বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
- ভূমিকা
- প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য
- জাতিগত, ভাষাগত ও ধর্মীয় বৈচিত্র্য
- পোশাক-পরিচ্ছেদ ও খাদ্যাভাসে নানা বৈচিত্র্য
- বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য
- উপসংহার
ভূমিকা
"হেথায় আর্য হেথায় অনার্য হেথায় দ্রাবিড় চিন শক হুণ দল মোগল পাঠান এক দেহে হল লীন।"
আমাদের দেশে নানা জাতি নানা ধর্মের মানুষের বসবাস। আর্য, অনার্য, শক, হুণ, পাঠান, মোগল প্রভৃতি নানা জাতির অপূর্ব এক সহাবস্থান লক্ষ করা যায় আমাদের দেশে। এদেশের উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা, উত্তর-পশ্চিমে হিন্দুকুশ পর্বতমালা উত্তর-পূর্বে আরাকান পর্বত রয়েছে। আরব সাগর, ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর ঘিরে রেখেছে আমাদের দেশকে। বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক পরিবেশ, নানা জাতি, নানা বর্ণ, নানা ভাষা ও নানা পরিধান আমাদের দেশকে অপূর্ব বৈচিত্র্যের অবস্থান করে তুলেছে। তবু তারই মধ্যে বিরাট এক ঐক্যের সুর ধ্বনিত হয়।
প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য
প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য আমাদের দেশের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এখানকার প্রকৃতিতে কোথাও প্রচণ্ড শীত, আবার কোথাও সুতীব্র গ্রীষ্মের প্রকোপ। একদিকে সুউচ্চ হিমালয় পর্বতমালা। আবার অন্যদিকে সুজলা সুফলা শস্য শ্যামল প্রান্তর। কোথাও ধু ধু মরুভূমি আবার কোথাও সারা বছর বৃষ্টিস্নাত প্রাকৃতিক পরিবেশ। প্রকৃতিতে এত বৈচিত্র্য পৃথিবীতে আর কোথাও নেই।
জাতিগত, ভাষাগত ও ধর্মীয় বৈচিত্র্য
আমাদের দেশ নানা জাতি নানা ধর্ম ও নানা ভাষার মানুষের মিলনক্ষেত্র। বিভিন্ন ধরনের জাতি ধর্ম ও বর্ণের মানুষের বসবাসের জন্য এখানে এক বৈচিত্র্যময় পরিবেশ রচিত হয়েছে। অসংখ্য ভাষা ব্যবহার যেমন দেখা যায় তেমনি বিভিন্ন ধর্মপালন তথা ধর্মীয় উৎসবের প্রচলন এখানে হয়েছে।
পোশাক-পরিচ্ছেদ ও খাদ্যাভাসে নানা বৈচিত্র্য
আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রদেশের জনগণ বিভিন্ন ধরনের পোশাক-পরিচ্ছদ ব্যবহার করেন। উত্তর ভারতের মানুষের সঙ্গে দক্ষিণ ভারতের পোশাক-পরিচ্ছদে যেমন পার্থক্য দেখা যায় আবার তেমনিভাবে পূর্ব ও পশ্চিম ভারতের মানুষের মধ্যে পোশাক-পরিচ্ছদে কত না বৈচিত্র্য। ঠিক একইভাবে আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী অধিবাসীদের খাদ্যাভ্যাস সম্পূর্ণ আলাদা। পোশাক-পরিচ্ছদ ও খাদ্যাভ্যাসের এই বৈচিত্র্যের কারণ হল বিভিন্ন অঞ্চলের আবহাওয়া ও জলবায়ুর পার্থক্য।
বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য
এত বৈচিত্র্যের মধ্যেও সমগ্র ভারতবাসীর মনে রয়েছে গভীর এক ঐক্যবোধ। ভারতবর্ষের বিভিন্ন তীর্থস্থান ভারতবাসীদের কাছে পরম এক পুণ্যভূমি বলে মনে হয়। এই সমস্ত বিভিন্ন তীর্থক্ষেত্রে যাতায়াতের ফলে একটা সংহতি বোধ সঞ্চালিত হয়। ভারতীয়দের মধ্যে সাংস্কৃতিক ঐক্যবোধ জাগ্রত হয়েছে মথুরা, নালন্দা, নবদ্বীপ, তক্ষশীলা প্রভৃতি পঠনপাঠনের স্থানগুলোতে যাতায়াতের কারণে। প্রাচীন যুগে ‘রাজাধিরাজ’, ‘সম্রাট’, ‘একরাট’ ইত্যাদি উপাধিগুলো গ্রহণ করতেন তৎকালীন শাসকরা। একটা রাষ্ট্রীয় ঐক্যের আদর্শ নির্মিত হয়েছিল সেই সময়কাল থেকে।
উপসংহার
বিচ্ছেদ বা বিভেদ নয়, ঐক্য বা সংহতি মানবসভ্যতায় সবচেয়ে বড়ো বৈশিষ্ট্যরূপে বলে পরিগণিত হয়। ভারতমাতার ঐক্যর সুমহান আদর্শ রক্ষা করাই প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য। নানা জাতি নানা ধর্ম নানা বর্ণের মানুষের মহা মিলনক্ষেত্র যেন কখনোই অশুভ শক্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হয়। দেশের ঐক্য ও সংহতি রক্ষা করাই প্রতিটি নাগরিকের একমাত্র কর্তব্য হওয়া উচিত।
আরও পড়ুন –
১। পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা
২। পরিবেশ রক্ষায় অরণ্য – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা
৩। পরিবেশ বনাম উন্নয়ন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৪। বিশ্ব উষ্ণায়ন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৫। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৬। মানবজীবনে পরিবেশের প্রভাব – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৭। বিজ্ঞানচেতনার প্রসারের প্রয়োজনীয়তা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৮। বিজ্ঞানচেতনা ও কুসংস্কার – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৯। কম্পিউটার ও আধুনিক জীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১০। খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১১। দেশভ্রমণ – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১২। রক্তদান জীবনদান – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৩। বিজ্ঞাপন ও দৈনন্দিন জীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৪। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ছাত্রসমাজের ভূমিকা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৫। ভূমিকম্প – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৬। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৬। মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৭। পঞ্চায়েতী ব্যবস্থা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা