্র ভারত ভূখণ্ডে যে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ঢেউ উঠেছিল, উত্তর ভারতে তার প্রধান প্রবক্তা ছিলেন রামানন্দ (১৩০০ ১৩৮০ খ্রিস্টাব্দ)। রামানুজের এই সুযোগ্য শিষ্য দক্ষিণ ভারত থেকে উত্তর ভারতে ভক্তিবাদের বাণী বহন করে আনেন। ভারতের উত্তরাংশের হিন্দু ও মুসলমানদের কাছে তিনি First Apostle হিসেবে বন্দিত।
(1) প্রথম জীবন: রামানন্দ আনুমানিক ১৩০০ খ্রিস্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগের কাছে এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। জানা যায় তিনি গুরু রাঘবানন্দের কাছে শিক্ষাগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন সম্ভবত আচার্য রামানুজের শ্রীনিবাস সম্প্রদায়ের অনুগামী।
(2) মতাদর্শ: রামানন্দ বলতেন ঈশ্বরের কাছে সব মানুষই সমান। ঈশ্বরের প্রতি প্রবল ভক্তিই মানুষের মুক্তির পথ সুগম করে। বৈষুব সমাজের সাধারণ রীতি অনুযায়ী রাধাকৃষ্ণের উপাসনা প্রচলিত ছিল, কিন্তু তিনি ছিলেন রাম ও সীতার উপাসক। রামানন্দ অস্পৃশ্যতা ও জাতিভেদ প্রথারও বিরোধী ছিলেন। তাঁর শিষ্যদের মধ্যে রবিদাস জাতিতে মুচি, সেন ছিলেন নাপিত, সাধন কসাই এবং কবীর মুসলিম তাঁতি ছিলেন। নারীরাও রামানন্দের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন।
(3) মতবাদ প্রচার: রামানন্দ ভারতের নানান স্থানে ভ্রমণ করেন এবং রামানুজের বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ প্রচার করেন। কিছুকাল আগ্রা ও বেনারসেও শিক্ষাদানে নিযুক্ত ছিলেন তিনি। রামানন্দের ভক্তিবাদী আদর্শ প্রচারের মাধ্যম ছিল হিন্দি ভাষা। তাঁর সহজ-সরল ভাষায় মতাদর্শের প্রচার যেমন সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করেছিলেন, তেমনই তাঁর কবিতাগুলি হিন্দি ভাষা ও সাহিত্যেরও বিকাশ ঘটিয়েছিল।
(4) প্রতিষ্ঠিত সম্প্রদায়: রামানন্দ রামাৎ বৈষ্ণব নামে একটি নতুন সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি হিন্দু ধর্মের পূজাবিধি যেমন সহজ-সরল করেন, তেমনই বর্ণাশ্রম প্রথার কঠোরতাও হ্রাস করেছিলেন। রামানন্দের ভক্তিবাদ প্রচারের ফলে উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের ভক্তিবাদী আন্দোলনের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপিত হয়েছিল। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে বলা যেতে পারে, মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষে যা ধর্মীয় নবজাগরণ হিসেবে পরিচিত তা শুরু করেছিলেন রামানন্দ। (‘Ramananda may be said to have begun what is known as the religious renaissance in Medieval India.’)
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর