পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকে ইউরোপে নবজাগরণের পিছনে পন্ডিতদের অবদান ব্যাখ্যা করো
নবজাগরণে পণ্ডিতদের অবদান
পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকে সংঘটিত নবজাগরণের পিছনে পণ্ডিত ব্যক্তিদের অবদান ছিল যথেষ্ট। মূলত তাদেরই উদ্যোগে ইউরোপ মধ্যযুগের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসে নতুন জ্ঞান, শিল্প এবং সংস্কৃতির উন্মেষ ঘটায়।
(1) প্রাচীন ধ্রুপদি সাহিত্য পুনরূদ্ধার: ধ্রুপদি গ্রিক-রোমান সাহিত্য-সংস্কৃতির পুনরুদ্ধার ছিল নবজাগরণের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। নেতৃস্থানীয় পণ্ডিতগণ, যেমন- ফ্রান্সিস পেত্রার্ক, লিওনার্দো রুনি প্রমুখ প্রাচীন গ্রন্থের পুনরুদ্ধার, গবেষণা এবং পুনঃপ্রকাশে এই ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
(2) শিক্ষার বিকাশ ও বিস্তার: মানবতাবাদী পণ্ডিতদের শিক্ষার লক্ষ্য ছিল- রুচিবান, উদারমনস্ক, সভ্য ও স্বাধীন নাগরিক সৃষ্টি অর্থাৎ, পূর্ণ মানুষ গঠন করা। তাই তারা মধ্যযুগীয় কুসংস্কার ও ধর্মকেন্দ্রিকতার বেড়াজাল ছিন্ন করে যুক্তিবাদী, ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষার প্রসার ঘটাতে উদ্যোগী হন। এসময় জোহানেস গুটেনবার্গ কর্তৃক আবিষ্কৃত মুদ্রণযন্ত্রে ছাপা বই পণ্ডিতদের জ্ঞান ও চিন্তাধারাকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছোতে সাহায্য করে।
(3) ভাষা ও সাহিত্য: পণ্ডিতদের অপর এক উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল স্থানীয় ভাষায় সাহিত্য রচনা ও তার প্রচলন। দান্তে, বোকাচ্চিও, শেকস্পিয়র প্রমুখ নিজেদের মাতৃভাষায় সাহিত্য রচনা করেন। এই সাহিত্যগুলি সাধারণ জনগণের মধ্যে জনপ্রিয় হয়। এর ফলে স্থানীয় ভাষার প্রচার ও প্রসার ঘটে।
(4) শিল্প ও বিজ্ঞানের অগ্রগতি: নবজাগরণ পর্বে পণ্ডিতরা শিল্পের ক্ষেত্রেও নিয়ে আসেন পরিবর্তনের ধারা। পণ্ডিতদের লেখাপড়া ও চিন্তাধারার মাধ্যমে শিল্পীরা তাদের কাজকে নতুন আঙ্গিকে এবং অধিকতর বাস্তবধর্মীভাবে উপস্থাপন করার অনুপ্রেরণা পান। যেমন- লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি ছিলেন একাধারে পণ্ডিত ও শিল্পী, যিনি চিত্রকলায় মানবদেহের যথার্থ গঠন ও বাস্তবতাকে তুলে ধরতে পণ্ডিতদের জ্ঞান ও গবেষণাকে ব্যবহার করেছেন। অন্যদিকে বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রেও পণ্ডিতদের অবদান কিছু কম ছিল না। কোপারনিকাস, গ্যালিলিও-র মতো পণ্ডিতগণ নতুন বৈজ্ঞানিক ধারণা ও পর্যবেক্ষণমূলক পদ্ধতির প্রচলন করেন। তাঁদের গবেষণার দরুন প্রকৃতি ও মহাবিশ্ব সম্পর্কে নতুন ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়।
(5) ধর্মসংস্কার আন্দোলন: ষোড়শ শতকে মার্টিন লুথার ও অন্যান্য পণ্ডিতগণ রোমান চার্চ, পোপতন্ত্র ও ক্যাথলিক ধর্মাচরণের বিপথগামিতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে শুরু করেন ধর্মসংস্কার আন্দোলন। তাঁরা বাইবেলের নতুন ব্যাখ্যা এবং ধর্মচর্চার উপর নতুন চিন্তাধারার প্রবর্তন করেন, যা পরবর্তীতে ইউরোপে ধর্মীয় ক্ষেত্রে নানান পরিবর্তন ঘটায়।
(6) রাজনীতি: পণ্ডিতরা রাজনৈতিক চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রেও নিয়ে আসেন পরিবর্তন। নবজাগরণের সন্তান নামে প্রসিদ্ধ নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি রচনা করেন ‘The Prince’ গ্রন্থটি – যেখানে রাজনৈতিক ক্ষমতা ও বাস্তবতাকে বিশ্লেষণ করা হয়। এই চিন্তাধারা ইউরোপের রাজনৈতিক ধ্যানধারণাকে যথেষ্ট প্রভাবিত করেছিল।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর