পঞ্চদশ শতকে ইউরোপের স্থাপত্য-সংস্কৃতিতে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটে
পঞ্চদশ শতকে ইউরোপের স্থাপত্য-সংস্কৃতিতে পরিবর্তনসমূহ
মধ্যযুগীয় স্থাপত্যরীতির থেকে পঞ্চদশ শতকের ইউরোপের স্থাপত্য বা রেনেসাঁ স্থাপত্যরীতি ছিল অনেকটাই আলাদা।
(1) প্রাচীন রোমান ও গ্রিক স্থাপত্যের প্রভাব: রেনেসাঁ পর্বে ইউরোপের স্থাপত্যে ধ্রুপদি গ্রিক ও রোমান স্থাপত্যরীতি অনুসরণ করা হয়েছিল, যা মধ্যযুগীয় গথিক স্থাপত্যরীতির থেকে অনেকটাই পৃথক। এই স্থাপত্যরীতিতে গম্বুজ, খিলান, স্তম্ভ, পেডিমেন্ট (Pediment)-এর ব্যবহার নতুন করে প্রচলিত হয়।
(2) সমতা ও অনুপাত: পঞ্চদশ শতকে ইউরোপীয় স্থাপত্যে গণিতের সুনির্দিষ্ট অনুপাত (Proportion) ও সমতার (Symmetry) নিয়ম মেনে চলা হয়, যা ধ্রুপদি স্থাপত্যের দ্বারা অনুপ্রাণিত। এই সময় ভবনগুলি এমনভাবে নকশা করা হয়, যাতে ভবনগুলিতে গভীরতা এবং ত্রি-মাত্রিক অনুভূতি থাকে।
(3) মানবতাবাদের প্রভাব: আলোচ্য পর্বের স্থাপত্যে মানবতাবাদের ধারণা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল। এই সময় নির্মিত প্রাসাদ ও বাসভবনগুলিতে আলো চলাচল, আরামদায়কতা ইত্যাদির উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হতে থাকে, যা মধ্যযুগীয় দুর্গের কঠোরতা এবং সংকীর্ণতা থেকে পৃথক ছিল। এসময়কার ভবন-সহ বিভিন্ন স্থাপত্য নির্মানে শুধু ধর্মীয় বিষয়ই নয়, বরং মানুষের অভিজ্ঞতা, সুখের দিকটিও প্রাধান্য পেয়েছিল।
(4) জটিল কৌশলের ব্যবহার: পঞ্চদশ শতকের ইউরোপের স্থপতিগণ তাঁদের নিজস্ব এক জটিল কৌশল ব্যবহারের মাধ্যমে স্থাপত্য নির্মাণে সচেষ্ট হয়েছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গম্বুজ নির্মাণের ক্ষেত্রে এসময় নতুন ধরনের কৌশলের উদ্ভাবন ঘটে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ফিলিপ্পো বুনেলেস্কি ফ্লোরেন্স ক্যাথিড্রালের গম্বুজ (Dome) নির্মাণের সময় এমন এক জটিল নির্মাণ কৌশল ব্যবহার করেছিলেন- যা তৎকালীন সময়ে ছিল অভূতপূর্ব।
(5) শিল্পকর্মের অন্তর্ভুক্তি: আলোচ্য পর্বে রেনেসাঁর প্রভাবে স্থাপত্যের সঙ্গে চিত্রকলা, ভাস্কর্য-সহ অন্যান্য শিল্পের মাধ্যমগুলির এক নিবিড় সংযোগ গড়ে ওঠে। স্থাপত্যসমূহের দেয়াল ও ছাদে ফ্রেসকো এবং মেঝেতে অলংকরণের জন্য মোজাইক-এর ব্যাপক ব্যবহার চলতে থাকে। এসময় স্থাপত্যের বাইরের ও ভিতরের দিকের শোভা উভয়েই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
(6) আঙ্গিকে পরিবর্তন : মধ্যযুগীয় স্থাপত্য মূলত ধর্মীয় উদ্দেশ্যেই নির্মিত হয়েছিল। এ ছাড়া ছিল মধ্যযুগের দুর্গগুলি। কিন্তু পঞ্চদশ শতকের স্থাপত্যে আঙ্গিকের অনেক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। এই সময় চার্চের সঙ্গে সরকারি ভবন, বাসভবন, প্রাসাদ প্রভৃতিও নির্মিত হয়।
মূল্যায়ন
এইভাবে ইউরোপীয় স্থাপত্য-সংস্কৃতি মধ্যযুগীয় সনাতনী কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে স্থাপত্যের পরিকল্পনা, সৌন্দর্য, অনুপাত, মানবিক অভিজ্ঞতা-সহ বিভিন্ন বিষয়কে অধিক গুরুত্ব প্রদান করে আধুনিক স্থাপত্যের ভিত্তিপ্রস্তর নির্মাণ করেছে।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর