নবজাগরণ ও ধর্মসংস্কার সংক্রান্ত বিতর্কটি সম্পর্কে লেখো
ইউরোপে রেনেসাঁ বা নবজাগরণ-উদ্ভূত মানবতাবাদ এবং ধর্মসংস্কার আন্দোলনের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে পণ্ডিতগণ দ্বিধাবিভক্ত। কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ ধর্মসংস্কারকে নবজাগরণের থেকে পৃথক করে দেখেছেন। তাঁদের কাছে রিফরমেশন শুধুমাত্র একটি রক্ষণশীল খ্রিস্টীয় প্রতিক্রিয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। আবার কারও কারও মতে ধর্মসংস্কার আন্দোলন ছিল নবজাগরণ-সঞ্জাত আদর্শেরই অবশ্যম্ভাবী পরিণতি।
নবজাগরণ ও ধর্মসংস্কার সংক্রান্ত বিতর্ক
নবজাগরণ ও ধর্মসংস্কার আন্দোলনের মধ্যেকার সম্পর্ক নিয়ে পণ্ডিত ও ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
(1) বৌসমার অভিমত: বিংশ শতকের মার্কিন ঐতিহাসিক উইলিয়ম বৌসমা (William Bouwsma) তাঁর The Waning of the Renaissance, 1550-1640 গ্রন্থে বলতে চেয়েছেন যে, ইউরোপীয় ধর্মসংস্কার আন্দোলন নবজাগরণকালীন মানবমুখী যুগভাবনাকে অপ্রাসঙ্গিক করে দিয়েছিল। নবজাগরণের যুক্তিবাদী সমাজচেতনার সঙ্গে রিফরমেশন -এর সময়কার ধর্মীয় উন্মাদনার কোনও সাদৃশ্যই খুঁজে পাওয়া যায় না।
(2) ব্রিনটন, চাডউইক ও ফুকনের অভিমত: অপরদিকে হেনরি ব্রিনটন (Henry Brinton), আউয়েন চাডউইক (Owen Chadwick)-এর মতো বিশিষ্টজনেরা অবশ্য রেনেসাঁ ও রিফরমেশনের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক লক্ষ করেছেন। তাঁদের মতে, নবজাগরণের মধ্যেই নিহিত ছিল ধর্মসংস্কারের বীজ। মীনাক্ষী ফুকন-এর মতানুসারে, নবজাগরণের জঠর থেকে যে মানবতাবাদের জন্ম হয়েছিল, তা কখনোই ধর্মবিরোধী ছিল না। বরং নবজাগরণের যুগের মানবতাবাদীগণ পুরাতন ধর্মগ্রন্থ অনুবাদের মাধ্যমে চার্চ ও যাজকদের ধর্ম হতে বিচ্যুতির যে দিকটি তুলে ধরেছিলেন, সেই শিক্ষাই ধর্মসংস্কার আন্দোলনের বৌদ্ধিক পটভূমিকে আরও সমৃদ্ধ করেছিল। অবশ্য বিতর্ক সত্ত্বেও বলা যায় যে, নবজাগরণ ও ধর্মসংস্কার আন্দোলন ইউরোপীয় সংস্কৃতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করেছিল। মতভেদ থাকলেও এই দুই আন্দোলনের মধ্যেকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে অস্বীকার করা যায় না কোনোভাবেই।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর