প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলন এবং নবজাগরণের মধ্যেকার সম্পর্ক লেখো
ইউরোপে আধুনিক যুগের প্রেক্ষিতে প্রোটেস্ট্যান্ট তথা ধর্মসংস্কার আন্দোলন এবং রেনেসাঁ বা নবজাগরণ-এই দুটি ঘটনাই ঐতিহাসিকভাবে তাৎপর্যমণ্ডিত। এই দুই আন্দোলনের মধ্যে যথেষ্ট ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বর্তমান।
প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলন এবং নবজাগরণের মধ্যে সম্পর্ক
(1) রেনেসাঁ-সজ্জাত মানবতাবাদী আদর্শের প্রভাব: নবজাগরণ বা রেনেসাঁ-প্রসূত মানবতাবাদী আদর্শের প্রভাবে প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কারকদের মনে চার্চ বা পোপের অনুজ্ঞা সম্পর্কে যুক্তিসিদ্ধ প্রশ্ন উঠতে থাকে, যা ধর্মসংস্কারের পটভূমি প্রস্তুত করেছিল।
(2) হিবু বাইবেল: রেনেসাঁ বা নবজাগরণের পরিণতি হিসেবে ইউরোপে গ্রিক, ল্যাটিন ও হিব্রু ভাষার চর্চা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। এসময় জার্মানিতে মূল হিব্রু ভাষায় লিখিত বাইবেল পাঠ করে সাধারণ মানুষ বাইবেলের প্রকৃত নির্দেশগুলি সম্পর্কে অবগত হয়। তারা বুঝতে পারে, পোপের অনেক অনুশাসন ধর্মসম্মত নয়। ফলে সাধারণ মানুষ পোপ ও চার্চবিরোধী হয়ে ওঠে, যা ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে সাহায্য করেছিল।
(3) চার্চের কর্তৃত্ব হ্রাস: ইউরোপের ধর্মসংস্কার বা প্রতিবাদী আন্দোলন ক্যাথলিক চার্চের মর্যাদা ও কর্তৃত্বকে হ্রাস করে এবং ধর্মীয় অনাচারের বিরুদ্ধে সচেতনতা প্রসারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নবজাগরণ-সংঞ্জাত বৌদ্ধিক আদর্শই প্রোটেস্ট্যান্টবাদীদের এহেন যুক্তিবাদী চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটিয়েছিল।
মূল্যায়ন
পরিশেষে বলা যায়, যদিও নবজাগরণ ও প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলন দুটি পৃথক আন্দোলন ছিল, তবুও উভয়ের পারস্পরিক সম্পর্ককে অস্বীকার করা যায় না। ইউরোপে প্রায় কাছাকাছি সময়ে সংঘটিত এই দুটি আন্দোলনই যেমন ঐতিহ্যবাহী কর্তৃপক্ষ বা দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল, তেমনই জয়গান গেয়েছিল যুক্তিবাদ ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের। ঐতিহাসিক উইল ডুরান্টের মতে, নবজাগরণ এবং ধর্মসংস্কার আন্দোলন মধ্যযুগীয় খ্রিস্টান সমাজের ঐক্যকে ধ্বংস করেছিল এবং ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ, জ্ঞানের বিকাশ এবং ধর্মনিরপেক্ষতার উপর গুরুত্ব আরোপ করে আধুনিক যুগের প্রেক্ষাপট তৈরি করে দিয়েছিল।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর