নবজাগরণ যুগে সংগীতের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো

নবজাগরণ যুগে সংগীতের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো

নবজাগরণ যুগে সংগীতের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো
নবজাগরণ যুগে সংগীতের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো

পঞ্চদশ শতাব্দীতে ইউরোপের রেনেসাঁ-প্রসূত মানবতাবাদ সংগীতের ক্ষেত্রে ঘটিয়েছিল এক বিপ্লব। এই সময় চার্চের গণ্ডি পেরিয়ে সংগীত ছড়িয়ে পড়ে জনগণের মাঝে। সেযুগে বাস্তব জীবনকে গানের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করার প্রয়াস দেখা দিয়েছিল।

নবজাগরণের যুগে সংগীতের বৈশিষ্ট্য

নবজাগরণের যুগে সংগীতের বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

(1) মধ্যযুগীয় সংগীতের উপর নির্ভরতা: রেনেসাঁ কালের সংগীত জগৎ মূলত মধ্যযুগীয় সংগীতের উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠতে দেখা গিয়েছিল। এই সংগীতের সঙ্গে ধ্রুপদি ধারার কোনও সংযোগ ছিল না।

(2) বার্গান্ডি ও ফরাসি প্রভাব: সেই সময়কার গানগুলি ছিল ইতালীয় সংগীতচর্চার প্রভাবমুক্ত। বরং সেগুলির উপর বার্গান্ডি ও ফরাসি সুরকারদের প্রভাব পড়েছিল।

(3) ইতালীয় মানবতাবাদী ঐতিহ্যের প্রভাব: ইটালির মানবতাবাদী ঐতিহ্য রেনেসাঁযুগীয় নতুন ধারার সংগীতকে প্রভাবিত করেছিল। ইতালীয় মানবতাবাদ ছিল ধ্রুপদি গ্রিকো-রোমান সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত। প্রাচীন গ্রিক-রোমান প্যাগান ধর্মে গ্রামীণ সংগীতের দেবতা প্যান (Pan)-এর গৃহ আরকাডি (Arcady) থেকে যে অসাধারণ সংগীতের উদ্ভব হত- সংগীতের এই ধারণাটি প্রথম পলিবিয়াস (Polybius)-এর লেখায় উঠে আসে এবং তারপর তা অভিড (Ovid) ও ভার্জিল (Virgil)-এর হাত ধরে প্রবেশ করে ল্যাটিন সাহিত্যে।

(4) রেনেসা সংগীতের ধারা: ইউরোপীয় রেনেসাঁর সময়কালীন সংগীতের ধারাকে মোট তিনটি বিভাগে ভাগ করা যায়- সমবেত ও ভক্তিগীতি, সংগীত (Madrigals) এবং ধর্মনিরপেক্ষ নৃত্যসংগীত ও জনপ্রিয় সংগীত। এর মধ্যে Madrigals বা ধর্মনিরপেক্ষ সংগীতের রীতি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ইংল্যান্ডের সুরকারেরা গান লিখেছিলেন। বার্গান্ডির দুফে (Guillaume DuFay) ও ফ্রান্সের দেসপ্রেস (Josquin des Prez) ছিলেন সেযুগের শ্রেষ্ঠ সংগীতজ্ঞ।

(5) সংগীতশেলী: রেনেসাঁর সময়কালে নতুন নতুন সুরসৃষ্টির প্রয়াস দেখা দিয়েছিল। বিচিত্র সুর, শব্দ, কথার সমন্বয়ে সংগীত পেয়েছিল ভিন্নমাত্রা। কণ্ঠসংগীতের উপর গুরুত্ব আরোপ, সমবেত সংগীত (Choral music)-এর প্রচলন, সুরঝংকারের (Polyphony) ধারণা তৈরি প্রভৃতি হল এই পর্বের সংগীতের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।

(6) নতুন বাদ্যযন্ত্রের উদ্ভব: সংগীতের অনুষঙ্গ হিসেবে এসময় নানা বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার লক্ষ করা গিয়েছিল। প্রাচ্যের দেশগুলি ছিল মূলত এই সকল বাদ্যযন্ত্রের উৎপত্তিস্থল। সালটারি (Psaltery) ছিল রেনেসাঁ যুগের জনপ্রিয় বাদ্যযন্ত্র। এ ছাড়া স্যাকবাট (Sackbut), ট্রাম্পেট (Trumpet), ফুট (Flute) ইত্যাদি যন্ত্রগুলিরও প্রচলন ছিল।

(7) চার্চের ভূমিকা: রেনেসাঁ সংগীতের অন্যতম বড়ো পৃষ্ঠপোষক ছিল তৎকালীন চার্চগুলি। ইউরোপীয় শাসকগণ, অভিজাতবর্গ এবং সাধারণ মানুষের কাছে সংগীত ছিল জনপ্রিয়। চার্চে যে সংগীত পরিবেশিত হত, সেগুলিতে পুরুষদের প্রাধান্যই ছিল বেশি। অবশ্য বেশ কয়েকজন প্রতিভাবান মহিলা সংগীতজ্ঞার কথাও জানা যায়।

(8) আঞ্চলিক ভাষায় সংগীতচর্চা: ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে যেমন ল্যাটিন ভাষায় সংগীতচর্চা হত, তেমনই স্থানীয় বা আঞ্চলিক ভাষার গানও কিন্তু কম ছিল না। সেযুগে জার্মানি, স্পেন, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ও ইটালিতে জাতীয় সংগীতের বিকাশ ঘটেছিল। ইউরোপীয় ও ইসলামি সংস্কৃতির প্রভাব পড়েছিল ভেনিসের সংগীতকলায়, যেখান থেকে সংগীতশৈলী এগিয়েছিল ব্যরকের (Baroque) দিকে।

পরিশেষে বলা যায় যে, ইউরোপীয় নবজাগরণের যুগে সংগীতের মাধ্যমে নব নব ভাব প্রকাশের প্রয়াস দেখা দিয়েছিল। সংগীত শুধুমাত্র ধর্মের মধ্যেই আবদ্ধ থাকেনি, তৎকালীন গাথাগুলিতে প্রতিফলিত হয়েছিল সমাজচিত্রও। সেসময় গায়ক ও সুরকারেরা যথেষ্ট সামাজিক সম্মান এবং অর্থলাভ করতেন, পেতেন ধনীদের পৃষ্ঠপোষকতাও। আবার রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও সংগীতের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।

আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment