বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে রেনেসাঁর প্রভাব লেখো

বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে রেনেসাঁর প্রভাব লেখো

বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে রেনেসাঁর প্রভাব লেখো
বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে রেনেসাঁর প্রভাব লেখো

রেনেসাঁর দরুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি 

পঞ্চদশ শতাব্দীর ইউরোপীয় রেনেসাঁর প্রভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও যথেষ্ট উন্নতি পরিলক্ষিত হয়। এসময় যুক্তিহীন অন্ধবিশ্বাসের পরিবর্তে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষানিরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ ও যুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে ঘটে যায় এক আমূল পরিবর্তন।

(1) বিজ্ঞান

  • জ্যোতির্বিদ্যা: নবজাগরণের যুগে পোল্যান্ডের বিজ্ঞানী নিকোলাস কোপারনিকাস জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে নানান নতুন তথ্য আবিষ্কার করেন। প্রাচীন কালে পণ্ডিতদের বিশ্বাস ছিল যে, পৃথিবী স্থির এবং সূর্য, চন্দ্র প্রভৃতি তার চারিদিকে ঘুরছে। কিন্তু কোপারনিকাস বলেছিলেন যে, সূর্য স্থির হয়ে আছে এবং পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহরা তাকে প্রদক্ষিণ করছে। পরবর্তীকালে জিওরদানো ব্রুনো, কেপলার, গ্যালিলিও এবং নিউটনের হাত ধরে তাঁর এই মত প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • পদার্থবিদ্যা: প্রখ্যাত ইংরেজ বিজ্ঞানী রজার বেকন পদার্থবিদ্যার জগতে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন। অনেকেই মনে করেন যে, দৃষ্টিবিজ্ঞানের উপর তিনি যে গবেষণা চালিয়েছিলেন, তার সূত্র ধরেই পরবর্তীকালে আবিষ্কৃত হয় চশমা, অনুবীক্ষণ ও দূরবীক্ষণ যন্ত্র। আবার ইতালীয় পদার্থবিদ গ্যালিলিও গ্যালিলি দূরবীক্ষণ যন্ত্র, পেন্ডুলাম ঘড়ি প্রভৃতি আবিষ্কার করেন।
  • রসায়ন: রেনেসাঁ যুগে রসায়নের ক্ষেত্রেও উন্নতি ঘটেছিল। ইতিমধ্যে ধাতুর খনন বেড়ে যাওয়ায় একের পর এক আকর খনন করা হতে থাকে। এর দরুন নতুন নতুন আকরিক ও ধাতু আবিষ্কৃত হয়। যারা এগুলি সংগ্রহ বা এগুলি নিয়ে কাজ করত, তাদের বিভিন্ন পদ্ধতি রপ্ত করতে হয়েছিল। এর মধ্যে দিয়েই পরবর্তীকালে জারণ ও বিজারণ, পাতন ও পারদ সংকরায়ন প্রভৃতি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রসায়নের অগ্রগতি ঘটে। এসময় রসায়নবিজ্ঞানীদের মধ্যে ধাতুবিজ্ঞানীদের পাশাপাশি একাংশ ছিল ভেষজবিজ্ঞানী, যারা বিভিন্ন ধরনের মিশ্রণের দ্বারা ওষুধ তৈরি করতেন। এ ছাড়া অনেকে অপরসায়নচর্চার কাজেও নিযুক্ত ছিলেন।
  • জীববিদ্যা: রেনেসাঁ যুগে মানুষের জানার আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। উদ্ভিদ, পাখি, পশু, প্রকৃতি ইত্যাদির সৃষ্টি সম্পর্কে জানতে গাছপালা নিয়ে গবেষণা ও পরীক্ষানিরীক্ষা বৃদ্ধি পায়। এই সময় লিওনহার্ট ফুক্স (Leonhart Fuchs) উদ্ভিদবিজ্ঞানী হিসেবে বিশেষ খ্যাতি লাভ করেছিলেন।
  • চিকিৎসাশাস্ত্র: নবজাগরণ পর্বে চিকিৎসাশাস্ত্রের ক্ষেত্রেও বিশেষ অগ্রগতি ঘটে। এসময় লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি আদর্শ শারীরতত্ত্বের কল্পনায় অঙ্কন করেন দ্য ভিট্রুভিয়ান ম্যান (The Vitruvian Man)। অন্যদিকে শারীরতত্ত্বের উপর বিখ্যাত গ্রন্থ ফ্যাব্রিকা (De Humani Corporis Fabrica Libri Septam) লেখেন বেলজিয়ামের চিকিৎসক আন্দ্রেয়াস ভেসালিয়াস (Andreas Vesalius)। ওলন্দাজ চিকিৎসক জোহানেস উইয়ার (Johannes Wier) জানিয়েছিলেন যে, নানারকম অসুখ থেকেই শারীরিক বিকার আসে, এতে ডাইনির কোনও ভূমিকা নেই। এ ছাড়া ইংরেজ চিকিৎসাবিদ উইলিয়ম হার্ভে (William Harvey) এসময় আবিষ্কার করেন মানবদেহে শোণিত সংবহন বা রক্তসঞ্চালন পদ্ধতি।

(2) প্রযুক্তি:

  • মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কার: মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কার নবজাগরণের যুগের এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। জার্মানির মেইনজ (Mainz) নামক শহরে জোহানেস গুটেনবার্গ (Johannes Gutenberg, ১৩৯৩/১৪০৬ -১৪৬৮ খ্রি.) সর্বপ্রথম আধুনিক মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কার করেন। এতে অল্প সময়ে কম ভুলভ্রান্তি সম্পন্ন বেশি সংখ্যক পুস্তক ছাপানো সম্ভব হয়। ফলে ধনী-দরিদ্র সকলেই জ্ঞানলাভের সুযোগ পায়।
  • সামরিক প্রযুক্তির উদ্ভাবন: ১৪৫০-১৫৫০ খ্রিস্টাব্দ ছিল নতুন সমরাস্ত্র এবং কার্যকরী রণনীতি উদ্ভাবনের যুগ। ইউরোপে সম্ভবত রজার বেকনই প্রথম বারুদের ফর্মুলা লিপিবদ্ধ করেন। ক্রমশ ইউরোপীয় রণক্ষেত্রে কামান ও বন্দুকের উন্নতি হয় এবং এদের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া এই পর্বে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি কর্তৃক সৃষ্ট যুদ্ধের সাঁজোয়া গাড়ির নকশাও বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

নৌপ্রযুক্তির অগ্রগতি : নৌপ্রযুক্তিতেও অগ্রগতি ছিল লক্ষণীয়। বিজ্ঞানী রজার বেকন পালবিহীন জাহাজের অস্তিত্ব কল্পনা করেন। আবার লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি তৈরি করেন ডুবোজাহাজ-এর নক্শা। ক্রমশ নানা ধরনের উন্নত জাহাজ এসময় তৈরি হতে থাকে, যেমন- গ্যালি (Galley) নৌকা, ক্যারাভেল (Caravel) প্রভৃতি। এগুলি ছাড়াও লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি জলবিদ্যুৎ সংক্রান্ত বেশকিছু গবেষণা করেন, যা পরবর্তীকালে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশেষ সহায়ক হয়েছিল। পাশাপাশি জিরোলামো কার্দানো (Gerolamo Cardano) নামক এক ইতালীয় চিকিৎসক কম্পাস আবিষ্কার করেছিলেন বলে শোনা যায়।

আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment