ধর্মসংস্কার আন্দোলনের রাজনৈতিক প্রভাবসমূহ আলোচনা করো
ধর্মসংস্কার আন্দোলনের রাজনৈতিক প্রভাবসমূহ
ইউরোপীয় ধর্মসংস্কার আন্দোলনের প্রভাব শুধুমাত্র ধর্মীয় ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, সাহিত্য, সংস্কৃতি এমনকি মানুষের ব্যক্তিজীবনেও প্রসারিত হয়েছিল। ধর্মসংস্কার আন্দোলনের রাজনৈতিক প্রভাবগুলি নিম্নরূপ-
(1) রাজার ক্ষমতা বৃদ্ধি: ধর্মসংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ইউরোপে রোমান চার্চ ও পোপতন্ত্রের ক্ষমতা হ্রাসের পাশাপাশি রাজতন্ত্রকে শক্তিশালী করে তোলার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ইংল্যান্ডের অ্যাক্ট অফ সুপ্রিমেসি (Act of Supremacy) এবং জার্মানিতে অগসবার্গের সন্ধি (Peace of Augsburg) দ্বারা রাজার ক্ষমতা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।
(2) রাজতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্রবিরোধী প্রতিবাদ: মার্টিন লুথার কর্তৃক সূচিত প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলনে ক্যাথলিক চার্চের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ধ্বনিত হলেও পরবর্তী ক্ষেত্রে ধর্মসংস্কার আন্দোলন যত এগিয়েছে, তত তাতে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক মাত্রা। যেমন- প্রোটেস্ট্যান্ট নেতা ক্যালভিন জীবনের শেষদিকে অত্যাচারী রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তত্ত্বকে সমর্থন করেছিলেন। যার দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে ক্যালভিনপন্থীরা ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, স্কটল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডে রাজশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ইংল্যান্ডে পিউরিটানরাও রাজা প্রথম চার্লসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। পরবর্তীকালে ইংল্যান্ডের স্টুয়ার্ট রাজশক্তির বিরুদ্ধে উদারনৈতিক পার্লামেন্টের সংগ্রাম কিংবা ফরাসি বিপ্লবে ধর্মসংস্কার আন্দোলন-সঞ্জাত এই রাষ্ট্রীয় স্বৈরতন্ত্রবিরোধী চেতনার পরোক্ষ প্রভাব পড়েছিল বলে মনে করা হয়।
মূল্যায়ন
বস্তুত, ধর্মসংস্কার আন্দোলন ইউরোপে ক্যাথলিক ও – প্রোটেস্ট্যান্ট-এই দুই তীব্র বিবদমান গোষ্ঠীর উত্থান ঘটিয়েছিল। উভয়পক্ষের মধ্যে এই সময় থেকে যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়, তার সূত্র ধরেই ইউরোপে সুদৃঢ় হয়েছিল জাতীয় রাষ্ট্রের ধারণা।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর