পশ্চিম ভারতে ভক্তিবাদের প্রসারে নামদেব এবং একনাথের অবদান কী ছিল
পশ্চিম ভারতে ভক্তিবাদের প্রসারে নামদেব
মারাঠি ধর্মাচার্য নামদেব (আনুমানিক ১২৭০ ১৩৫০ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন পশ্চিম ভারতে ভক্তিবাদী আন্দোলনের অন্যতম মুখ্য প্রবক্তা। জ্ঞানদেবের পরবর্তীতে মহারাষ্ট্রে বারকরী আন্দোলনের শ্রেষ্ঠ প্রচারক ছিলেন তিনি।
(1) পরিচয়: নামদেবের সঠিক সময়কাল নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে। তবে সাধারণভাবে জানা যায়, আনুমানিক ১২৭০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ অক্টোবর তিনি মহারাষ্ট্রে এক দরিদ্র দর্জি পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
(2) ধর্মদর্শন: অন্যান্য ভক্তিবাদী সাধকদের মতোই নামদেব ছিলেন একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী। তিনি বিষুর উপাসক ছিলেন। জাতিভেদ, যাগযজ্ঞ, ধর্মের বহিরঙ্গতা বা বাহ্যিক অনুষ্ঠান এবং মূর্তিপূজার ঘোর বিরোধিতা করতেন তিনি। নামদেব সোচ্চার কণ্ঠে বলেছিলেন যে, হিন্দু-মুসলমান সকলেই অন্ধ। তাই এরা সকলে ঈশ্বরের উপাসনা করতে মন্দির ও মসজিদে যান। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরের আরাধনার জন্য মন্দির ও মসজিদের প্রয়োজন নেই। শুচিতা, ভক্তি ও আন্তরিকতাকেই তিনি ধর্মলাভের সর্বশ্রেষ্ঠ সোপান বলে মনে করতেন।
(3) প্রভাব: নামদেব ধর্মপ্রচারের মাধ্যমে মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে সেতুবন্ধন করতে চেয়েছেন। তাঁর অধিকাংশ সঙ্গীরাই ছিলেন নিম্নকোটির মানুষ। তাঁদের বক্তব্য ছিল রাম-রহিমে কোনও পার্থক্য নেই। একনাথের ভক্তিবাদী আন্দোলন মহারাষ্ট্রে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।
পশ্চিম ভারতে ভক্তিবাদের প্রসারে একনাথ
বিশিষ্ট ভক্তিবাদী ধর্মগুরু একনাথ (১৫৩৩ – ১৫৯৯ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন একাধারে একজন সন্ত, দার্শনিক ও কবি। বারকরী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা একনাথ ছিলেন জ্ঞানদেব এবং নামদেবের আধ্যাত্মিক শিষ্য।
(1) পরিচয়: একনাথের জীবনী সম্পর্কে খুব বেশি কিছু বলা না গেলেও সাধারণভাবে জানা যায়, ষোড়শ শতকের ত্রিশের দশকে বর্তমান মহারাষ্ট্রের পৈঠানে এক ঋকবৈদিক ব্রাহ্মণগৃহে জন্ম নিয়েছিলেন তিনি। শৈশবে পিতৃমাতৃহীন একনাথ তাঁর পিতামহের কাছে লালিত হন। বিখ্যাত কবি ও সন্ত জনার্দন স্বামী ছিলেন তাঁর গুরু।
(2) ভাবধারা ও প্রচার: একনাথ নিজে কখনও সন্ন্যাস ধর্ম গ্রহণ করেননি। তিনি ভারতীয় সমাজে চলে আসা জাতিভেদ প্রথার ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি প্রচলিত সমাজবিধিকে অগ্রাহ্য করে প্রচার করেছিলেন যে, ঈশ্বরের চোখে ব্রাহ্মণ-অন্ত্যজ, হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে কোনও প্রভেদ নেই। অস্পৃশ্যদের সঙ্গে ছিল তাঁর অবাধ মেলামেশা। একনাথ মারাঠি জনগণের কাছে রামায়ণের কথা প্রচার করতেন।
(3) গ্রন্থসমূহ: একনাথ ভাবার্থ রামায়ণ, একনাথী ভাগবত-এর মতো গ্রন্থগুলি রচনা করেছিলেন। অতীন্দ্রিয়বাদী এই সাধকের ভক্তিসংগীতগুলি মারাঠি সংগীতের এক মূল্যবান সম্পদ। একনাথ ছিলেন পরবর্তীকালের প্রখ্যাত মহারাষ্ট্রীয় ধর্মাচার্য তুকারাম, রামদাসের অগ্রদূত। তাঁর স্মরণে প্রত্যেক বছর মার্চ মাসে পৈঠানে উৎসব পালিত হয়।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর