ভক্তিবাদের উত্থানের কারণগুলি কী ছিল? ভক্তিবাদের মূল লক্ষ্য সম্পর্কে লেখো

ভক্তিবাদের উত্থানের কারণগুলি কী ছিল? ভক্তিবাদের মূল লক্ষ্য সম্পর্কে লেখো

ভক্তিবাদের উত্থানের কারণগুলি কী ছিল? ভক্তিবাদের মূল লক্ষ্য সম্পর্কে লেখো
ভক্তিবাদের উত্থানের কারণগুলি কী ছিল? ভক্তিবাদের মূল লক্ষ্য সম্পর্কে লেখো

ভক্তিবাদের উত্থানের কারণসমূহ

ভারতবর্ষে আদি- মধ্যকালীন সময়ে যে ভক্তিবাদী ধারার সূচনা হয়েছিল, মধ্যযুগে পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকে সেই ধারাই বিকশিত হয় এবং কোথাও কোথাও তা প্রতিবাদী আন্দোলনের রূপ ধারণ করে। এই নতুন ধর্মীয় আন্দোলনই ভক্তিবাদী আন্দোলন নামে খ্যাত। এদেশে ভক্তিবাদের উত্থানের কারণগুলি হল-

(1) আলবার ও নায়নার সাধকদের ভূমিকা: খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের গোড়ার দিকে দক্ষিণ ভারতের আলবার ও নায়নার সাধকগণ ভক্তিবাদের প্রচার করেছিলেন। তাঁদের প্রচারের ফলস্বরূপ দক্ষিণ ভারতে ভক্তিবাদ হয়ে উঠেছিল জনপ্রিয়।

(2) ব্রাহ্মণ্য, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের অসারতা: মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষে ব্রাহ্মণ্য, জৈন এবং বৌদ্ধ ধর্মে দেখা দিয়েছিল অসারতা। অযৌক্তিক ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, রীতিনীতি পালনের উপর এই সকল ধর্মমতগুলি জোর দিত। ফলে এগুলির প্রতি মানুষের আবেগ ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

(3) বাপ্পণ ও রাজপুতদের ক্ষমতা হ্রাস: দ্বাদশ শতাব্দীর শেষার্ধে ভারতে তুর্কি আক্রমণের সময় রাজপুত রাজাগণ তাদের কাছে পরাজিত হন। রাজপুতরা হেরে যাওয়ার ফলে ধর্ম ও সমাজব্যবস্থায় ব্রাহ্মণ শ্রেণির আধিপত্য হ্রাস পায়। কারণ এই রাজপুত নৃপতিগণ ছিলেন ব্রাহ্মণদের পৃষ্ঠপোষক।

(4) মুসলমান আক্রমণ ও শাসন: তুর্কি যোদ্ধারা ভারতে এসে নির্বিচারে মন্দির, বিগ্রহ ধ্বংস বা ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের হত্যা করে ক্ষমতা বিস্তার করে। এই ঘটনা একদিকে যেমন ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রতি মানুষের মোহভঙ্গ করে, অন্যদিকে মুসলমান শাসন প্রতিষ্ঠা হলে চিরাচরিত বর্ণব্যবস্থার প্রাচীরে ফাটল ধরতে থাকে। এই রাজনৈতিক রূপান্তরই আসলে সামাজিক পরিবর্তনের পথ উন্মুক্ত করেছিল।

(5) ভক্তিবাদী সাধকদের প্রচার: এদেশে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার পর খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতক থেকে নামদেব, তুকারাম, রামানন্দ, কবীর, নানক, শ্রীচৈতন্যদেব, মীরাবাঈ প্রমুখ ভক্তিবাদী সাধক-সাধিকাদের আবির্ভাব ভক্তিবাদের প্রচারে প্লাবন সৃষ্টি করে। ভারতের দিকে দিকে তাঁদের গান, উপদেশ, বাণী, কবিতা ছড়িয়ে পড়ে।

ভক্তিবাদের মূল লক্ষ্য

ভক্তিবাদী আন্দোলন মূলত দুটি প্রধান লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার জন্য অগ্রসর হয়েছিল। যথা-

(A) হিন্দু ধর্মের অভ্যন্তরীণ সংস্কারের মাধ্যমে এক সহজ-সরল রূপদান করা ও সমাজের নিম্নস্তরের হিন্দুদের পুনরায় কাছে আনা।

(B) হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যেকার বিরোধ হ্রাস করা। বস্তুত, বর্ণভেদ প্রথার বিরোধিতা এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের পরিবর্তে সাধনপথে ঈশ্বরলাভের তত্ত্ব প্রচার করে ভক্তিবাদীরা নিম্নবর্গের মানুষের কাছে হিন্দু ধর্মকে জনপ্রিয় করতে চেয়েছিলেন।

আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment